|
|
|
|
বহু পুরুষে আসক্ত সন্দেহেই প্রণয়িনী খুন, বলছে পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
প্রণয়জনিত ঈর্ষার জ্বালাতেই বৌবাজার এলাকার হোটেলকর্মী গোলাম মুস্তাফা মাথা কেটে তাঁর প্রেমিকাকে খুন করেছেন বলে পুলিশের সন্দেহ। তাদের অনুমান, বহু পুরুষের সঙ্গে প্রণয়িনী র্যাচেল আয়েষা সরকারের সম্পর্ক আছে সন্দেহ করেই মুস্তাফা তাঁকে প্রথমে বিষ খাওয়ান এবং পরে গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়ে দেন। তার পরে বিষ খেয়ে এবং হাতের শিরা কেটে নিজেকেও শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন ওই যুবক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মুস্তাফা এখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। আসল সত্য জানার জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের অপেক্ষায় আছে পুলিশ।
গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের বহুতলে মুস্তাফাদের আবাসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঠিক কী হয়েছিল?
পুলিশ জানায়, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাসিন্দা আয়েষার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বৌবাজার এলাকার একটি হোটেলের কর্মী মুস্তাফার। তাঁকে লুকিয়ে র্যাচেল বহু পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন বলে মুস্তাফার সন্দেহ ছিল। এর জেরেই তিনি প্রেমিকাকে ডেকে বিষ খাইয়ে ও গলা কেটে মেরে ফেলেন। শেষে আত্মহত্যা করার জন্য নিজেও বিষ খান এবং হাতের শিরায় কোপ মারেন। আদতে বর্ধমানের আউশগ্রামের বাসিন্দা মুস্তাফা প্রায় আট বছর ধরে বৌবাজারের ওই হোটেলে ওয়েটারের কাজ করছিলেন বলে জানান হোটেলের ম্যানেজার তমোনাশ চন্দ্র। |
|
ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সুমন বল্লভের ছবি। |
তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসার জানান, এ দিন সন্ধ্যায় কেক খাওয়ানোর জন্য প্রেমিকাকে গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে নিজেদের আবাসে ডেকে পাঠান মুস্তাফা। হোটেলের অন্য কর্মীরা সেই সময় আবাসে ছিলেন না। বৃহস্পতিবার র্যাচেলের জন্মদিন ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, এ দিন তাঁরা দু’জনে প্রথমে কেক খান। কারণ, মুস্তাফার ঘরের চার দিকে কেকের টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। সেই সময় তাঁদের মধ্যে ধস্তাধস্তি এবং বাদানুবাদ হয়। পুলিশের অনুমান, মুস্তাফা প্রেমিকাকে বিষ মেশানো পানীয় দেন এবং নিজেও তা খান। মৃত্যু নিশ্চিত করতে আয়েষার গলায় ছুরির কোপ মারেন ওই যুবক। তদন্তকারী অফিসার বলেন, “ছুরিটায় তেমন ধার ছিল না। মেয়েটির গলার ডান দিকে দু’টি এবং বাঁ দিকে একটি গভীর ক্ষতচিহ্ন আছে।” দেহটি উদ্ধারের সময় র্যাচেলের শরীর থেকে মাথাটি খসে পড়ে যায় বলেও জানান ওই অফিসার।
খুনের পরে মুস্তাফা নিজেই ফোন করে তাঁকে ঘটনার খবর দেন বলে জানান হোটেলের ম্যানেজার তমোনাশবাবু। তিনি বলেন, “মুস্তাফা আমাকে ফোন করে বলে, ‘আমি ওষুধ খেয়েছি। চলে যাচ্ছি।’ ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না-পেরে এক জনকে কর্মীদের আবাসে পাঠাই। তার পরে জানতে পারি, কী ঘটেছে। পুলিশে খবর দিই রাত সওয়া ৮টা নাগাদ।”
রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই বহুতলের সামনে বেশ কিছু মানুষের জটলা। আধো অন্ধকার একটি ছোট প্যাসেজ পেরিয়ে বাড়িটির সিঁড়ি ধরে একটু উপরে ওঠার পরেই দেখা গেল, পড়ে আছে চাপ চাপ রক্ত। গোটা সিঁড়িতেই ফোঁটা ফোঁটা রক্ত। পুরনো ওই বাড়িটির প্রায় সব ফ্ল্যাটই তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোনও কোনও তলায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। যে-ঘরে ঘটনাটি ঘটেছে, তার মেঝেতে পাতা সরু বিছানা রক্তে ভেজা। ঘরের আলো জ্বলছে, পাখাও ঘুরে চলেছে একটানা শব্দ করে। তদন্তকারী অফিসার জানান, তাঁরা যখন সেখানে পৌঁছন, তখনও কথা বলছিলেন মুস্তাফা। তিনি যে র্যাচেলকে মেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, ওই যুবক নিজেই তা স্বীকার করেন। যে-ঘরে ঘটনাটি ঘটেছে, পুলিশ সেটি ‘সিল’ করে দিয়েছে। |
|
|
|
|
|