জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে বাধার মুখে রেল
বাগনান-আমতা রেলপথের জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের বাধার মুখে পড়েছে রেল। গ্রামবাসীদের সমর্থন করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। আমতা ১ ব্লকের উদং এবং সোনামুখী গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে-সব জমি নেওয়ার জন্য রেল বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, সেগুলি সবই বাস্তু। সেখানে রয়েছে প্রচুর ঘরবাড়ি। তাঁরা রেলের কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, চাকরি বা ক্ষতিপূরণ কোনও কিছুর বিনিময়েই তাঁরা বাস্তু জমি দেবেন না। সম্প্রতি আমতায় রেলের বাস্তুকারদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের বৈঠক হয়। সভাপতিত্ব করেন উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ লাহা। বৈঠক শেষে রেলের বাস্তুকারদের লিখিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নকশা পরিবর্তন করে অন্য জমির উপর দিয়ে রেলপথ নিয়ে যেতে হবে। উলুবেড়িয়ার তৃণমূল সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ বলেন, “বিষয়টি জানি। যাঁদের বাড়ি ভাঙা পড়বে তাঁদের সঙ্গে রেলের আধিকারিকদের কথা বলতে বলেছি। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তার পরেও তাঁরা যদি জমি দিতে রাজি না-হন তা হলে বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে।”
গ্রামবাসীরা অবশ্য জানিয়েছেন, জমি নেওয়া হলে প্রায় ১০০টি পাকা বাড়ি ভাঙা পড়বে। এ পর্যন্ত অন্তত ৬০ জন জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের আপত্তির কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। আগামী এক মাস গ্রামবাসীরা আপত্তির কথা জানাতে পারবেন।
সম্প্রতি রেলের তরফ থেকে বাগনান-আমতা রেলের জন্য জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তা দেখেই মাথায় হাত পড়ে উদং এবং সোনামুখী গ্রামের বাসিন্দাদের। উদং গ্রামের বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক সমীর প্রামাণিক বলেন, “আমার দোতলা পাকা বাড়ি, পুকুর, জমি অধিগ্রহণ করার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বাস্তু থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাব কোথায়?” একই বক্তব্য সোনামুখী গ্রামের তরুণ রায়, সূর্যকুমার মেউরদের।
গত রবিবার প্রস্তাবিত রেলপথের নকশা তৈরির জন্য রেলের কয়েকজন কর্মী এই দু’টি গ্রামে আসেন প্রাথমিক সমীক্ষা করতে। গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের জেরে তাঁরা ফিরে যান। উদং হল উদং ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন। সোনামুখী গ্রাম পড়ে খড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল শাসিত। গ্রামবাসীরাও জানান, তাঁরা বেশিরভাগই তৃণমূল সমর্থক। ফলে সমস্যাটি তাঁরা জানান দলীয় নেতাদের কাছে। গত সোমবার আমতায় রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের বৈঠক হয়। তাতে মধ্যস্থতা করেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথবাবু বলেন, “আমরা গণস্বাক্ষর করা একটি স্মারকলিপি রেলের আধিকারিকদের কাছে জমা দিয়েছি। নকশায় পরিবর্তন করে অন্যদিক দিয়ে রেলপথ নিয়ে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। সেটাই করতে বলা হয়েছে। এতগুলি বাড়ি ভাঙা পড়বে তা মানা যায় না।”
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার গৌরিশঙ্কর রাও বলেন, “উদং এবং সোনামুখী এই দু’টি গ্রামের বাসিন্দারা জমি দিতে রাজি নন। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসেছিলাম। গ্রামবাসীদের দাবি, রেল পথের নকশা পরিবর্তন করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি গ্রামবাসীদের বলেছিলাম নিজে সমীক্ষা করে দেখব ঠিক কতগুলি বাড়ি ভাঙা পড়ছে। হয়তো প্রকৃত সংখ্যা খুব বেশি হবে না। কিন্তু গ্রামবাসীরা আমাদের জমির ধারে যেতে দিচ্ছেন না। গ্রামবাসীদের দাবির কথা আমরা ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। যেমন নির্দেশ আসবে তেমন কাজ হবে।”
২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি আমতায় তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রেলপথটি উদ্বোধন করেন। প্রস্তাবিত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাগনান-আমতা রেলপথ তৈরি হলে এটি হাওড়া-বাগনান এবং হাওড়া-আমতা রেলপথের মধ্যে সংযোগকারী হিসাবে কাজ করবে। রেল দফতরের দাবি, এই রেলপথটি তৈরি হলে নন্দীগ্রাম পৌঁছনোর বিকল্প লাইন হিসাবে এটি কাজ করবে। প্রকল্পটির জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১০৩ কোটি টাকা।
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.