|
|
|
|
পুড়শুড়ায় বিধায়কদের ঘিরে বিক্ষোভ বন্যায় গৃহহারাদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুড়শুড়া |
দু’বছর আগে দামোদরের বন্যা ভাসিয়ে দিয়েছিল ঘরবাড়ি।
তার পর থেকে তাঁদের দিন কাটছে ত্রিপলের ছাউনির নীচে। দু’বছরে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন অনেক। কিন্তু পুড়শুড়ার জঙ্গলপাড়ার গৃহহীন ৯৩টি পরিবার এখনও নতুন ঘর পাননি। তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভ যে কতখানি, বুধবার তা টের পেলেন ৬ বিধায়ক। তাঁদের রীতিমতো ঘিরে ধরে গৃহহীনরা বিক্ষোভ দেখালেন। সকলে দাবি তুললেন, অবিলম্বে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কোলাঘাটের তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় দলীয় বিধায়কের একটি দল এ দিন আরামবাগ মহকুমার নদীবাঁধগুলির পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলেন। রাজ্যের সেচ ও জলপথ এবং জলসম্পদ উন্নয়ন এই দুই দফতরের মিলিত স্ট্যান্ডিং কমিটির ওই সদস্যেরা এ দিন প্রথমেই আসেন জঙ্গলপাড়ায়। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী এবং মহকুমা ও ব্লক স্তরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা।
|
|
এ ভাবেই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে নিয়েছেন বানভাসিরা। |
২০০৯ সালের বন্যায় জঙ্গলপাড়ায় দামোদরের নদীবাঁধ প্রায় ২ হাজার ফুট ধসে যায়। জল ঢুকে পড়ে গ্রামে। বাঁধের ধারে বসবাসকারী ৯৩টি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়। সেই বাঁধ পাকাপাকি ভাবে এখনও সংস্কার করা হয়নি। বিধায়কদের ঘিরে ধরে এ দিন ওই সব পরিবারের সদস্যেরা বলেন, দু’বছরে এখানে প্রশাসনের কর্তা, মন্ত্রী, নেতা-সহ অনেকে এসেছেন। সকলে পুনর্বাসনের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। চাইলে শুধু ত্রিপল মেলে। মহিলারা সমস্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, “এ ভাবে চলতে থাকলে আমাদের মরতে হবে। হয় বিষ দিন মরি, নয়তো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন।” সান্ত্বনা দাস নামে এক মহিলা বলেন, “দু’বছরে আমাদের এক জন সাপের ছোবলে, আর এক জন বজ্রাঘাতে মারা গিয়েছেন।” শ্যামলী দাস জানান, ত্রিপল ছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য মেলে না।
এই বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে প্রথমে কিছুটা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন বিধায়কেরা। পরে তাঁরা পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের জানান, নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁরা এখানে এসেছেন সব কথা শুনতে। বিপ্লববাবু এ দিনই সমস্যা নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “আরামবাগ মহকুমার নদীবাঁধগুলির ভাঙন রোধ করা নিয়েও আমাদের সুপারিশ কয়েক দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করব।” |
|
বিধায়কদের ঘিরে বিক্ষোভ। |
ওই গৃহহীনদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গে পুড়শুড়ার বিডিও ফৈয়াজ আহমেদ বলেন, “পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বছর খানেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি জমি চিহ্নিত করেছে। জমির চরিত্রও বদল করা হয়েছে। যাবতীয় নথিপত্র জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”
জঙ্গলপাড়ার পরে বিধায়কেরা নৌকায় খানাকুলের উদনা গ্রামে মুণ্ডেশ্বরী নদীর ভাঙন পরিদর্শন করেন। একই পরিস্থিতি আরামবাগের পূর্ব কৃষ্ণপুর, অরুণবেড়া এবং হরিণখোলা গ্রামেরও। পলকা নদীবাঁধ কী ভাবে প্রতি বছর ভেঙে গিয়ে গ্রামগুলিকে বিপন্ন করছে, তার বর্ণনা দেন গ্রামবাসীরা। পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেন, “দ্রুত যাতে স্থায়ী ভাবে ভাঙন রোধ করা যায়, তা দেখার জন্যই তাঁরা এসেছেন।” বিপ্লববাবু এবং পারভেজ ছাড়াও বিধায়কদের ওই দলে ছিলেন কাকদ্বীপের মন্টুরাম পাখিরা, সাগরের বঙ্কিম হাজরা, ঘাটালের শঙ্কর দলুই এবং নবগ্রামের কানাইচন্দ্র মণ্ডল।
|
ছবি: মোহন দাস। |
|
|
|
|
|