|
|
|
|
বিপদে বাড়ছে ভোগান্তি |
শতেক জটিল রোগে আক্রান্ত ‘১০০’ ডায়াল |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। যাদবপুর থেকে এক মহিলা ১০০ নম্বরে ফোন করে বিপদের কথা জানাতে চাইলেন আলিপুরে পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। আলিপুর কন্ট্রোল রুম দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের অধীনে। কিন্তু ফোন চলে গেল কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে।
পাড়ায় দু’দলের মধ্যে মারামারি হচ্ছে দেখে মানিকতলার এক বাসিন্দা ১০০ নম্বরে ফোন করে জানাতে গেলেন লালবাজার কন্ট্রোল রুমে। সেই ফোন বেজেই গেল। হাওড়ার কদমতলার বাসিন্দা ছিনতাইবাজের পাল্লায় পড়ে হাওড়া জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ফোন করলেন। সেই ফোন ধরলেন লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোলের কর্মী।
পুলিশ সূত্রেই খবর, ১০০ নম্বরে ফোন করলে লালবাজারের ফোন হয়তো চলে যাচ্ছে বিধাননগর (উত্তর) থানায় মহকুমা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। আবার হয়তো বিধাননগরের ফোন পাচ্ছে হাওড়ায় জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম। আর এই জগাখিচুড়িই কলকাতা ও তার লাগোয়া তিন জেলার মানুষের বিপদ বাড়িয়েছে। ১০০ ডায়ালের এই পরিষেবা তাই তাঁদের অনেক সময়ে কাজে লাগছে না বললেই চলে। যেমনটা ঘটেছে বুধবার, মানিকতলা থানা এলাকার ‘বিধান নিবাস’-এ ডাকাতির ক্ষেত্রে। ওই আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরা কলকাতা পুলিশের সাহায্য চাইতে ১০০ নম্বরে ফোন করেছিলেন। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ১০০ নম্বরে ফোন করলে কোনও সময়ে পুলিশ ফোন ধরছে, অনেক সময়ে আবার কেউ ফোন ধরছে না। |
|
এক জায়গার ফোন অন্যত্র চলে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “কলকাতা পুলিশের এলাকা যেখানে জেলার সীমানার সঙ্গে মিলেছে, সেই সব এলাকায় এই সমস্যা রয়েছে। স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক সময়ে কলকাতা পুলিশ এলাকার ফোন লাগোয়া জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যাচ্ছে।” প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগনার লাগোয়া এলাকা হওয়ায় বিধান নিবাসের বাসিন্দারা বিপদে পড়ে ১০০ নম্বরে ফোন করলেও, তা লালবাজারে আসেনি। সেটি চলে গিয়েছে অন্য কোথাও। সেখান থেকে ফোন না তোলায় পুলিশ সময় মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি।
প্রযুক্তিগত সমস্যা যে রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন বিএসএনএলের কর্তারা। তবে এর দায় যে পুলিশকর্তাদেরই, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
কলকাতা সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার (সুইচিং-প্ল্যানিং) গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ আমাদের যে ধরনের প্রস্তাব দেয়, সাধারণত তার ভিত্তিতেই ১০০ নম্বর ফোনের ‘ম্যাপিং’ হয়। যে নম্বর থেকে ১০০ নম্বরে ফোন যাচ্ছে, সেই নম্বরের এলাকার নিকটবর্তী থানা বা পুলিশ কন্ট্রোল রুমেই ফোন বাজার কথা।”
নাগরিকদের প্রশ্ন হল, প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্য তাঁদের হয়রান হতে হবে কেন? বিধান নিবাসের বাসিন্দাদের বক্তব্য, যদি ধরেও নেওয়া হয় বুধবার দুপুরে ১০০ নম্বরে ফোন করে লালবাজার কন্ট্রোল রুমে যায়নি, তা হলে নিশ্চয়ই তা কোনও জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে বেজে গিয়েছিল। তা হলে তারাই বা ফোন ধরল না কেন?
কলকাতা পুলিশের দাবি সম্প্রতি লালবাজার কন্ট্রোল রুমে অত্যাধুনিক যে সব যন্ত্র বসানো হয়েছে, তাতে কলকাতা পুলিশ এলাকা থেকে ১০০ নম্বরে ফোন করলে না ধরার সম্ভাবনা খুবই কম। প্রযুক্তিগত ত্রুটি না হলে কন্ট্রোল রুমের কর্মী ফোন তুলতে বাধ্য। কারণ টেলিফোন না-ধরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কন্ট্রোল রুমে ১০০ নম্বরের জন্য আলাদা করে ১০টি লাইন রাখা রয়েছে। কোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে, কত বার ফোন করা হয়েছে, কে ফোন ধরছেন, কী কথোপকথন হচ্ছে সব কিছুই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় নথিভুক্ত হয়। এমনকী, যদি ধরেও নেওয়া হয়, একই সঙ্গে ১০টি লাইনই ব্যস্ত রয়েছে, তা হলে কোন নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, তা ‘কলার আইডি’ থেকে জেনে নিয়ে কন্ট্রোল রুমের কর্মীই সেখানে যোগাযোগ করবেন। তিনি ‘রিং-ব্যাক’ না করলে নিয়ম অনুযায়ী কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সেই কর্মীকে কারণ দর্শাতে বলবেন।
কলকাতা পুলিশের আরও দাবি, লাগোয়া জেলা থেকে কেউ ১০০ নম্বরে ফোন করে বিপদের কথা জানালে লালবাজার কন্ট্রোল রুমের কর্মীরাই তা সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে বা সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করে জানিয়ে দেন। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, সমস্যা যদি থাকেও, তা নিয়ে মাথাব্যথা হোক পুলিশ বা বিএসএনএলের। তাঁরা শুধু চাইছেন, বিপদে পড়লে পুলিশ আসুক। সেই পুলিশ কলকাতার হলেও ক্ষতি নেই, জেলার হলেও নয়। |
|
|
|
|
|