কাঁধে ঝোলা আর দুই সন্তানই সাথী ছিল স্বামী-বিচ্ছিন্না নমিতা দে-র। আট বছরের সৈকত আর সাত বছরের শুভাশিসকে নিয়ে বিষ্ণুপুর শহরে ঘুরে বেড়াতেন সারাদিন। রাত কাটাতেন পোকাবাঁধ বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকে নিখোঁজ ছোট ছেলে শুভাশিস। কী ভাবে হল, তা বলতে পারছেন না ওই মহিলা। কখনও বলছেন, “এক জন মিষ্টি খাওয়াবে বলে ছেলেকে সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে গেল।” কখনও বলছেন, “বাস থেকে একজন নেমে ছেলেকে তুলে নিয়ে গেল।” |
বৃহস্পতিবার নমিতাদেবীর মা ভানুমতী দাস বিষ্ণুপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। সঙ্গে ছিলেন বিষ্ণুপুর পুরসভার তিন তৃণমূল কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও পবন মাঝি। ভানুমতীদেবীর কথায়, “বছর পনেরো আগে মাধ্যমিক পাশ করার পরে পাত্রসায়রের শাসপুর গ্রামে দেবাশিস দে-র সঙ্গে বিয়ে দিই নমিতার। দুই ছেলে হওয়ার পরে ওদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। জামাই খোরপোশ বাবদ মাসে হাজার তিনেক টাকাও দেয়। আমি স্বামীর চাকরির দৌলতে পেনশন পাই। ছেলের বাড়িতে থাকলেও মেয়েকে কিছু কিছু সাহায্য করি। বিষ্ণুপুরে শাঁখারি বাজারে একটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি।” তিনি জানান, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরে নমিতাদেবীর মানসিক স্থিতি কিছুটা নষ্ট হয়। এর পর থেকে তিনি বাড়িতে না থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। ভানুমতীদেবী বলেন, “চেষ্টা করেও তাদের বাড়িতে ফেরানো যায়নি।”
নমিতাদেবী ও তাঁর সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসকের কাছে তাঁদের হোমে পাঠানোর আর্জি জানান তিন কাউন্সিলর। কিন্তু ছেলে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে নমিতাদেবীকে কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ছেলে না ফেরা পর্যন্ত কোথাও যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মহকুমাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “ঘটনাটি খুবই মর্মস্পর্শী। খবর পেয়েই ওঁদের নিরাপত্তার কারণে দিব্যেন্দুবাবুকে বলেছিলাম, নমিতাদেবীর মায়ের একটি আবেদনপত্র নিয়ে আমার কাছে আসুন, দু’জনকেই হোমে রাখার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।” এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, “ওই ছেলেটির খোঁজ চলছে।” যদিও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শুভাশিসের কোনও হদিস মেলেনি।
পোকাবাঁধের প্রতীক্ষালয়ে ছোট ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় বড় ছেলেকে নিয়ে বসে রয়েছেন ‘যাযাবর’ মা। |