সড়ক নামটাই এখন প্রহসন যাত্রীদের কাছে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বনগাঁ |
দূর থেকে দেখলে ডোবা বলে ভ্রম হতেই পারে। রাজ্যের তরফে কিছুদিন আগে রাজ্য সড়কের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও চরিত্র বদলায়নি বনগাঁ-চাকদহ রোডের।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর মতিগঞ্জ থেকে দত্তফুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩৬ কিলোমিটার রাজ্য সড়কের অবস্থা বহুদিন ধরেই খারাপ। তবে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা বাগদার হেলেঞ্চা বাজার থেকে দত্তফুলিয়া পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার অংশের। বহু জায়গাতেই আর পিচ চোখে পড়ে না। বদলে বেরিয়ে পড়েছে পাথর, ইটের খোয়া। খানাখন্দে ভরে গিয়েছে রাস্তা। সেই সব গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে গিয়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে ওই সব গর্তে জল জমে যাওয়ায় পরিস্থিতি এখন আরও বিপজ্জনক। ব্যস্তা ওই রাস্তা নিয়ে দিয়ে নিত্য বাগদা ও নদীয়া থেকে নানা প্রয়োজনে বনগাঁয় আসতে হয় প্রচুর মানুষকে। |
|
বাগদা থেকে হেলেঞ্চা। |
বাগদার মানুষের কাছে বনগাঁয় আসার একমাত্র উপায় এই সড়ক। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষজন ঝুঁকি নিয়েই রোজ ওই সড়কে যাতায়াত করছেন। যেমন বনগাঁর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় বা বনগাঁ থেকে ট্রেন ধরে বাগদার বহু ছাত্রছাত্রী গোবরডাঙা হিন্দু কলেজ বা হাবরার শ্রীচৈতন্য কলেজের পড়তে আসেন। তা ছানা কৃষি প্রধান এই এলাকায় উৎপন্ন সবজি বনগাঁ মহকুমা হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে বেহাল সড়কের কারণে সেই ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে চাষিদের অভিযোগ। দিনের পর দিন রাস্তার দৈন্যদশার কারণে মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হলেও রাস্তা সংস্কার নিয়ে প্রশাসনের কোনও তাগিদ না থাকায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ থেকে সড়কটি বাগদার হেলেঞ্চা বাজারের পর দু’টি ভাগেল ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটি সোজাসুজি চলে গিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বয়রা বাজার পর্যন্ত। দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। আর একটি চলে গিয়েছে দত্তফুলিয়া পর্যন্ত। সেটির দৈঘ্য ১৭ কিলোমিটার। এই রাস্তাটি রাজ্য সড়কের মর্যাদা পেলেও, হেলেঞ্চা বাজার থেকে বয়রা বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তা সাধারণ সড়ক হিসাবেই থেকে গিয়েছে। মর্যাদার দিক থেকে পার্থক্য থাকলেও বৈশিষ্ট্যে অবশ্য কোনও পার্থক্য নেই। দু’টি রাস্তাই ওই পথে যাতায়াতকারীদের কাছে দুঃস্বপ্নের হয়ে দাঁড়িয়েছে। |
|
বনগাঁ থেকে হেলেঞ্চা। |
রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে চালকেরা জোরে বাস চালাতে পারেন না। ফলে যাত্রী সংখ্যা কমেছে। সেই সঙ্গে দেরিতে চলার জন্য গুনতে হচ্ছে জরিমানা। পাশপাশি ক্ষতি হচ্ছে বাসের যন্ত্রাংশের। দিনের পর দিন ক্ষতির বোঝা বইতে বইতে মালিকেরাও আর বাস চালাতে চাইছেন না। এমনই একজন বাসমালিক দেবদাস মণ্ডল বলেন, “আমাদের সিন্ডিকেটের মধ্যে সড়কে ৪৬টি বাস চলে। অন্য রুটের সংখ্যা ধরলে প্রায় ১০০ বাস চলে। খারাপ রাস্তার জন্য বাসের ক্ষতি হচ্ছে। যাত্রীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। যাত্রীদের কথা ভেবেই এখনও বাসমালিকেরা বাস চালাচ্ছেন। কিন্তু এ ভাবে কতদিন? অ্যাম্বুল্যান্সে করে রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে আশঙ্কায় থাকেন বাড়ির লোকেরারাস্তার অবস্থার কারণে পথেই যদি মারা যান।
তবে সম্প্রতি মতিগঞ্জ থেকে দত্তফুলিয়া পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন পূর্ত দফতরের বারাসত ডিভিশন-২ এর নির্বাহী বাস্তুকার সালাম মণ্ডল। তাঁর কথায়, “হেলেঞ্চা থেকে সড়কের যে অংশটি দত্তফুলিয়ার দিকে গিয়েছে, সেই অংশের ১০ কিলোমিটার পথের পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য রাজ্যের স্টেট প্ল্যানিং থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। বর্ষার পরেই সংস্কারের কাজ শুরু হবে।” যদিও গোটা সড়কটির সংস্কার নিয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। অন্য রাস্তাটির ব্যাপারে পূর্ত দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য নার্বাড-এর কাছে শীঘ্রই পরিকল্পনা জমা দেওয়া হবে। |
|
দত্তফুলিয়া থেকে হেলেঞ্চা |
সম্প্রতি বনগাঁ উত্তর বিধানসবা কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ ওই রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন পূর্তমন্ত্রীর কাছে।
গোপালবাবু বলেন, “বাগদার বিধায়ক ও মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে আমরা পূর্তমন্ত্রীর কাছে ওই সড়কের পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। মন্ত্রীও এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।
আর রাস্তা সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বহু আবেদন নিবেদনেও কাজ না হওয়ায় হতাশ মানুষ এখন মন্ত্রীর আশ্বাসকেই আঁকড়ে ধরেছেন।
|
ছবি: পার্থসারথি নন্দী। |
|