নিরাপত্তার ফস্কা গেরো খাস পুলিশ আবাসনেই
তাঁদের নিরাপত্তার জন্য আবাসনের প্রবেশপথে মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র পুলিশকর্মীদের। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন খাস পুলিশ আবাসনের বাসিন্দারাই।
বুধবার দুপুরে উল্টোডাঙার ‘বিধান নিবাস’-এ ডাকাতি করতে এসে বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রীকে খুন করে গিয়েছে চার জন দুষ্কৃতী। এই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশকে আবাসনগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। সে নির্দেশ পেয়ে তাঁদের জারি করা আগের নির্দেশিকাই ফের আরও কঠোর ভাবে পালন করতে বলেছেন পুলিশকর্তারা। তার মধ্যে রয়েছে ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি ও অ্যালার্ম বসানোর নির্দেশও।
কিন্তু পুলিশের সেই পুরনো নির্দেশিকা যে পুলিশ আবাসনের কর্তারাই মানেন না, তা বৃহস্পতিবার সল্টলেকে কলকাতা পুলিশের চতুর্থ সশস্ত্রবাহিনীর আবাসনে গিয়েই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ দিন দুপুরে ওই আবাসনে গিয়ে দেখা যায়, ভিতরে যেতে চাইলে একটি রেজিস্টারে সই করতে বলা হয় বহিরাগতকে। এর পরে ওই ব্যক্তি কোথায় যাচ্ছেন, তার কোনও খোঁজই রাখেন না কেউ। আবাসনের কোথাও নেই সিসিটিভি বা ইন্টারকমও।
একই চিত্র সল্টলেক, কলকাতা ও হাওড়ার প্রায় সব আবাসনেই। গত এপ্রিল মাসে তিলজলা থানা এলাকায় ই এম বাইপাস লাগোয়া একটি ফ্ল্যাটে খুন হয়েছিলেন অলোক রায় (৫২) ও সুচিত্রা রায় নামে দুই ভাইবোন। একটি রেস্তোরাঁর উপরে চারতলায় থাকতেন তাঁরা। কলের মিস্ত্রিরা ওই দু’জনকে খুন করে লুঠ করেছিল ফ্ল্যাটটি। ঘটনার দিন আবাসনে কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন না। বৃহস্পতিবার দুপুরেও সেই বহুতলে গিয়ে দেখা যায়, পরিস্থিতি একই রকম রয়েছে। দুর্ঘটনার পরেও সেখানে রাখা হয়নি কোনও নিরাপত্তারক্ষী। বসানো হয়নি সিসিটিভি বা অ্যালার্ম।
পরিস্থিতি বদলায়নি সন্তোষপুরের একটি বহুতলেও। গত বছর ওই বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে খুন হয়েছিলেন বাসন্তী বিশ্বাস (৬২) নামে এক বৃদ্ধা। তাঁকে খুন করেছিল এক চাবিওয়ালা। ঘটনার পর থেকে বাসন্তীদেবীর ফ্ল্যাটটি বন্ধ রয়েছে। খুনের পর থেকে ওই ফ্ল্যাটবাড়িতে অচেনা লোক বা ফেরিওয়ালার ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। তবে ভরদুপুরে খুনের ঘটনার পরেও সেখানে মোতায়েন করা হয়নি কোনও নিরাপত্তারক্ষী।
কাঁকুড়গাছির কাছে বেশ কয়েকটি বহুতল নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘পূর্বাশা’ আবাসন। সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থারও হাল একই। সিসিটিভি বা ইন্টারকম তো দূর অস্ৎ, ‘পরিচিত’ বলে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষীরা চেয়েও দেখেন না বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েক জন বাসিন্দা।
একই অবস্থা ভিআইপি রোডের ধারে ‘অনুপমা’ আবাসনে। সেখানকার বাসিন্দা রুচি চৌধুরীর অভিযোগ, “আমাদের আবাসনে সিসিটিভি বা ইন্টারকমের ব্যবস্থা নেই। সাধারণত বহিরাগতেরা নিরাপত্তারক্ষীদের ফ্ল্যাটের নম্বর ও নাম বললেই ছেড়ে দেওয়া হয়। কদাচিৎ রক্ষীরা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন বহিরাগতদের।”
হাওড়া শহরেও বেশির ভাগ আবাসনে সিসিটিভি বা ইন্টারকম ব্যবস্থা কার্যত নেই। অনেক আবাসনে রাখা হয়নি নিরাপত্তারক্ষীও। শহরের সব থেকে বড় আবাসন, জি টি রোড সংলগ্ন ‘গ্যাঞ্জেস গার্ডেন’-এ ৭৫০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। কিন্তু প্রবেশপথের মুখে কোনও সিসিটিভি নেই। আবাসিকেরা জানিয়েছেন, গত দু’মাসে দু’টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার আবাসিক কমিটির চেয়ারম্যান মহেন্দ্র অগ্রবাল বলেন, “উল্টোডাঙার ঘটনার পরে আমরা আবাসনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।” জি টি রোডের ধারে ‘অজন্তা আবাসন’, ‘বিক্রমবিহার’, ‘বিবেক বিহার’-এর মতো বড় আবাসনগুলিতেও কয়েক জন বেসরকারি রক্ষী ছাড়া নিরাপত্তার আর কোনও ব্যবস্থা নেই। আবাসনগুলির নিরাপত্তার এই ঢিলেঢালা ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুধবারই কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিষয়টি দেখার জন্য। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় গল্ফগ্রিনের সরকারি আবাসন পরিদর্শনে যান। পরে মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আবাসনগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এসেছি। এ বিযয়ে তাঁকে রিপোর্ট জমা দেব।”
Previous Story Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.