তদন্তে এ বার সিআইডি
লোহাচুর-চার্জশিটে ঢোকানো গেল না সন্দেহভাজনের নাম
তিনশো কোটি টাকার ‘লোহাচুর-কেলেঙ্কারি’র তদন্ত করতে গিয়ে প্রশাসনিক জটিলতার ফাঁসে পড়েছে কলকাতা গোয়েন্দা-পুলিশ। যে কারণে অত্যাবশ্যক পণ্য নিগমের যে দুই প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নাম এতে জড়িত, তাঁদের এক জনের নাম চার্জশিটেই ঢোকানো যায়নি। আর তারই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মামলার তদন্তভার তুলে দেওয়া হল রাজ্য গোয়েন্দা-পুলিশ (সিআইডি)-এর হাতে। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের মতে, এই তদন্তের পরিসর কলকাতা ছাড়িয়ে আরও দূরে বিস্তৃত। তার প্রেক্ষিতেই দায়িত্ব বদল।
সন্দেহের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও এক জনকে চার্জশিট দেওয়া গেল না কেন?
স্বরাষ্ট্র-সূত্রের মতে, ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ থাকা ওই আমলার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে হলে কেন্দ্রের অনুমোদন দরকার। রাজ্য সরকার মারফত সেই অনুমোদন এখনও কলকাতা পুলিশের হাতে আসেনি। তাই পুলিশের দেওয়া চার্জশিটে লোহাচুর রফতানি সংস্থার দুই অংশীদার দুই বিসোয়াল, নিগমের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর আরএন জামির এবং ম্যানেজার (এক্সপোর্ট) শম্ভুনাথ সামন্তের নাম থাকলেও লোহাচুর-কেলেঙ্কারির জেরেই ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ থাকা আর এক এমডি-র নাম নেই।
লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, লোহাচুর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে ২০০৭-এর ৫ অক্টোবর নিউ মার্কেট থানায় (কেস নম্বর ১৭৪) নিগমের তরফে দু’টো আলাদা অভিযোগ দায়ের হয়। একটায় নাম ছিল নিগমের কিছু অফিসারের, অন্যটায় ১৪ জন কর্মীর। সংশ্লিষ্ট আইএএসের নাম অবশ্য কোথাও ছিল না। কিন্তু পরে তদন্তে দেখা যায়, ওই অফিসার নিগমের এমডি থাকাকালীন সরকারি নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না-করে এমন সব কাজ করেছেন, যাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে!
অতএব তাঁকে চার্জশিট দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। লালবাজার থেকে মহাকরণে দৌড়ঝাঁপ চলে। কারণ, কর্মরত কোনও আইএএস-কে চার্জশিট দিতে গেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের (হোম পার্সোনেল) অনুমতি প্রয়োজন। রাজ্যের হোম-পার দফতর মারফত তা পাওয়া যায়। কিন্তু মহাকরণ থেকে সেই অনুমতিপত্র লালবাজারে এখনও আসেনি।
ফলে সন্দেহভাজন হওয়া সত্ত্বেও চার্জশিট দেওয়া যায়নি ওই আমলার বিরুদ্ধে। তবে সরকারি অনুমোদন এলে ‘অতিরিক্ত’ চার্জশিট পেশ করে তাঁর নাম ঢোকানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর: বেজিং অলিম্পিকের আগে স্টেডিয়াম নির্মাণে ইস্পাতের চাহিদা মেটাতে লৌহচূর্ণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চিন। সেই সূত্রে নিগমকে লোহাচুর রফতানির কারবারে নামিয়েছিলেন এক শ্রেণির আমলা, আদতে যা সরকারি অর্থ নয়ছয়ের খেলা হয়ে দাঁড়ায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে সিএজি’র রিপোর্টেও। নানা ভাবে ‘নয়ছয়’ হয়েছে বলে অভিযোগ। যেমন,
lরফতানি-কারবারে অনভিজ্ঞ নিগম ‘অভিজ্ঞ সহযোগী ব্যবসায়ী’ নিয়োগ করে তাঁদের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে কম সুদে কোটি কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দেয়, যা আর শোধ হয়নি।
lএকই ‘লেটার অফ ক্রেডিট’ দেখিয়ে একাধিক বার ঋণ নেওয়া হয়েছে।
lকয়েক কোটি টাকা অগ্রিম পাইয়ে দেওয়া হয় সিঙ্গাপুরের এক দেউলিয়া জাহাজ ব্যবসায়ীকে। তাঁর জাহাজ আসেনি, টাকাও মারা গিয়েছে।
lমাঝ দরিয়ায় মালসমেত জাহাজ হাতবদল করে পুরো টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
lলোহাচুরের নামে মাটিবোঝাই জাহাজ পাঠিয়ে কিংবা এক বন্দরের মাল অন্য বন্দরে ঠেলে লক্ষ লক্ষ টাকা গুনাগার গিয়েছে।
এবং আরও অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে চুক্তি ভেঙে মামলার পর মামলায় জড়িয়েছে নিগম। সিঙ্গাপুর-হংকং-লন্ডনের মেরিটাইম আদালতে এখনও এমন ৭৬টি মামলা ঝুলছে, যা ‘লড়ার জন্য’ আইনি পরামর্শদাতা সংস্থাকে দফায় দফায় পাইয়ে দেওয়া হয়েছে তিন কোটি টাকা! জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে মামলাগুলি তদারকির ভার দিয়েছেন হাইকোর্টের আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এই পরিস্থিতিতে নিগমের কর্মী সংগঠন ‘এমপ্লইজ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স কংগ্রেস’-এর সভাপতি তথা বিধায়ক অসিত মিত্র খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জড়িত আমলা-কর্মীদের শাস্তি দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, এফআইআরে নাম থাকা সত্ত্বেও ১৪ জন কর্মীর কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এঁদের অনেকে ক’মাসের মধ্যে অবসরও নিতে চলেছেন। মন্ত্রীর কী বক্তব্য? খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “এই বিপুল আর্থিক দুর্নীতির তদন্তভার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সিআইডি-কে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের কাউকে রেয়াত করা হবে না।”
Previous Story Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.