|
|
|
|
শহিদ দিবসে উপচে পড়া ভিড় দেখল নানুর |
অর্ঘ্য ঘোষ • নানুর |
নানুরে শহিদ সমাবেশের মঞ্চ থেকে কর্মীদের আগামী পঞ্চায়েতের নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বুধবার ছিল নানুরের বাসাপাড়ায় তৃণমূলের শহিদ দিবস। ২০০০ সালে স্থানীয় সুচপুরে ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুর খুন হন। ওই খুনের দায়ে ২০১০-এর নভেম্বর মাসে ৪৪ জন সিপিএম নেতাকর্মীর যাবজ্জীবন সাজা হয়। প্রতি বছরই ২৭ জুলাই নানুরের বাসাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শহিদ দিবস পালন করে থাকেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দু’বছর বাদে ওই শহিদ দিবসে উপস্থিত থেকেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সে সময় তিনি ছিলেন শুধুই দলীয় নেত্রী। সুচপুর গণহত্যা-সহ বিভিন্ন খুনে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে শহিদ সমাবেশে সরব হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু বর্তমানে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সুচপুরের গণহত্যায় অভিযুক্তরাও ইতিমধ্যে সাজা পেয়ে গিয়েছেন। |
|
ভিড়ে ঠাসা সভাস্থল । |
স্বভাবতই এ দিনের শহিদমঞ্চে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ মমতা কী বলেন তা শুনতে হাজির হয়েছিলেন বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং লাগোয়া বর্ধমানের প্রায় ৩০ হাজার কর্মী-সমর্থক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত হতে পারেননি। এর ফলে এ দিন শহিদ দিবসে আসা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশ হতাশ। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এ দিনের শহিদ দিবসে নানুরে আসবেন না বলে দলের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল। আবার অনেকে এসেছিলেন ‘চিত্রতারকাদের দেখতে।’ কারণ গতবার শহিদ দিবসে বিনা নোটিশেই উপস্থিত হয়ে মঞ্চ মাতিয়েছিলেন তাপস-শতাব্দী। উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল তাপস-শতাব্দীর পাশাপাশি এ বার দেখা মিলতে পারে চিরঞ্জিৎ ও দেবশ্রীরও। কিন্তু তাঁদের কাউকে দেখতে না পেয়ে বোলপুরের গৃহবধূ অর্চনা দাস, লাভপুরের রিকশা চালক ষষ্ঠী বাউরিদের মতো বেশ কয়েক জন কিছুটা হতাশই হয়েছেন। তাঁদের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দলনেত্রী এ দিন কী বলেন তা শোনার পাশাপাশি শতাব্দী-চিরঞ্জিৎদের দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু কেউই এলেন না।” তবে এ দিনের মঞ্চে দলীয় নেতৃত্বের উপস্থিতি ঘাটতি ছিল না। কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়, রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মদন মিত্র, পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ থেকে শুরু করে বীরভূমের দুই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও নুরে আলম চৌধুরী-সহ উপস্থিত ছিলেন আরও বেশকিছু মন্ত্রী, বিধায়ক, প্রভাবশালী নেতা। মঞ্চে এক নেতার ভাষণ চলাকালীন বাজনা বাজিয়ে উপস্থিত হয় একটি বিরাট মিছিল। তা দেখে মদনবাবু বলেন, “আনন্দ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখনই আনন্দ করার সময় আসেনি। আমরা রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছি ঠিকই। কিন্তু বৃত্তটা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমকে উচ্ছেদ করে আনন্দ উপভোগ করতে হবে।” প্রায় একই সুরে মুকুল রায়ও বলেন, “আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে লক্ষ্য করে সিপিএমকে উচ্ছেদ করার শপথ নিতে হবে নানুরের মাটিতে দাঁড়িয়েই।” এই মঞ্চে পর্যটন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে বীরভূমের বিভিন্ন জায়গাকে সাজিয়ে তোলা হবে জানিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রী। আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “বামফ্রন্টকে আপনারা ৩৪ বছর সময় দিয়েছেন। আমাদের এক থেকে দেড় বছর সময় দিন। |
|
সুচপুরে নিহত আলি হোসেনের মায়ের চাকরির আর্জি মুকুল রায়ের কাছে। |
দেখবেন আমরা যা প্রতিশ্রতি দিয়েছিলাম তা পূরণ করে দেব।” অন্য দিকে, এ দিনই মঞ্চে মুকুলবাবুর সঙ্গে দেখা করেন সুচপুরে নিহত একমাত্র ছেলে আলি হোসেনের মা তাকোড়ার বাসিন্দা জাকেরা বিবি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর প্রতিবন্ধী মেয়েও। মুকুলবাবুকে তিনি তাঁদের সমস্যার কথা বলেন। সব শুনে মন্ত্রী বলেন, “বিলাসপুরে রেলে জাকেরা বিবির এক নাতির চাকরির ব্যবস্থা ঠিক হয়ে আছে। বিধানসভা নির্বাচনের কারণে প্রক্রিয়াটি কিছু দিন আটকে ছিল। শীঘ্রই তাঁর চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।” জাকেরা বিবি বলেন, “মন্ত্রী মুকুলবাবুকে সব বলেছি। তিনি নাতির কাজের আশ্বাস দিয়েছেন।”
যাই হোক নানুরের শহিদ দিবসকে ঘিরে এ দিন সকাল থেকেই এলাকায় ছিল সাজোসাজো রব। নানুরগামী প্রতিটি রাস্তায় দলীয় পতাকা সাঁটা বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর। এমনকী ভ্যানরিকশা ভর্তি মানুষের ঢলও দেখা গিয়েছে। বোলপুর-বাসাপাড়া, বাসাপাড়া-নানুর, বাসাপাড়া থেকে বর্ধমানের নতুনহাট-সহ প্রতিটি রাস্তায় যানবাহনের দীর্ঘলাইন। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে বসে রয়েছেন শিশু থেকে সব বয়সের মানুষ। অনেকে আবার নীচে জায়গা না পেয়ে গাছে উঠে বসেছিলেন। যাতে কোথাও অশান্তি না হয়, সে জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশাল পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি নামানো হয়েছিল আধাসামরিক বাহিনী এবং র্যাফ। এত কিছুর ব্যবস্থার পরেও মুকুলবাবুর বক্তব্য শেষ হতেই ভিড় পাতলা হতে শুরু করে। কিছুক্ষণ অবশ্য গান ও অবৃত্তি করে মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছিলেন কবি নজরুল ইসলামের নাতি সূবর্ণ কাজি।
পাশাপাশি এ দিন জমে উঠেছিল ব্যবসা। খোলা হয়েছিল অস্থায়ী হোটেল। ছিল মুড়ি, তেলেভাজার দোকানও। হোটেল ব্যবসায়ী ওসমান আলি, সাধন দাসরা বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই ভাল ব্যবসা হয়েছে।” মুড়ি-তেলেভাজার দোকানদার রফিক হোসেনের কথায়, “এত লোক, দু’জন সামাল দিতে পারছিলাম না।” |
বুধবার সোমনাথ মুস্তাফির তোলা ছবি। |
|
|
|
|
|