|
|
|
|
সায়নের ‘দেবদূত’ এখন করিমপুরের পাড়ার ছেলেরাই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • করিমপুর |
টেবিল বাজিয়ে হাল-ফিল্মের গান, মিটমিটে আলোয় সান্ধ্য-ক্যারাম আর না হয় নিছকই আড্ডা। পাড়ার মুখে দিন এ ভাবেই কাটছিল যাদের। পড়শি থেকে গ্রামের মানুষের কাছে নিছকই ‘বখাটে’ তকমা লেপ্টে গিয়েছিল যাদের গায়ে সেই যুবকদের ভরসাতেই এখন বছর তেরোর সায়ন ফের বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।
করিমপুরের ওই ‘বেকার-বখাটে’ যুবকেরাই বিবিধ উপায়ে চাঁদা তুলে এখন ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত সায়নের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কালু স্বর্ণকার, দিলীপ ঘোষ, শ্যাম সাহা সায়নের পরিবারের কাছে এখন আর নিছক নাম নয়, “সাক্ষাৎ দেবদূত’’, বলছেন ওই বালকের বাবা। |
সায়ন। নিজস্ব চিত্র। |
গত সপ্তাহ তিনেক ধরে তাদের ব্যস্ততার অন্ত নেই। নিজেদের পকেট থেকে খরচ করে ওরা তৈরি করেছে লিফলেট, পোস্টার, বিল বই। তাতে স্পষ্ট হরফে লেখা‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত....’। দল বেধে চলছে সায়নের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ। সাড়াও মিলছে বেশ। বুকে সাঁটা পোস্টার। হাতে কৌটো কিংবা বিল বই। দোকান, বাজার, রাস্তায় ঘুরে দশ, বিশ, পঞ্চাশ সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন। অর্পণ বলছেন, “আমাদের কাছে এটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাড়ার একটা ছেলে অসুস্থ। ওর সমবয়সি আর পাঁচটা ছেলেমেয়ে হাসছে, স্কুলে যাচ্ছে, |
|
খেলছে, আর ক্লাস এইটের ওই ছেলেটা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে, এ’টা দেখেও আমাদের পক্ষে চুপ করে থাকা সম্ভব হয়নি।”
ইতিমধ্যেই হাজার কুড়ি টাকা তাঁরা তুলে দিয়েছেন সায়নের বাবার হাতে। কিন্তু তাতেও অবশ্য চেন্নাইয়ে চিকিৎসা শুরু করা যায়নি করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রটির। অভাবে এখনও থমকে চিকিৎসা। সায়নের বাবা সাধনবাবু একটি দোকানের কর্মচারী।তিনি বলেন, “বলতে খারাপ লাগে, প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। এখনও অস্ত্রোপচার করাতে পারিনি। প্রায় চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন।” |
|
সায়নের জন্য তোলা হচ্ছে চাঁদা। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক। |
ছোট থেকেই সায়ন পেটের যন্ত্রণায় কষ্ট পায়। মাঝে মাঝে স্থানীয় চিকিৎসকদের দেখিয়েও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। মাস তিনেক আগে চেন্নাই-এর এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই ধরা পড়ে সায়নের রোগটা। সাধনবাবু বলেন, “মাস তিনেক আগে চেন্নাই-এ ছেলের চিকিৎসাবাবদ প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এখন চিকিৎসকেরা বলছেন, অস্ত্রোপচার করতে হবে। চার লক্ষ টাকা লাগবে। এর আগেই টাকা জোগাড় করতে সব আত্মীয়স্বজনের কাছে হাত পেতেছি। নিজের বাড়িটুকু ছাড়া সব বিক্রি করে দিয়েছি।” |
|
|
|
|
|