‘হাজার হাজার ডাক্তার হাজরা’র কথা জানা ছিল! এ বার হাজার না হলেও অন্তত চার জন ‘তাপস সামন্ত’কে নিয়ে বেধেছে বিভ্রান্তি!
এক জন পরীক্ষা না দিয়েই চাকরি পেয়েছেন।
দ্বিতীয় জন চাকরির দাবিদার হয়ে আদালতে এসেছেন।
তৃতীয় জনের অ্যাডমিট কার্ড জাল করেছিলেন দ্বিতীয় জন।
চতুর্থ জন সেই জাল অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
এর জট ছাড়াতে সিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
এক জন তাপস সামন্ত হুগলির রঘুনাথপুরের বাসিন্দা। আদালতের কাছে তাঁর অভিযোগ ছিল, প্রাথমিক শিক্ষকের পদে চাকরির জন্য তিনি লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। সেই মতো ওয়েবসাইটে তাঁর নামও বেরিয়ে যায়। কিন্তু তিনি চাকরি পাননি। কিন্তু তাপস সামন্ত নামেই আর এক জন পরীক্ষা না দিয়েও চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। হুগলির তাপস সামন্ত তাঁর ‘প্রাপ্য’ চাকরি ফিরে পেতে আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার কয়েক দিন আগে দু’জন তাপস সামন্তকেই তাঁর এজলাসে ডেকে পাঠান। দু’জনের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়, বিষয়টিতে অনেক জটিলতা রয়েছে। সেই মতো তিনি সরকারি আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্যকে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন।
বুধবার কমলেশবাবু হাইকোর্টকে জানিয়েছেন, দ্বিতীয় তাপস সামন্ত পরীক্ষা না দিয়েই নিয়োগপত্র পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যে পরীক্ষা দেননি, সে কথা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে জানিয়েওছিলেন। তখন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ তাঁকে বলে, “ঝামেলা করে লাভ নেই। চাকরি যখন পেয়েই গিয়েছেন, নিয়ে নিন।”
সেই মোতাবেক গত ১৭ মাস ধরে কাজ করছেন পরীক্ষা না দেওয়া তাপস সামন্ত।
কিন্তু জটিলতার এখানেই শেষ নয়। প্রথম তাপস সামন্তের বক্তব্যেও যে ভূরি ভূরি গলদ আছে, সেটাও ধরা পড়েছে কমলেশবাবুর কাছে। বুধবার ওই সরকারি আইনজীবী প্রথম তাপস সামন্ত সম্পর্কে হাইকোর্টের কাছে যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, এই লোকটি নিজে পরীক্ষা দেননি। ‘তাপস সামন্ত’ নামে অন্য এক জন পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড হাতিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আবার অন্য এক জনের ছবি লাগিয়ে সেই ব্যক্তিকে ‘তাপস সামন্ত’ সাজিয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠানো হয়েছিল। ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে বিচারপতি সমাদ্দার সিবিআই-কে দিয়ে এর তদন্ত করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে সিবিআই-কে।
সিবিআইয়ের সামনে এখন অনেকগুলো প্রশ্ন।
পরীক্ষা দেননি বলে জানানো সত্ত্বেও দ্বিতীয় তাপস সামন্তকে চাকরিতে নিয়োগ করা হল কেন? ভুয়ো তাপস সামন্ত হিসেবে যে ব্যক্তি পরীক্ষা দিয়েছেন, তিনি কোথায়? যে তাপস সামন্তের অ্যাডমিট কার্ড জাল করা হল, তিনি কোথায়? অ্যাডমিট কার্ড প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে বেরিয়ে গেল কী ভাবে? অ্যাডমিট কার্ড জাল করা এবং ভুয়ো পরীক্ষার্থী পাঠানোর পিছনে হুগলির তাপস সামন্তের উদ্দেশ্য কী ছিল? ভুয়ো অ্যাডমিট কার্ড এবং ভুয়ো পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কোনও চক্র এখানে সক্রিয় রয়েছে কি? সবই সিবিআই-কে খতিয়ে দেখতে বলেছে হাইকোর্ট। |