|
|
|
|
আদালতে নেতার ভূমিকায় বিরক্ত রবিনের পরিবার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জামুড়িয়া |
যাঁর হয়ে প্রচারে গিয়ে জামুড়িয়ায় রবিন কাজির প্রাণ গিয়েছিল, সেই তৃণমূল নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকাতেই ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার। দলের ভিতরেও এ নিয়ে জলঘোলা চলছে। যদিও প্রভাতবাবুর দাবি, অভিযুক্তের দ্রুত শাস্তির লক্ষ্যেই তিনি যা করার করেছেন।
গত ৪ এপ্রিল জামুড়িয়া বিধানসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে গিয়ে খুন হয়েছিলেন দলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা, হিজলগড়ার বাসিন্দা রবিন কাজি। বাড়ুল গ্রামে প্রচারের সময়ে সিপিএম আশ্রিত কয়লা মাফিয়া দিনু বাউরি তাঁকে গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে খুন করেন বলে অভিযোগ। রবিনের মৃত্যুর পরে প্রভাতবাবু জামুড়িয়া থানায় সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, অজয়-জামুড়িয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক গঙ্গা যাদব, জোনাল সদস্য মনোজ দত্ত ও লোকাল কমিটির সম্পাদক দিলীপ সিংহের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ দিনু-সহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করে। যদিও কোনও সিপিএম নেতাকে ধরা হয়নি। এ নিয়ে তৃণমূলের ক্ষোভও ছিল। |
|
সে দিন ঘটনার পরে প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র। |
এই পরিস্থিতিতে আদালতে প্রভাতবাবুর ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে দল তথা নিহতের পরিবারে। কেননা, গত ৪ জুলাই পুলিশ আসানসোল এসিজেএম আদালতে মামলার যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে সাংসদ বা অন্য তিন সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি। পুলিশের দাবি, তদন্তে ওই চার জনের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলেনি। তা ছাড়া, ২৩ জন অভিযুক্তের মধ্যে সুকুমার মণ্ডল, সংগ্রাম বাউরি ও অখিল বন্ধু পলাতক বলেও জানানো হয়েছে। প্রভাতবাবু এই চার্জশিটের বিরোধিতা করেননি। বরং জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই।
রবিন কাজির ভাগ্নে মির কাজলের আক্ষেপ, “ঘটনার পরে প্রভাতবাবুই বলেছিলেন, পরিবারের কাউকে অভিযোগ করতে হবে না। তিনিই যা করার করবেন। অথচ, পুলিশ যখন সিপিএম নেতাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে, তিনি প্রতিবাদ করেননি। ওঁর অবশ্যই ওই চার্জশিটে আপত্তি জানানো উচিত ছিল।” প্রভাতবাবু অবশ্য পাল্টা বলেন, “পুলিশ ওই চার্জশিটে সাংসদ-সহ চার নেতার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না মেলার কথা বলেছে। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে পুনরায় তদন্ত চাইলে মামলা দীর্ঘায়িত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দিনু বাউরি জামিন পেয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। জামিনে ছাড়া পেলে সে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারে। তাই আইনজীবীর পরামর্শ মেনেই নতুন করে তদন্ত চাইনি।” তাঁর আইনজীবী, রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের দাদা অসীম ঘটকও এই বক্তব্য সমর্থন করেছেন।
তবে তৃণমূল লিগ্যাল সেলের নেতা, আইনজীবী সমীর ভট্টাচার্য অবশ্য প্রভাতবাবুদের আইনি যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁর মতে, চার্জশিট নিয়ে আপত্তি জানানো বা না জানানোর সঙ্গে দিনুর জামিন পাওয়ার সম্পর্ক নেই। চার্জশিট নিয়ে আপত্তি তোলা হলেও আদালত জামিন দিতে পারে, কাউকে মামলা থেকে নিষ্কৃতিও দিতে পারে। আবার, কেউ আপত্তি না জানালেও আদালত নিজে থেকে কাউকে মামলায় যুক্ত করতে পারে। ফের তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতাও আদালতের আছে। রবিনের স্ত্রী লতিফা বেগম, দুই ছেলে সোয়েল ও জোয়েল, ভাগ্নে কাজলের দাবি, “পুনরায় তদন্ত হোক। শুধু ওই চার নেতাই নয়, হিজলগড়া গ্রামের কয়েক জনও ওই ঘটনায় যুক্ত। সিআইডি তদন্ত হলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
|
|
|
|
|
|