দিল্লির হস্তক্ষেপ চান ক্ষুব্ধ মমতা
অধিকর্তাকে ‘সরাতে’ মান নামানো হল বাগডোগরার
ধিকর্তাকে বদলি করতে চান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি সরতে নারাজ। বদলির নির্দেশের বিরুদ্ধে তিনি কোর্টে গিয়েছেন।
এ অবস্থায় ‘যাত্রী-সন্তুষ্টি’তে ঘাটতির যুক্তি দেখিয়ে বিমানবন্দরের মানই নামিয়ে দিলেন কর্তৃপক্ষ! যদিও তাঁদের তরফে স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে যে, মূলত অধিকর্তাকে সরানোর উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত। কারণ, মান নেমে গেলে জয়েন্ট জেনারেল ম্যানেজার পদের ওই অফিসার ওখানে অধিকর্তা থাকতে পারবেন না! নিয়ম অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট মানের বিমানবন্দরের অধিকর্তা হবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার পদমর্যাদার কোনও অফিসার। অর্থাৎ, বর্তমান অধিকর্তাকে সরতেই হবে।
নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমববঙ্গের বাগডোগরা বিমানবন্দরে। সেটি ছিল ‘গ্রেড ৩’ তালিকায়। এখন ‘গ্রেড ৪।’ এবং এমন একটা সময়ে তার অবনমন হল, যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিমান-পরিবহণের জালে বেঁধে ফেলতে চাইছেন রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ। কোচবিহারে উড়ান চালু হয়েছে। আরও কয়েকটি বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। বাগডোগরার অবনমনের খবরে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মমতা রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে বলেছেন অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে বিমানমন্ত্রী ভায়লার রবির সঙ্গে কথা বলতে। তাঁর কথায়, “খুবই অন্যায় ঘটনা হচ্ছে।”
ঘটনার সূত্রপাত বাগডোগরার অধিকর্তা কল্যাণকিশোর ভৌমিকের বদলির নির্দেশ ঘিরে। সন্তানদের পড়াশোনায় অসুবিধের কথা বলে তিনি বদলি হতে চাননি। কিন্তু জাতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এএআই) তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করেন। কল্যাণকিশোরবাবু কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে প্রশ্ন তোলেন, সন্তানদের পড়াশোনার সুবিধার্থে অন্যান্য অফিসার যখন বদলি থেকে রেহাই পেয়েছেন, তখন তিনি কেন পাবেন না?
এ হেন পরিস্থিতিতে আচমকাই নামিয়ে দেওয়া হল বাগডোগরা বিমানবন্দরের মান। এবং যে ভাবে, তাতে গোটা প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এএআই-সূত্রের খবর: সাধারণত যাত্রীর সংখ্যা, উন্নয়নমূলক কাজকর্ম, আয় ও কর্মীসংখ্যার ভিত্তিতে বিমানবন্দরের মান নির্ধারিত হয়। দেখা যাক, এগুলোর নিরিখে বাগডোগরার অবস্থান কী।
হিসেব বলছে, ২০০৭-এর এপ্রিল থেকে ২০১১-র মার্চ এই চার বছরের ব্যবধানে বাগডোগরায় বিমানসংস্থার সংখ্যা বেড়েছে দু’গুণ। অভ্যন্তরীণ উড়ানে যাত্রীর সংখ্যা ৩১ হাজার থেকে হয়েছে ৫৭ হাজার। আন্তর্জাতিক উড়ান চালু হয়েছে। হয়েছে নতুন প্রশাসনিক ভবন, হেলিকপ্টার বে। চেক-ইনের এলাকাবৃদ্ধির মতো উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। সর্বোপরি, ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষে যেখানে বাগডোগরা লাভ করেছিল সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা, সেখানে ২০১০-১১ অর্থবর্ষে মুনাফা দাঁড়িয়েছে অন্তত সাড়ে বারো কোটি। অর্থাৎ একশো শতাংশেরও বেশি!
তা হলে মান নামল কী করে? এগুলোকে ভিত্তি ধরলে তো মান বাড়ার কথা!
ঘটনা হল, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ পথে হাঁটেনইনি। তাঁরা বেছে নিয়েছেন সম্পূর্ণ আলাদা একটা মাপকাঠি যাত্রী সন্তুষ্টি। আর তারই ভিত্তিতে মানের সিঁড়িতে এক ধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বাগডোগরাকে। কী ভাবে?
এএআইয়ের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর (এইচআর) বিলাস ভুজঙ্গ দিল্লি থেকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “বিমানবন্দরের পরিষেবায় যাত্রীরা কতটা সন্তুষ্ট, সেটাও বিচার্য। বাইরের এক সংস্থাকে দিয়ে আমরা এ নিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিলাম। বাগডোগরার রিপোর্ট বেশ খারাপ।” কিন্তু কলকাতা-সহ দেশের অন্য বহু বিমানবন্দরের পরিষেবা নিয়েও তো যাত্রীরা ঘোরতর অসন্তুষ্ট। সেগুলোরও মান কি তা হলে নামিয়ে দেওয়া হবে? উত্তর দিতে পারেননি বিলাস ভুজঙ্গ। শেষে তিনি পরিষ্কার স্বীকারই করে ফেলেন, “আসলে বাগডোগরার ডিরেক্টরকে নিয়েই সমস্যা। ওঁকে সরাতেই এটা করা হয়েছে।”
কিন্তু এই পদক্ষেপ যুক্তিসঙ্গত কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিমানবন্দরের অফিসার মহলের একাংশের বক্তব্য: কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কিছু ব্যবস্থা নিতে চাইলে সেটা তাঁদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আবার কর্তৃপক্ষের নির্দেশের বিরুদ্ধে কেউ আদালতে গেলে সেটাও তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু স্রেফ এক জনকে সরানোর জন্য মান নামিয়ে দেওয়ায় আদতে বিমানবন্দরেরই ক্ষতি হবে বলে এই মহলের আশঙ্কা। কারণ, এজিএম পদমর্যাদার অধিকর্তার এক্তিয়ার অনেক কম। ফলে অধিকাংশ কাজের ছাড়পত্রের জন্য সদর দফতর অর্থাৎ গুয়াহাটির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে বাগডোগরাকে। মার খাবে উন্নয়ন।
বিষয়টি বিচারাধীন হওয়ায় কল্যাণকিশোরবাবু মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর স্ত্রী পুরো ঘটনা চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, “দিল্লিকে বোঝাতে হবে। খুবই খারাপ হচ্ছে। এটা হতে দেওয়া যায় না।”
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.