‘অরক্ষিত’ বহুতল
সুরক্ষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন সিপিকে
হরে বহুতলগুলির নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পুলিশকর্তারা। দিনেদুপুরে উল্টোডাঙার ‘বিধান নিবাস’-এ ডাকাতি ও বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় এই নিরাপত্তাহীনতা ফের সামনে এল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিনের ঘটনার পরে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন, বহুতলগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে। সেই নির্দেশ পেয়েই পুলিশকর্তারা এ নিয়ে পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করেছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এর আগে বেশ কয়েক বার শহরের অভিজাত এলাকার বহুতলে পরিচারক বা পরিচারিকার হাতে খুন হয়েছেন বাড়ির মালিক। কখনও পরিচারক সরাসরি না করলেও তাদের সঙ্গে যোগশাজসে বাড়িতে ঢুকে খুন বা ডাকাতি করেছে অন্য দুষ্কৃতীরা। সে কারণেই বহুতলে পেশাদার, অপেশাদার দুষ্কৃতীদের প্রবেশ বন্ধের উপায় খুঁজছে পুলিশ।
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা বলেন, “বহুতলগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা একটি কর্মশালা করব। সেখানে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা ও আবাসিকেরাও থাকবেন।”
বুধবারের ডাকাতির ঘটনা কাদের কাজ, তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে পুলিশের ধারণা, এই ডাকাতি ও খুন কোনও ‘আনাড়ি’ দলের কাজ। পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতির সময়ে নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলছিল চার জন। ডাকাতির সময় দু’টি মোবাইল ফোনও হাতিয়ে নিয়েছে তারা। দুষ্কৃতীদের ওই আনাড়িপনাই ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।
তাঁদের বক্তব্য, পোড় খাওয়া ডাকাতেরা সাধারণত বাড়ির লোকেদের খুন করার ঝুঁকি নেয় না। এমন কোনও জিনিসও তারা ছোঁবে না, যার সূত্র ধরে পুলিশ তাদের ধরতে পারে (যেমন মোবাইল)। ডাকাতির সময়ে নিজেদের মধ্যে তারা কথাবার্তাও যথাসম্ভব কম বলবে। এ ক্ষেত্রেও প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের ধারণা, অপটু ডাকাতদলই এই কাজ করেছে। গোয়েন্দারা জানান, বছর দশেক আগেও এ শহরে পেশাদার যে সব ডাকাত ছিল, তাদের বেশির ভাগই এখন জেলে। সম্প্রতি শহর ও লাগোয়া এলাকায় যারা এ সব দুষ্কর্ম করছে, তাদের অধিকাংশই নতুন এবং কিছুটা আনাড়ি। ডাকাতি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে তারা সব ধরনের অপরাধই করছে।
পুলিশের পরামর্শ
যা করণীয়
আবাসনের প্রবেশপথে সিসিটিভি।
ফ্ল্যাট বা বাড়ির সদর দরজায় আই-হোল।
কোল্যাপসিব্ল গেটে তালা, দরজায় চেন।
লুকোনো বিপদঘণ্টা।
পরিচারক, পরিচারিকার ছবি-সহ ঠিকানা থানায়।
পরিচিত মিস্ত্রি দিয়েই বাড়ির কাজ করানো।
মূল্যবান সামগ্রী ব্যাঙ্কে।
এড়িয়ে চলুন
অপরিচিত কোনও ব্যক্তিকে ঘরে ঢোকানো।
আগ বাড়িয়ে আলাপ।
পরিচারিকার সামনে ব্যক্তিগত কথাবার্তা।
দরজা খুলে রাখা।
গোয়েন্দারা জানান, শর্তাধীন জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে পোড় খাওয়া দুষ্কৃতী সজল বারুই লেক থানা এলাকার এক অতিথিশালায় ডাকাতি করার জন্য বেছে নিয়েছিল আনকোরা কয়েক জন সঙ্গীকে। অপটু ওই দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। পরে তাদের কাছ থেকে জানা যায়, এর পিছনে রয়েছে সজল বারুই। জেরায় তারা জানায়, টাকার লোভ দেখিয়ে আনা হয়েছিল তাদের। কী করতে হবে তা তাদের আগে বলা হয়নি। কাজে নেমে তারা জানতে পারে, তাদের দিয়ে ডাকাতি করানো হচ্ছে।
উল্টোডাঙার বিধান আবাসনের ডাকাতির ঘটনায় সামনে আনকোরা দুষ্কৃতীরা থাকলেও, নেপথ্যে সজলের মতো কোনও পাকা মাথা রয়েছে কি না, তা অবশ্য এখনও বুঝে উঠতে পারেননি গোয়েন্দারা। তবে দুষ্কৃতীরা যে ওই আবাসন সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করেই কাজে নেমেছিল, তা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ওই আবাসনে রঙের কাজ চলছিল। যে ফ্ল্যাটে ডাকাতি হয়েছে, রং-মিস্ত্রিরা সেখানেও কাজ করেছিল। তাই ওই ফ্ল্যাটে কারা থাকেন, কী ভাবে সহজে ডাকাতি করে বেরিয়ে যাওয়া যায়, তা আগে থেকে ছকে এসেছিল দুষ্কৃতীরা।
ঠিক এ ভাবেই সম্প্রতি তিলজলা থানা এলাকার এক রেস্তোরাঁর উপরের একটি ফ্ল্যাটে ডাকাতি করতে এসে খুন করা হয়েছিল এক মাঝবয়সী ব্যক্তি ও তাঁর বোনকে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই বাড়িতেও জলের পাইপের কাজ চলছিল। পরে ওই মিস্ত্রিদের তিন জনকেই ঘটনার দায়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে জানা যায়, আনকোরা ওই দুষ্কৃতীরা লোভে পড়েই খুন করেছিল ওই দু’জনকে। আনকোরা ডাকাতদের হাতে একই ভাবে বছরখানেক আগে খুন হন সন্তোষপুরের একটি আবাসনের এক বৃদ্ধা। পরে দেখা যায়, এ ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞ ডাকাত নয়, লোভে পড়ে দুষ্কর্ম করেছে এক চাবিওয়ালা। বিধান আবাসনের মতো ওই দু’টি ক্ষেত্রেও দুষ্কর্মের সময় হিসেবে দুপুরবেলাকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডাকাতির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বহুতল আবাসনের ফ্ল্যাট।
Previous Story Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.