|
|
|
|
কর্তৃপক্ষকে তলব |
জমি-কাণ্ডে রাজ্য শো-কজ করছে হিন্দ মোটরসকে |
রঞ্জন সেনগুপ্ত • কলকাতা |
উত্তরপাড়ায় হিন্দুস্থান মোটরসের গাড়ি কারখানার বাড়তি জমি বিক্রি নিয়ে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় সংস্থাটিকে শো-কজ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। তার আগে মৌখিক আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে ওই সংস্থার কর্তাদের মহাকরণে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে বুধবার রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর মিলেছে।
বিধানসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে কয়েকটি সংস্থার হাতে থাকা জমি বিক্রির ব্যাপারে তদন্ত করবেন। সরকার বদলের দু’মাস না-কাটতেই সেই কাজে হাত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে বাটা কারখানার জমি বিক্রি নিয়ে নতুন সরকারের শো-কজের জবাবে এক আইএএস অফিসার যা বলেছেন, তাতে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রশাসনে। বাটা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের লক্ষ্যে সরকারি স্তরে আলাপ-আলোচনাও হচ্ছে।
আর এরই মধ্যে হিন্দুস্থান মোটরসের জমি বিক্রি সংক্রান্ত ফাইল দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরই নির্দেশে মুখ্যসচিব সমর ঘোষ গত সোমবার সংশ্লিষ্ট দফতরের অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন। মহাকরণ সূত্রে খবর: সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, জমি বিক্রি এবং সেই বাবদ প্রাপ্য অর্থ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সংস্থাকে শো-কজ করা হবে। তার আগে হিন্দুস্থান মোটরস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন সরকারি কর্তারা।
উত্তরপাড়ার হিন্দমোটরে দেশের প্রাচীনতম গাড়ি শিল্পটি গড়ে উঠেছিল ১৯৪৮-এ। মোট জমি প্রায় ৭৪১ একর, তার মধ্যে কারখানা তৈরি হয় ৪২৭ একরের উপরে। বাকি ৩১৪ একর প্রায় ফাঁকাই পড়ে ছিল। এ অবস্থায় আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে সরকারের কাছে ফাঁকা জমি বিক্রির অনুমতি চায় সংস্থা। অনুমতি পাওয়ার পরে হিন্দুস্থান মোটরসের তরফে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর)-এ জানানো হয়, উপনগরী তৈরির জন্য ওই ৩১৪ একর শ্রীরাম প্রপারটিস নামে এক সংস্থাকে ৮৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হবে, এবং তা দিয়ে কারখানার পুনরুজ্জীবন ও কর্মচারীদের বকেয়া মেটানোর হবে।
কিন্তু পরে ‘অন্য রকম তথ্য’ আসে সরকারের হাতে। কী রকম?
সরকার জানতে পারে, জমি আসলে বিক্রি করা হয়েছে ২৮৫ কোটিতে। তা ছাড়া প্রাপ্ত অর্থে কারখানার পুনরুজ্জীবনও কর্মীদের বকেয়া মেটানোর শর্তও মানা হয়নি। এর প্রেক্ষিতে দু’দফায় তদন্ত করেছিল আগের সরকার। গত বছর পেশ করা দু’টি তদন্ত কমিটির রিপোর্টেই অভিযোগ ছিল: ডিপিআরে যা বলা হয়েছে, তা কার্যকর হয়নি। উপরন্তু সরকারকে ৮৫ কোটি টাকার ডিপিআর জমা দেওয়া হলেও জমি বিক্রি হয়েছে প্রায় দু’শো কোটি টাকা বেশি দামে। অথচ তার বিস্তারিত তথ্য চেপে যাওয়া হয়েছে।
তদন্ত-রিপোর্টের নানা অভিযোগ প্রমাণিত হলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার আর কোনও পদক্ষেপ করেনি। কিন্তু ‘বন্ধ ও রুগ্ণ’ কারখানার জমি নিয়ে নতুন সরকার গোড়া থেকেই সরব। প্রশাসনিক সূত্রের খবর: ডিপিআরে উল্লিখিত ‘কারখানার পুনরুজ্জীবন ও কর্মীদের বকেয়া মেটানো’র প্রতিশ্রুতি কতটা পালন করা হয়েছে, শো-কজে তা জানতে চাইবে রাজ্য। জমি বিক্রির বাড়তি দু’শো কোটি নিয়েও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
কারখানার ওই ফাঁকা জমিতে উপনগরী তৈরির জন্য দুই বেসরকারি সংস্থার মধ্যে জমি বিক্রির চুক্তি হয়েছিল ২০০৭-এ।
ঠিক ছিল, ছ’হাজার কোটির প্রকল্পটি শেষ হবে সাত বছরের মধ্যে। এ পর্যন্ত তার একটা ইটও গাঁথা হয়নি বলে সরকারি সূত্রের খবর। শ্রীরাম প্রপারটিস প্রয়োজনীয় কয়েকটি সরকারি অনুমোদন এখনও পায়নি। ফলে কাজ কবে শুরু হবে, তা পরিষ্কার নয়। |
|
|
|
|
|