যানজটে হাঁসফাস করছে শহর। ক্রমশ বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। পার্কিং নেই। হাতে গোনা রাস্তা। তাও অপরিসর। ফুটপাথ বেদখল হয়ে রয়েছে। ফুটব্রিজ নেই। শহরের রাস্তায় গাড়ির গতি ঘন্টায় ১২ কিলোমিটার। ক্রমশই তা নিম্নমুখি। যানজট যেন এক অভিশাপ নিয়ে এসেছে ‘শহর শিলিগুড়ি’তে। সেই অভিশাপের হাত থেকে শহরকে রক্ষা করতে ‘মিশন-২০১৫’ শুরু করল দার্জিলিং জেলা পুলিশ। ট্রাফিক পয়েন্ট, কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিলিগুড়িতে ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে কলকাতার ট্রাফিক পুলিশের। রবিবার শিলিগুড়ির মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ে ৪টি ট্রাফিক গার্ডের উদ্বোধন করে এ কথা জানান দার্জিলিং জেলা পুলিশ সুপার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ। পুলিশ সুপার বলেন, “কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের একটি সফটওয়ার বিশেষজ্ঞ টিম ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি ঘুরে গিয়েছে। সফটওয়ারের মাধ্যমে গাড়ির গতিবিধি নজরদারি সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা তারা করার পরামর্শ দেবেন। সেভাবে কাজ হবে। কর্মীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পারদর্শী করে তুলতে প্রশিক্ষণ দেবেন কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের একটি বিশেষজ্ঞ দল। তাঁরা খুব শীঘ্র শিলিগুড়িতে আসবেন। এ ছাড়া আমরা, পুরসভা, জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের থেকেও পরামর্শ নেব। যাতে ২০১৫-তে যানজট মুক্ত হয় শিলিগুড়ি।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্রের বিধায়ক শঙ্কর মালাকার এবং শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পাল পুলিশকে সহযোগিতার সমস্তরকম আশ্বাস দিয়েছেন। |
নান্টুবাবু বলেন, “শহরে অটোর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। পার্কিংয়ের জায়গা নেই। তবুও লাইন্সেস দেওয়া হচ্ছে। ছয় হাজার রিকশার লাইন্সেস থাকলেও চলছে ২০ হাজার রিকশা। এই বিষয়গুলি পুলিশকে দেখতে হবে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড় থেকেই শিলিগুড়ি শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হত। একজন ডিএসপি, একজন ওসি ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। এদিন থেকে ওই অবস্থার পরিবর্তন করা হয়েছে। শহরের পানিট্যাঙ্কি মোড়, জলপাই মোড়, জংশন মোড় এবং শহর সংলগ্ন বাগডোগরায় চারটি ট্রাফিক গার্ড চালু করা হয়েছে। একজন ডিএসপি, একজন ইন্সপেক্টর এবং চারটি গার্ডের ওসিরা ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করবেন। এ ছাড়াও ৯ জন এসআই, ৪০ জন এএসআই এবং ৮১ জন কনস্টেবল রাখা হয়েছে ট্রাফিকে। শিলিগুড়ি থানা এলাকায় দুটি ট্রাফিক গার্ড, প্রধাননগর থানা এলাকায় একটি ট্রাফিক গার্ড এবং বাগডোগরা সিআই এলাকায় একটি ট্রাফিক গার্ড কাজ করবে। প্রত্যেকটি গার্ডকে আলাদা করে মোটর বাইক দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ট্রাফিকে কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হবে পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ট্রাফিক গার্ডের পাশাপাশি প্রত্যেকটি মোড় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশনের (সিসিটিভি) ব্যবস্থা করা হবে। সিসিটিভির মাধ্যমে যানবাহনের গতিবিধির উপর নজর রাখা হবে। কোন গাড়ি ট্রাফিক আইন মানছে না সেদিকে লক্ষ রাখা হবে। সফটওয়ারের মাধ্যমেও ট্রাফিক সিস্টেমে মনিটরিংয়ের কাজ করা হবে। শহরের মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়, জংশন মোড়, সেবক মোড়, হাসমিচকে ও পানিট্যাঙ্কে মোড়ে ফুটব্রিজের করার আবেদন পুরসভার কাছে রাখবেন পুলিশ কর্তারা। পুলিশ সুপার এ দিন বলেছেন, “ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে এগোচ্ছি। সেখানে শিলিগুড়ির সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চাই।” এ দিন ট্রাফিক কমপ্লেন কার্ড চালু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে দার্জিলিংয়ের স্পেশাল আইজি এন রমেশবাবু উপস্থিত ছিলেন। |