হারানো জমি পেতে নতুন ‘শ্রেণি-মিত্র’ চায় সিপিএম
রাজ্যে হারানো রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতে নতুন ‘শ্রেণি-মিত্র’ই এখন সিপিএমের ভরসা!
দলের রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছেন, ৩৪ বছর আগে ক্ষমতায় এসে কলকারখানার শ্রমিক, গ্রামের কৃষক ও মধ্যবিত্তদের মতো সাবেক শ্রেণি-মিত্রদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার যে নীতি বামফ্রন্ট নিয়েছিল, তার উপর ভরসা করে আর ভোটে জেতা সম্ভব নয়। কারণ, ভূমি-সংস্কার, উদার-অর্থনীতি ও গ্রামীণ ক্ষেত্রে পুঁজির প্রবেশের ফলে বাংলায় শ্রমজীবী মানুষের শ্রেণিচরিত্র বদলেছে। এখন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক আর খেতমজুরদেরই সংখ্যাধিক্য। তাই তাদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলা, তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে লড়াই করার মাধ্যমেই হারানো জমি ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
সিটুর রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শ্যামল চক্রবর্তী, প্রাদেশিক কৃষক সভার সভাপতি মদন ঘোষ থেকে শুরু করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র সকলেই এই মতের শরিক। এ ব্যাপারে শ্যামলবাবু ইতিমধ্যেই দলীয় মুখপত্রে কলম ধরেছেন। তাঁর কথায়, “হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আমরা চাই দলের সর্বস্তরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হোক।” প্রসঙ্গত, বাম-প্রভাবিত রাজ্য কেরলে কিন্তু খেতমজুর ও অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে সিপিএমের সংগঠন এ রাজ্যের তুলনায় জোরদার।
শ্যামলবাবু মনে করেন, ভূমি-সংস্কার ও গ্রামীণ ক্ষেত্রে পুঁজির প্রবেশের ফলে গ্রামের কৃষকদের একাংশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ফলে তাঁরা আর বামেদের স্বাভাবিক শ্রেণি-মিত্র নেই। সেই সঙ্গে গত দু’দশকের উদার অর্থনীতি, সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে বেতনবৃদ্ধির ফলে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় অংশও এখন বামেদের ‘স্বাভাবিক মিত্র’ নেই। এই শ্রেণির মধ্যে বামেদের রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাসের বিষয়টি বিধানসভা ভোটেই স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে বামেদের স্বাভাবিক শ্রেণি-মিত্র হতে পারে খেতমজুর ও অসংগঠিত শ্রমিকরাই।
দলের কৃষক ফ্রন্টের অন্যতম নেতা সূর্যবাবুর কথায়, “বিষয়টি নিয়ে গত চার-পাঁচ বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে। সংগঠনগত ভাবে কিছু কাজও হয়েছে। গ্রামের খেতমজুররা যাতে অসংগঠিত শ্রমিক হিসাবে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পান, তা দেখার জন্য কৃষকসভা বিশেষ দায়িত্ব নিয়েছিল।” সে কাজে ঘাটতি রয়ে গিয়েছে স্বীকার করে সূর্যবাবু বলেন, “এই শ্রেণির মানুষকে সংগঠিত করা খুব সহজ নয়। তবে জমি ফিরে পেতে আমাদের তা করতেই হবে।”
বিধানসভা ভোটে বামেদের পরাজয়ের পরেই শহুরে অসংগঠিত শ্রমিকদের বড় অংশ সিটুর ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে তৃণমূলে নাম লেখায়। শ্যামলবাবুর অবশ্য দাবি, “সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা এখনও বেশির ভাগই লালঝান্ডার অনুগামী।” কিন্তু ঘটনাচক্রে, সংখ্যায় তাঁরা অসংগঠিত শ্রমিকদের তুলনায় অনেক কম। ফলে শহরের অসংগঠিত শ্রমিকরাই ভরসা সিপিএমের। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ১০%-কেও যে সিটু ঠিক মতো সংগঠিত করতে পারেনি, শ্যামলবাবু নিজেই তা স্বীকার করেছেন।
শহরে রাজ্য সরকার চিহ্নিত ৬১টি অসংগঠিত পেশার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ। তাদের মধ্যে ১৪ লক্ষের বেশি মানুষকে সিটু সংগঠিত করতে পারেনি। অন্য দিকে, গ্রামে অসংগঠিত খেতমজুরের সংখ্যা কমবেশি ১ কোটি ২০ লক্ষ। বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার সময় গ্রামে খেতমজুর বা কৃষি-শ্রমিকের সংখ্যা ছিল কৃষিজীবীর ১৫%-২০%। কিন্তু ক্রমে তা বাড়তে বাড়তে ৫০%-৫৫% হয়েছে। যার অধিকাংশই এখনও সিটু বা কৃষকসভার বাইরে।
অর্থাৎ শহর-গ্রাম মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি মানুষ বামেদের ‘স্বাভাবিক শ্রেণি-মিত্র’ হতে পারে বলে সিপিএম মনে করছে। যাঁদের দিকে তাকিয়ে সিপিএম আগামী দিনে বিভিন্ন কর্মসূচি নেবে। ৫ অগস্ট থেকে কলকাতায় তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সেখানেও এ বিষয়ে কথা হবে। কথা হবে বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকেও।
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.