|
|
|
|
বন্ধের ডাকে সাড়া মিলল না পরিবর্তনে’র শিলিগুড়িতে |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
রিকশা বা অটোয় একটা মাইক বেঁধে ‘বন্ধ’ ডাকলেই সাড়া দেয় শিলিগুড়ি!
দার্জিলিঙের মতো শহরে ইতিউতি কয়েকটা পোস্টার সেঁটে ‘বন্ধ’ ডাকলেই বন্ধ হয়ে যাবে সব দোকানপাট, স্কুল-কলেজ এমনকী অফিসও!
চেনা এই ছবিটা আমূল বদলে দিল বৃহস্পতিবারের শিলিগুড়ি। নকশাল নেতা চারু মজুমদারের মৃত্যু দিবস উপলক্ষে ফি বছর শিলিগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গে যে বন্ধ ডাকা হয়, তাতে এ বার এতটুকুও সাড়া দিল না শিলিগুড়ি। আর পাঁচটা দিনের মতো ভোর থেকেই চলেছে স্কুল বাস। দোকানপাট, যানবাহন, অফিস ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তাই দিনের শেষে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে পুলিশ-প্রশাসন। রাজ্যের ক্ষমতায় আসা নতুন সরকারের নেতা-মন্ত্রীরাও শিলিগুড়ির এ হেন ‘পরিবর্তন’ দেখে খুশি। |
|
কর্মব্যস্ত বন্ধ উপেক্ষা করেই পথে নেমেছেন শিলিগুড়ির সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি। |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “যথেচ্ছ বন্ধ ডাকলেই তা শিলিগুড়ির মানুষ মেনে নেবেন, এমন ভাবাটা ঠিক নয়। জনজীবন অচল করার রাজনীতি এলাকার উন্নয়নকে থমকে দেয়। এটা মানুষ বুঝতে পারছেন। পরিবর্তন হয়েছে মানসিকতার। কথায়-কথায় যে কেউ ঝাণ্ডা উঁচিয়ে মাইক নিয়ে ঘুরে ডাক দিলেই যে বন্ধ হবে না, তা শিলিগুড়ির মানুষ ক্রমশ বুঝিয়ে দিচ্ছেন।”
দিন কয়েক আগে পাহাড় নিয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়টি ঠিক হতেই পাহাড়ে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করলেও সমতলে গোলমালের আশঙ্কা তৈরি হয়। কারণ, বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও সমিতি-সহ একাধিক সংগঠন ওই চুক্তির বিরোধিতা করে ১৫ জুলাই এবং ১৮ ও ১৯ জুলাই বন্ধের ডাক দেয়। প্রথম দিন গোলমালের আশঙ্কায় কিছু দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অফিস-আদালত খোলা ছিল। রাস্তায় যানবাহনও কিছুটা চলে। ওই সময়ে গৌতম দেব নিজে রাস্তায় নেমে নানা অফিসে অফিসার-কর্মীদের পৌঁছে দেন। পর্যটকদেরও গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করেন। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী দিনভর ছোটাছুটি করায় পুলিশ-প্রশাসনকেও বাড়তি সতর্ক থাকতে হয়। স্বভাবতই ১৮ জুলাই বন্ধ প্রায় হয়নি। আগামী দিনে যে হুটহাট বন্ধ ডাকলে সাড়া দেওয়া হবে না, সেই ইঙ্গিত সে দিনই স্পষ্ট করে দিয়েছিল শিলিগুড়ি।
শিলিগুড়ির একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অফিসার-কর্মীরা জানান, আগে যে কোনও বন্ধ ডাকলে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে মন্ত্রীদের পথে নামতে দেখা যায়নি। পাশাপাশি, বন্ধ সমর্থকদের বিরোধিতায় না গিয়ে নানা কাজে রাস্তায় বার হওয়া মানুষকে সহযোগিতা করতে মন্ত্রী ও তাঁর অনুগামীদের ভূমিকায় তাঁদের মনোবল বেড়েছে।
নকশাল নেতা চারু মজুমদারের মৃত্যুদিন উপলক্ষে ফি বছর ২৮ জুলাই নকশালদের একাধিক গোষ্ঠী বন্ধের ডাক দেয়। এত দিন বন্ধ হয়েছেও। এ বারও দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুরের কয়েকটি এলাকায় বন্ধের ডাকে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। কিন্তু শিলিগুড়ি সাড়া দেয়নি। বন্ধ সমর্থনকারী একটি নকশাল গোষ্ঠীর নেতা শ্রীধর মুখোপাধ্যায় অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, তাঁরা জোর করে বন্ধ সফল করায় বিশ্বাসী নন। স্কুল-কলেজে পরীক্ষা থাকলে ছাড় দেওয়ার কথাও তাঁরা আগাম জানিয়ে দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও বন্ধে কয়েকটি জায়গায় সাড়া মিলেছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। যাঁর মৃত্যুর দিনে বন্ধ ডাকা হয়ে থাকে, সেই চারুবাবুর ছেলে অভিজিৎ মজুমদারও নকশালদের একটি গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা। এ দিন অভিজিৎবাবু বন্ধের প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “রাজ্যের নতুন সরকারের কাছে আমাদেরও প্রত্যাশা আছে। সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের জন্য কমিশন করেছে নয়া সরকার। তা হলে সত্তর দশকে চারু মজুমদার-সহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যুর ব্যাপারে কেন কমিশন হবে না? এটা না হলে তো একপেশে কাজ করার অভিযোগ উঠবে তৃণমূল জোট সরকারের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, ওই ঘটনায় যে দু’টি কমিশন হয়েছিল, তাদের রিপোর্টও প্রকাশ্যে জানাক সরকার।” |
|
|
|
|
|