সব রকম অস্ত্র চালানোয় পটু ১৩ বছরের ‘কম্যান্ডার’
ত দিন পর্যন্ত খবর আসছিল, বিহারে শিশু-কিশোরদের নিয়ে বাহিনী গড়ে তুলেছে মাওবাদীরা। কিন্তু সে ভাবে তার কোনও প্রমাণ ছিল না। শেষ পর্যন্ত ১৩ বছরের ‘মাওবাদী বাল কম্যান্ডার’ প্রমোদ তিওয়ারির হাত ধরে সেই প্রমাণ এল গোয়েন্দাদের হাতে।
গত ৯ জুলাই রোহতাস জেলা পুলিশের সামনে যে ন’জন মাওবাদী জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে তার মধ্যে প্রমোদ ছিল অন্যতম। প্রমোদ ছাড়াও আত্মসমর্পণকারী দলে ছিলেন দু’জন এরিয়া কমান্ডার---অনিল কুশাহা ওরফে রীতেশজি এবং নির্মল সিংহ ওরফে অবধেশজি। এঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ন’টি রাইফেল, দু’হাজার গুলি-সহ বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র।
পরে প্রমোদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। প্রমোদ পুলিশকে জানায়, বছর দেড়েক আগে ত্যাগী বাবা নামে এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে সে আলমপুরের এক মন্দিরে থাকত। সেখান থেকেই তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল মাওবাদী জঙ্গিরা। তার পর থেকে সে আর বাড়ি ফেরেনি। এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলেই ঘুরে বেড়িয়েছে। তার সঙ্গে চলেছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। কখনও গ্রাম থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর খবর কী ভাবে জোগাড় করা যায়, তার প্রশিক্ষণ। কখনও বা জংলি জানোয়ার কিংবা পুলিশের অভিযান থেকে বাঁচার কৌশল। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে অস্ত্র চালানোর, বোমা এবং ল্যান্ডমাইন হামলারও।
কম্যান্ডার প্রমোদ তিওয়ারি।--নিজস্ব চিত্র
প্রমোদই পুলিশকে জানিয়েছে, মাওবাদীরা সাধারণত ৬ থেকে ১৬ বছরের শিশু-কিশোরদের নিয়ে একটি বাহিনী তৈরি করছে। তার পোশাকি নাম ‘বাল সংগঠন’ বা ‘চাইল্ড উইং’। বছরখানেকের প্রশিক্ষণের পর এই বাহিনীরই কম্যান্ডার হয়েছিল প্রমোদ। পুলিশকে প্রমোদ জানিয়েছে, মাওবাদী সংগঠনের ‘পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি’-র সর্বকনিষ্ঠ দলটি হল এই ‘বাল সংগঠন’। এই বাহিনীর প্রত্যেকের দায়িত্বই নির্দিষ্ট করে দেওয়া রয়েছে। সাধারণত শিশুদের গ্রামে চরবৃত্তি এবং বাহকের কাজে নিযুক্ত করা হয়। স্কুলের পোশাক পরেই এই কাজ করে বাহিনীর সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতাদের আসা-যাওয়ার উপরে নজরাদারিও চালায় এরা। প্রমোদের কথায়, “স্কুলের পোশাক পরে থাকায় সহজেই পুলিশের চোখ এড়ানো যায়। সেই কারণেই বাল সংগঠনের সদস্যরা সাধারণত স্কুলের পোশাকই পরে থাকে।”
১২ বছর বা তার বেশি বয়সের কিশোরদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং তির-ধনুক। অনেক সময়ে ল্যান্ডমাইন পোঁতা এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজেও এদের ব্যবহার করা হয়। ১৬ বছরের পরে বাল সংগঠনের সদস্যদের গেরিলা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রমোদের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, অনেক ক্ষেত্রেই মাওবাদীরা আদিবাসী গ্রাম থেকে জোর করে শিশুদের তুলে নিয়ে গিয়ে এই বাহিনীতে ঢুকিয়ে দেয়। সম্প্রতি, প্রতিটি পরিবার থেকে এক জন করে শিশুকে বাহিনীতে পাঠানো বাধ্যতামূলক করেছে মাওবাদীরা। বাহিনীতে ঢুকে যাওয়ার পর জঙ্গলই তাদের আস্তানা। প্রমোদ জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে মাওবাদী বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছে সে। এখন সে একে-৪৭ থেকে শুরু করে সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারে। পুঁততে পারে ল্যান্ডমাইনও।
এখন অবশ্য ওই পথ থেকে ফিরেই আসতে চায় বিহার-উত্তরপ্রদেশ সীমানা ঘেঁষা, কৈমুর জেলার বেলাও থানার সোনাও গ্রামের বাসিন্দা, প্রমোদ তিওয়ারি। দারিদ্রের তাড়নায় বর্তমানে ফরিদাবাদে মজদুরি খুঁজতে যাওয়া মহেন্দ্র তিওয়ারির বড় ছেলে প্রমোদ সরকারি সাহায্যের আশাতেই অত্মসমর্পণ করেছে। পুলিশকে সে জানিয়েছে, এক সময় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল সে। এখন আবার নতুন করে সে পড়াশোনা শুরু করতে চায়।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.