|
|
|
|
আজ বৈঠক মহাকরণে |
ভাড়াবৃদ্ধি বারণ, কী ভাবে হাল ফিরবে সরকারি পরিবহণের |
অশোক সেনগুপ্ত • কলকাতা |
যেন সোনার পাথরবাটি!
বাস-ট্রামের ভাড়া বাড়বে না। কর্মীও কমবে না। অথচ অধিগৃহীত পাঁচটি পরিবহণ সংস্থার লোকসান কমাতে চায় রাজ্য সরকার!
লোকসান কমাতেই পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার এত দিন ধাপে ধাপে ওই পাঁচ সংস্থার ভর্তুকি বাড়িয়েছে। যার নিট ফল: এখন তাদের পিছনে ভর্তুকি বাবদ ফি বছর নয়-নয় করে চারশো কোটি টাকা গুনতে হয়। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও কি লোকসান কমাতে একই পথে হাঁটবে?
রাজ্য পরিবহণ দফতর জানিয়ে দিয়েছে, তার কোনও প্রশ্নই নেই। পাঁচ পরিবহণ সংস্থায় ভর্তুকি কোনও মতেই বাড়ানো হবে না। বরং, তা পর্যায়ক্রমে কমবে। এবং সংস্থাগুলোকে সরকারের এই মনোভাবের কথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে দফতর সূত্রের খবর।
তা হলে তাদের হাল ফিরবে কী ভাবে?
অর্থ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে সেই পথই খুঁজে বার করতে পরিবহণ-অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আজ, সোমবার অর্থ ও পরিবহণের সে বৈঠক শুরু হচ্ছে। রাজ্য সরকার কী চাইছে, তা দুই দফতরের আমলাদেরও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের চাহিদা মেটাতে কী করা যেতে পারে?
মহাকরণ-সূত্রে খবর: কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ (সিএসটিসি), ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি), দক্ষিণবঙ্গ রার্ষ্ট্রীয় পরিবহণ (এসবিএসটিসি), উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ (এনবিএসটিসি) এবং পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ (ডব্লিউবিএসটিসি) এই পাঁচটি সরকারি পরিবহণ সংস্থায় ক্ষতির বোঝা উত্তরোত্তর বাড়ছে। দাওয়াই হিসেবে ভাড়াবৃদ্ধি ব্যতীত অন্য উপায়ে আয় বাড়ানোর কথাই প্রাথমিক ভাবে ভাবা হচ্ছে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “আমরা চেষ্টা করছি আয় বাড়ানোর বিভিন্ন পথ বার করার। তবে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাড়া কোনও মতেই বাড়ানো চলবে না।”
এবং এই প্রয়াসেরই অঙ্গ হিসেবে সিএসটিসি-র কসবা ও বিধাননগর ডিপোর অধিকাংশ জায়গা মোটরযান বিভাগ (পিভিডি)-কে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। পরিবহণ-কর্তাদের বক্তব্য, কলকাতা পুলিশের এলাকাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পিভিডি-র কাজের এলাকাও বাড়তে চলেছে। সর্বত্র গাড়ির সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তার সুযোগ নিয়ে পিভিডি-র আয়ও অনেকটা বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু সে জন্য দরকার পিভিডি-র বিকেন্দ্রীকরণ ও পরিকাঠামো উন্নয়ন। সিএসটিসি-ডিপোর ফাঁকা জায়গা কাজে লাগানো এর প্রথম ধাপ।
অন্য দিকে জেএনএনইউআরএমে কেনা সিটিসি এবং সিএসটিসি-র নতুন বাসগুলোর আর্থিক দায়ভার সমস্যা আরও ঘোরালো করে তুলেছে। বছর দুই আগে রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে এমন বেশ ক’টা বাস কিনেছিল সিটিসি। জামিনদার হয়েছিল রাজ্য। টাকা মেটাতে সরকার সিটিসি-র বাৎসরিক প্রাপ্য থেকে তিন কোটির বেশি টাকা কেটে নিয়েছে। সিএসটিসি-র ক্ষেত্রেও তা-ই। ফলে দুই সংস্থার তহবিলে এমনিতেই হাঁড়ির হাল। এ অবস্থায় ভর্তুকি কমলে কী হবে, তা নিয়ে সরকারি মহলেই চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। পরিবহণ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের কেউ কেউ বলছেন, “সংস্থাগুলোকে যদি বাঁচাতে হয়, তা হলে আজ না হোক কাল কর্মী সঙ্কোচনের পথে হাঁটতেই হবে। যাত্রীভাড়াও বাড়াতে হবে। নচেৎ ভর্তুকি কমানোর ঘোষণা স্রেফ সোনার পাথরবাটি হয়ে থাকবে।” বস্তুত পাঁচ পরিবহণ সংস্থার স্বাস্থ্য ফেরানোর ব্যাপারে বিগত সরকার এক পরামর্শদাতা সংস্থাকে দিয়ে যে সমীক্ষা করায়, তার রিপোর্টে আয়বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মী-সঙ্কোচনেও জোর দেওয়া হয়েছিল। যদিও সে সুপারিশ বাস্তবায়িত করা হয়নি। নতুন সরকার এ নিয়ে কী ভাবছে?
এক পরিবহণ-কর্তার সাফ মন্তব্য, “কর্মী-সঙ্কোচনের মতো সাহসী পদক্ষেপ এখনই করা সম্ভব নয়।” আর পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সি এ নিয়ে বিতর্কেই জড়াতে নারাজ। তিনি বলেন, “সবে দু’মাস হল, দায়িত্ব নিয়েছি। আগে সব কিছু বুঝে নিতে হবে। সকলের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেব।” |
|
|
|
|
|