|
|
|
|
সচিনরা সহজে এক নম্বর জায়গা ছাড়বে না: কার্স্টেন |
রূপায়ণ ভট্টাচার্য • কেপ টাউন |
পালিয়েই গেলেন এক জন। নানা বাহানায় এড়িয়ে যেতেই ব্যস্ত। আর এক জন প্রায় এক অনুরোধেই কথা বলতে রাজি।
ব্যর্থতা ও সাফল্যর পরের অধ্যায়ে কত ফারাক!
কাকতালীয় একেই বলে, না? বব হাউটন এবং গ্যারি কার্স্টেন, ভারতের দুই সদ্য প্রাক্তন কোচই কেপ টাউনের বাসিন্দা। এক জনকে তাড়াতে ব্যস্ত ছিলেন কর্তারা। এক জনকে আবার ধরে রাখতে চেয়েও পাননি।
আফ্রিকা মহাদেশের শেষ বিন্দুতেও এই দু’জন কী বৈপরীত্যে বাস করছেন!
কার্স্টেন যেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নাম করলেই এ শহরের সবার চোখ চকচক করে। জানেন, কোথায় তাঁর বাড়ি। আর বব হাউটনকে দেখে গোয়ায় শেষ জীবনের বব বুটল্যান্ডকে মনে পড়বে। কেপ টাউনে তাঁকে তেমন কেউ চেনেন না। কোথায় বাড়ি, সেটাও না। ব্রিটিশ হাউটন এখনও যেন বিদেশিই থেকে গিয়েছেন এত বছর শহরে থেকে। কর্মকর্তা থেকে সাংবাদিক, সবাই হাউটনের খোঁজ করতে দেখে অবাক। “সত্যিই লোকটা ভারতের জাতীয় কোচ ছিল?”
ব্রিটিশ হাউটনকে ধরতে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যটন দফতরের কর্তাদের দ্বারস্থ হতে হল। তাঁদেরকে দু’তিন দিন কথা বলার আশ্বাস দিয়েও হাউটন শেষ মুহূর্তে উধাও হয়ে গেলেন। তার পরে ভারতীয় সাংবাদিকের ফোন পেয়ে বললেন, “আমি আজই লন্ডন চলে যাচ্ছি। খুব ব্যস্ত। সময় নেই।”কার্স্টেন সেখানে ভারতীয় সাংবাদিকদের কথা শুনে প্রত্যেককে আলাদা আলাদা পনেরো মিনিট সময় দিতে রাজি। সোমবারই দায়িত্ব নিচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার। এখনও স্বদেশি সাংবাদিকদেরই সামনে আসেননি সে ভাবে। তিনি ভারতীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন শুনে দক্ষিণ আফ্রিকা মিডিয়াই অবাক।
ইংল্যান্ডে প্রথম টেস্টে ভারতের হার দেখে কি অবাক? কার্স্টেন বললেন, “পুরো খেলা দেখিনি। টিভিতে হাইলাইটস দেখেছি। মনে হচ্ছে, ভারতীয়রা দারুণ ভাবেই ফিরবে সিরিজে। এটাই এ দলের চরিত্র। ধারাবাহিকতাও প্রচণ্ড। লড়াই ছাড়বে না।” বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কোচের যুক্তি, “এক নম্বরে থাকার পরে এই হার ভারতীয়দের গর্বে আঘাত করবে। ওদের ধাক্কাটা লেগেছে। ওরা এক নম্বর জায়গা ছাড়বে না সহজে। টিমটা এক নম্বর হওয়ার যোগ্য।” পুরনো ছাত্রদের কারও সঙ্গে ফোনে কথা হল? কার্স্টেন উত্তর দিলেন, “নাম বলব না। ফোনে কথা হয়। তবে অনিয়মিত।”
দক্ষিণ আফ্রিকাতেও যে তিনি প্রচারের আড়ালে থেকেই কোচের কাজ করতে চান, প্রতি বাক্যে ফুটে উঠছে। ফার্গুসন, ওয়েঙ্গার, মোরিনহোর মতো প্রকাশ্যে আসতে নারাজ। বললাম, অনেকেরই ধারণা, ভারতে আপনার যা প্রচার পাওয়ার কথা ছিল, পাননি। ক্রিকেটাররাই নিয়ে গেছেন। শুনে কার্স্টেন: “আমি নিজের প্রোফাইল তৈরি করতে ভারতে যাইনি। আমি ওটা উপভোগও করি না। প্লেয়াররাই লক্ষ লোকের সমালোচনা সহ্য করে। বাউন্ডারির ভিতরে সব চাপ নেয়। সব প্রচার ওদেরই পাওয়া উচিত।” |
|
খুদে ভক্তদের কাছাকাছি। ট্রেন্টব্রিজে অনুশীলন করতে হাজির সচিন তেন্ডুলকর। বৃহস্পতিবার এএফপি-র ছবি। |
তাঁর মুখে এখনও টিমগেমের জয়গান! একটা প্রশ্নেই শুধু নো কমেন্টস এল। সুরেশ রায়না, না যুবরাজ কাকে খেলানো উচিত ধোনির? আপনি কাকে খেলাতেন? কার্স্টেন সপাটে মাঠের বাইরে পাঠান প্রশ্নটা, “নো কমেন্টস”। বাকি সব প্রশ্নে তিনি আন্তরিক।
ভারতের স্মৃতি: ভারত আমায় যা দিয়েছে, তা কখনও ভাবতে পারিনি। ভারতের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। আলাদা করে বলব না, কোন শহর বেশি প্রিয়। তা হলে কাউকে ছোট করা হবে। প্রত্যেক শহরের আলাদা এনার্জি আর প্যাশন রয়েছে। সেটাকে মিস করি। ওই তিন বছর আমার জীবনের সেরা।
ভারতের প্রিয় খাবার: এত রকম খাবার বিশ্বে নেই। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব? প্রত্যেকটা আলাদা স্বাদ। আলাদা বৈচিত্র।
ভারতীয় ক্রিকেটের উত্থান রহস্য: সাফল্যর একটা কারণ দলের সবার সঙ্গে সবার সম্পর্কটা দারুণ তৈরি হয়েছিল। দলটা একটা ইউনিট হিসেবে কাজ করত। টিম স্পিরিট দারুণ। ব্যক্তিগত ভাবেও সবাই খুব ভাল। ওই দলটার কোচ হতে পেরে আমি গর্বিত। এর জন্য সিনিয়রদের কৃতিত্ব দেব। সচিন, রাহুল, লক্ষ্মণ। আলাদা করে লক্ষ্মণের কথা বলব। দারুণ ছেলে।
ভারতের ড্রেসিংরুমের ছবি: প্রচণ্ড শান্ত ছেলে সবাই। বাড়তি উত্তেজনা থাকত না। টেস্ট বা ওয়ান ডে টিম, দুটোতেই এক রকম। তাই দুটোই দারুণ টিম।
অনুপ্রাণিত করার অন্য কোচেরা: আমি ফুটবল সে ভাবে দেখি না। তাই ফার্গুসন, ওয়েঙ্গারের মতো কোনও আদর্শ নেই। জানি না, ওঁদের বৈশিষ্ট্য। যেটা জানি, কোচেদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে। আমার দর্শন হল, আমি যেমন লোক, তেমনই কোচিং করা ভাল। আর কোচরা আড়ালে থাকলেই ভাল। তা হলে সাফল্য আসবে।
আই পি এলে কোচ হওয়ার সম্ভাবনা: দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে তো দু’বছর যাওয়ার প্রশ্ন নেই। ওদের সঙ্গে চুক্তি আছে। পরে কী হবে এখন থেকে ভেবে লাভ নেই।
২০০০ তম টেস্টে সচিনের ১০০ না হওয়ায় অনুভূতি: আমি ও রকম ভাবে ভাবি না। তাই খারাপ লাগার প্রশ্ন নেই।
ক্ষমতাবান ভারতীয় বোর্ড পাশে থাকায় বাড়তি সুবিধে: সেটা আমার দেখার দরকার ছিল না। কোনও কোচের সেটা কাজও নয়। তাঁর কাজ আলাদা।
আলি বাখার বলেছেন, তিনি ও ডোনাল্ডই বিশ্বের সেরা কোচিং জুটি: না। ও ভাবে বলা যায় না। আমি মানি না। কোচেদের সাফল্য ক্রিকেটারদের সাফল্যের উপর নির্ভর করে। প্লেয়াররাই আসল।
কেপ টাউনে এসে জানা গেল, কার্স্টেন গোছানো সব দিক দিয়েই। তাঁকে ফোন করতে হলে আগে তাঁর এজেন্টকে ধরতে হয়। তাঁর গ্যারি কার্স্টেন অ্যাকাডেমি চলছে রমরমিয়ে। আগে থেকে সব পরিকল্পনা তৈরি। দক্ষিণ আফ্রিকায় কোচিং করতে নামার আগেই বলে রেখেছেন, “আমার সহকারী রাসেল ডোমিঙ্গোসই হবে আমার পরের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ।”
দক্ষিণ আফ্রিকায় কোচ হয়ে ভারতের মডেলই অনুসরণ করতে চান গ্যারি কার্স্টেন। কী সেই মডেল? কার্স্টেনের সঙ্গে কথা বলে তো মনে হল, ক্রিকেটারদের পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা। নিজে অদৃশ্য থেকে স্মিথ-স্টেইন-ডেভিলিয়ার্সের মধ্যে মসৃণ বোঝাপড়া তৈরি।
এ সব শুনে কি কোনও বহুজাতিক সংস্থার সি ই ও-র কথা মনে হচ্ছে? এটাই গ্যারি কার্স্টেন। বব হাউটন যে গ্রহে পৌঁছতে না পেরে শুধু মুখ লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন! |
|
|
|
|
|