|
|
|
|
মজুরি বৃদ্ধির দাবি, ধর্মঘটে ৫০০ পাওয়ার লুম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
পুজোর মুখে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বুধবার রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেল পাঁচশো পাওয়ারলুম। নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ, চর মাজদিয়া, ফকিরতলা সহ গঙ্গার পূর্ব পাড়ে এর ফলে প্রায় দশ হাজার তাঁত শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কোন সংগঠনের সদস্যেরা কাজ বন্ধের ডাক দিয়েছেন, তা পরিষ্কার হয়নি। তৃণমূল সরাসরি অভিযোগ করেছে, “সিটু সমর্থিত শ্রমিকেরাই কাজ বন্ধ করেছেন।” সিটু সমর্থিত ইউনিয়নের পাল্টা দাবি, “আমরা কিছুই জানি না। কারা কেন কাজ বন্ধের ডাক দিয়েছেন, তা বলতে পারব না।”
ওই এলাকার পাওয়ারলুম মালিকদের সংগঠনের ভাগীরথী পূর্ব পাড় তাঁত শিল্প সমিতির সম্পাদক মণীন্দ্র দেবনাথের অভিযোগ, “সিটুর সমর্থনে মৃতপ্রায় তাঁত শিল্পের উপরে আবার নতুন করে আঘাত করা হল। সিটু সমর্থক শ্রমিকদের জঙ্গি আন্দোলনের ফলেই মরসুমের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এতগুলো কারখানা এক সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেল।” অন্য দিকে, নদিয়া জেলা তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের (সিটু সমর্থিত) সহ সম্পাদক তথা স্বরূপগঞ্জের স্থানীয় নেতা রাধেশ্যাম দেবনাথের সোজা কথা, “পাওয়ারলুম বন্ধ হওয়ার জন্য যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। আমরা কিছুই করিনি।”
পাওয়ার লুম মালিক সমিতির অন্যতম সদস্য পিন্টু দেবনাথের বক্তব্য, “পাওয়ার লুম শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কথা বলে এ মাসের গোড়ার দিকে সিটু এবং তৃণমূলের দু’টি শ্রমিক সংগঠনের তরফে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো মঙ্গলবার রাতে আমরা একটা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলাম। তাতে উভয় শ্রমিক সংগঠনের দাবি ছিল ১৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি। আমরা বলেছিলাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সেই দিন বৈঠকে ফয়সালা না হওয়ায় এক সপ্তাহের মধ্যে ফের আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এই বিষয়টি নিয়ে কোথাও কোনও বিতর্ক বা অশান্তি ছিল না। কিন্তু বুধবার সকালে হঠাৎ করে সিটু সমর্থক শ্রমিকেরা কেন এমন আন্দোলনে নেমে পড়লেন, বুঝতে পারছি না।”
মালিকপক্ষের অভিযোগ, এই দিন সকালে সবে কাজ শুরু হয়েছে, হঠাৎই এক দল শ্রমিক এসে এক এক করে মণীন্দ্র দেবনাথ, গুরুপদ দেবনাথ, সঞ্জীব দেবনাথ, কার্তিক দেবনাথের পাওয়ার লুমে ঢুকে পড়েন। মণীন্দ্রবাবু বলেন, “আমার কারখানায় ঢুকে শ্রমিকদের টেনে হিঁচড়ে বার করে দেওয়া হয়। হুমকি দেওয়া হয়, কাজ বন্ধ না করা হলে, পাওয়ার লুম জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। মোট ১২টি কারখানায় এ ভাবে তারা ঢুকে পড়ার পরে এলাকার সব কারখানাই বন্ধ হয়ে যায়।” অভিযোগ, কাজ বন্ধের প্রতিবাদ করে প্রহৃতও হয়েছেন কয়েকজন শ্রমিক।
সিটুর রাধেশ্যামবাবু বলেন, “গত ৭ জুলাই আমরা চিঠি দিয়ে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানাই। ২৬ তারিখের সন্ধ্যায় সেই আলোচনায় অন্য একটি শ্রমিক সংগঠনও ছিল। তখন ঠিক হয়, আলোচনা গড়াবে। তাই যখন আলোচনার টেবিল খোলাই রয়েছে, তখন কেন আমরা গোলমাল করতে যাব। আমরা চাই না কাজ বন্ধ হোক।” তিনি জানান, এই কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত যে সিটু সমর্থন করছে না, তা তাঁরা ঘোষণা করবেন।
এখন শ্রমিকেরা একটি লুঙ্গির জন্য ৯ টাকা মজুরি পান, শাড়ির জন্য ৩০-৩২ টাকা এবং গামছার জন্য ৭ টাকা। নবদ্বীপ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হরিদাস দেবনাথ বলেন, “আমরা মালিকদের কথা মতো আলোচনার জন্য তৈরি ছিলাম।” তবে মালিকপক্ষ জানিয়েছে, উৎপাদন চালু না হলে আর কোনও আলোচনা হবে না। |
|
|
|
|
|