|
|
|
|
লাইসেন্স ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে রাজ্যের অসংখ্য হিমঘর |
অনুপ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
রাজ্যের ৪৭৮টি হিমঘরের মধ্যে প্রায় ২০০টি বিনা লাইসেন্সেই বছরের পর বছর ধরে দিব্যি ব্যবসা করে চলেছে! এর মধ্যে কয়েকটি ১৫-২০ বছর ধরে এ ভাবেই চলছে। কারণ, ওই সব হিমঘরের লাইসেন্স নবীকরণই হয়নি এত বছর ধরে! লাইসেন্সহীন হিমঘর মালিকদের একাংশের বক্তব্য, “অনেক আগেই নবীকরণের আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা আটকে রাখা হয়েছে।”
এই পরিস্থিতির জন্য বিগত বাম সরকারকেই সরাসরি দায়ী করেছেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়। তাঁর বক্তব্য, হিমঘরের লাইসেন্স দেওয়া ও নবীকরণের জন্য এত কাল হাজার হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে মালিকদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘুষ না দেওয়ায় লাইসেন্স নবীকরণ হয়নি। মন্ত্রী জানান, কৃষি বিপণন দফতরের অধিকর্তাকে অবিলম্বে লাইসেন্সগুলি নবীকরণের জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান মন্ত্রীর অভিযোগ অবশ্য ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ওই দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী মোর্তাজা হোসেন। তিনি বলেন, “রাজনীতি করার জন্যই বাম সরকারকে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।”
রাজ্যের ১৯টি জেলার মধ্যে হিমঘরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হুগলিতে। কৃষি বিপণণ দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হুগলির ১৩৫টির মধ্যে ৬৩টি, বর্ধমানের ১০৭টির মধ্যে ৫৩টি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭২টির মধ্যে ১৭টি, জলপাইগুড়ির ২৭টির মধ্যে ১১টি, বাঁকুড়ায় ৪৪টির মধ্যে ১০টি, বীরভূমে ১৯টির মধ্যে ১৩টি, মুর্শিদাবাদে ৯টির মধ্যে ৮টি এবং বর্তমান মন্ত্রীর জেলা হাওড়ায় ১১টির মধ্যে ৭টির লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে আগেই। তার পরেও সেগুলি বহাল তবিয়তেই চলছে। তিনি জানান, এর ফলে সরকারের প্রচুর আর্থিক লোকসান হচ্ছে।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, লাইসেন্স নবীকরণের জন্য মাত্র দু’শো টাকা লাগে। আর নবীকরণ করা হয় এক বা দুই বছরের জন্য। কেন এত বছর ধরে লাইসেন্স নবীকরণ হচ্ছে না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মালিকদের ক্ষোভ বাড়ছিল। তাঁদের অভিযোগ, দফতরের এক শ্রেণির কর্মী এতে জড়িত। প্রতিবাদ করেও কোনও ফল হয়নি।
কৃষি বিপণন দফতরের রাজ্য অধিকর্তা ত্বিষামপতি বিশ্বাস অবশ্য এ জন্য হিমঘর মালিকদের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন। তিনি জানান, লাইসেন্স নবীকরণের জন্য যে সব কাগজপত্র জরুরি, তা সময়ে না দেওয়ায় কাজ হয়নি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরিবেশ দফতরের ‘নো-অবজেকশন’ না থাকাও একটা কারণ। তা ছাড়া দফতরে কর্মীরও অভাব। কিন্তু এত বছর ধরে কেন এগুলোর কথা একবারও ভাবা হয়নি, কেন এতগুলো হিমঘরের নবীকরণের জন্য কোনও কাজই করা হয়নি, সে ব্যাপারে এই দফতর থেকে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। বীরভূমের এক হিমঘর মালিকের কথায়, “ও সব অজুহাত! সমস্ত কাগজ দেওয়া হলেও কাজ হয় না। অথচ প্রণামী দিলেই কাজ হয়ে যায়!”
১০-১২ বছর ধরে লাইসেন্স নবীকরণের আবেদন জানিয়েও কাজ হয়নি বর্ধমানের এক হিমঘর মালিকের। সমস্যায় পড়ার ভয়ে নাম না লিখতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিটি হিমঘরের জন্য বিমা জরুরি। লাইসেন্স নবীকরণ না হওয়ায় বিমাও আটকে যাচ্ছে। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বিপদে পড়ব তো আমরা এবং আলুচাষিরা। আগুন লাগলে তো ছাই হয়ে যাবে সব আলু। লাইসেন্স না থাকায় বিমা কোম্পানির সাহায্যও পাব না। তখন কী হবে বলুন তো?” তাঁর সাফ কথা, “তেমন কিছু হলে আমরা, মালিকরা তো পালিয়ে বেড়াব। আর কপালে হাত পড়বে আলুচাষিদের। সরকার কি সে দিকটা ভাববে না?”
সরকার বদল হতেই এই দফতরের নতুন মন্ত্রী অরূপ রায়ের কাছে বিষয়টি জানান হিমঘর মালিকরা। তার পরই সক্রিয় হয়ে ওঠেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “লাইসেন্স নিতে ঘুষ দিতে হবে কেন? ঘুষের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।” তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধিকর্তাকে বলেছি, যাঁদের লাইসেন্স নবীকরণ করতে হবে, তাঁদের কাছে অবিলম্বে নোটিস পাঠান।”
মন্ত্রীর কথায় ঘুষের প্রসঙ্গ উঠলেও তা মানতে নারাজ কৃষি বিপণন বিভাগের অধিকর্তা (অভিযোগ ওই বিভাগের বিরুদ্ধেই)। তাঁর কথায়, “ওনার কাছে কোন সূত্র থেকে কী খবর আছে জানি না। তবে আমার বিভাগের কেউ এর সঙ্গে যুক্ত নয়।” |
|
|
|
|
|