|
|
|
|
দামোদরের ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি, ঘুম উবেছে গ্রামবাসীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তারকেশ্বর |
গ্রামবাসীদের ঘুম কেড়েছে দামোদর।
কিছুদিন আগে অতিবৃষ্টিতে দামোদর উপচে জল ঢুকে গিয়েছিল বহু কৃষিজমিতে। নষ্ট হয়েছিল ফসল। এখন, জল নেমেছে। কিন্তু দামোদরের ভাঙন থেমে নেই তারকেশ্বরের নছিপুর গ্রামে। এই বর্ষার মরসুমে ইতিমধ্যেই নদীপাড়ের অন্তত ৩০ মিটার এলাকা ভেঙে গিয়েছে। নদীপাড় জুড়ে গ্রামবাসীদের কৃষিজমি। ভাঙনে সেই জমি চলে গিয়েছে নদীগর্ভে। যে অংশটি ভাঙছে, তার থেকে গ্রামের জনবসতির দূরত্ব বেশি নয়। অবিলম্বে ভাঙন রোধ করা না হলে তাঁদের বসতভিটেও তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা।
দামোদরের তীরে তারকেশ্বরের কেশবচক পঞ্চায়েতের নছিপুর গ্রামের কিছু এলাকা বরাবরই ভাঙন প্রবণ। বছর দশেক আগে সেচ দফতরের তরফে পাড়ের একাংশ বাঁধানো হয়েছিল। যে জায়গাটি বাঁধানো হয়েছিল, ফের তার পাশ থেকেই আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফে বিষয়টি নিম্ন দামোদর সেচ বিভাগের কর্তাদের জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার সেচ বিভাগের চাঁপাডাঙ্গার এসডিও তাপস পাল ভাঙন পরিদর্শনে ওই গ্রামে যান। আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যেই তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়ে স্থানীয় বিধায়ক তথা পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
ভাঙন নিয়ে প্রশাসনও যে রীতিমতো উদ্বিগ্ন তা তারকেশ্বরের বিডিও সুমন মজুমদারের কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, “বর্ষায় দামোদরের জল বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণে এই মুহূর্তে বালির বস্তা ফেলে ভাঙনের গতি রোধ করা যাবে না। সেই কারণেই বিষয়টি চিন্তার।” |
|
ছবি: দীপঙ্কর দে। |
ভাঙনের জন্য গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যেই বিপাকে পড়তে শুরু করেছেন। ভাঙন থাবা বসিয়েছে তাঁদের রুজি-রুজিতে। নছিপুরের বাসিন্দা বিবেকানন্দ হাটির চার কাঠা জমি ইতিমধ্যেই তলিয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “আমার ১৬ কাঠা জমি ছিল। অনেকটাই চলে গেল দামোদরে। বাকী জমি যে কোনও দিন তলিয়ে যাবে। জমি ছাড়া আমার অন্য কোনও রোজগার নেই।” তাঁর জমির পাশেই দাদা গোপাল হাটির জমি। তিনি বলেন, “আমার কিছুটা জমি চলে গিয়েছে ভাঙনে। এখনই প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে কী হবে জানি না!” তাপস দাঁ-র জমি এখনও ভাঙনের কবলে পড়েনি। তবু তাঁর দিন কাটছে আতঙ্কে। তাঁর আশঙ্কা, যে কোনও দিন তাঁর জমির হালও প্রতিবেশী হাটি পরিবারের মতো হতে পারে।
গ্রামবাসীরা অবিলম্বে ভাঙন রোধের দাবি তুললেও তা যে এখনই হচ্ছে না তা হুগলি জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কথাতেই স্পষ্ট। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নছিপুর গ্রামে দামোদরের যে অংশটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেখানে সেচ দফতরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। পাড় বাঁধাতে সম্ভাব্য খরচের একটি হিসাবও করেছে সেচ দফতর। ওই ভাঙন ঠেকাতে অন্তত ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন।
কিন্তু ভাঙন রোধে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষে খরচ করা সম্ভব নয়। তাই সেই টাকার সংস্থান বিকল্প কোনও পরিকল্পনা খাত থেকে করা যায় কি না, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের মতে, আপাতত টাকার সংস্থান করে রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। যাতে শীতের শুরুতেই ভাঙন রোধের কাজ শুরু করা যায়।
অর্থাৎ, সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এখন অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই গ্রামবাসীদের। |
|
|
|
|
|