|
|
|
|
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রতিবাদে আন্দোলনে নামতে চলেছে বামেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নিকে ছাড়পত্র দেওয়ার সুপারিশের প্রতিবাদে রাস্তায় নামছে বামেরা। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার পাশাপাশিই রাজ্য সরকারকেও এমন ‘অপচেষ্টা’র বিরুদ্ধে ‘সতর্ক’ করে দিয়েছে তারা।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওই উদ্যোগের প্রতিবাদে সকলের আগে কর্মসূচি নিয়েছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীনই খুচরো ব্যবসায় বহুজাতিক সংস্থার অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল ফ ব। এখন বিরোধী
ভূমিকায় যাওয়ার পরে এই নিয়ে নতুন করে আন্দোলনে নামার হাতিয়ার পেয়েছে তারা। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুও সব ট্রেড ইউনিয়ন ও খুচরো বিক্রেতাকে নিয়ে ‘ঐক্যবদ্ধ লড়াই’য়ের ডাক দিয়েছে।
বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রে ৫১% পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিকে ছাড়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় সচিবদের পর্যায়ের কমিটি। এর পরেও ওই সুপারিশ কার্যকর হতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে। ওই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ওয়ালমার্ট, ক্যারেফোরের মতো বহুজাতিক সংস্থার এ দেশে খুচরো বিপণনে নামার দরজা খুলে যাবে। বিজেপি এবং বামপন্থী দলগুলির আশঙ্কা, মূল্যবৃদ্ধির জেরে প্রান্তিক মানুষের যখন এমনিতেই বিপর্যস্ত অবস্থা, সেই সময়ে এই উদ্যোগ দেশের কোটি কোটি ছোট ও মাঝারি খুচরো ব্যবসায়ীকে পথে বসাবে। তা ছাড়া, প্রথমে ৫১%-এর অনুমোদন দেওয়া হলেও বিদেশি সংস্থাগুলি এ দেশের সংস্থাগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ১০০% মালিকানাই পেয়ে যাবে বলে তাদের ধারণা। এই যুক্তি সামনে রেখেই এ রাজ্যে আন্দোলনে নামছে ফ ব। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের কড়া বিরোধিতা করছে সিপিএম-ও। পলিটব্যুরোর মতে, মুদ্রাস্ফীতি ঠেকানোর কার্যকর পদ্ধতি ছেড়ে ইউপিএ সরকার অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষকে আরও আক্রমণের মুখে ফেলতে চাইছে।
সিটুর রাজ্য সভাপতি তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষ খুচরো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কেন্দ্রের এই নীতিতে এদের বেশির ভাগেরই সর্বনাশ হয়ে যাবে। খুচরো ব্যবসায় এই সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যে ৫১%-এই থেমে যাবে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই’। সিটুর বক্তব্য, দেশে এখন এক হাজার মানুষ পিছু ১১টি খুচরো বিক্রয় কেন্দ্র আছে। পশ্চিমবঙ্গের হিসাবও তা-ই। মোট খুচরো বিক্রয় কেন্দ্রের ৯৫ ভাগই ৫০০ বর্গফুটের কম আয়তনের দোকান। এমতাবস্থায় খুচরো বিপণনে ৫১% বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যে যে পদক্ষেপ কেন্দ্র করছে, তার বিরুদ্ধে সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের নিয়ে ‘ঐক্যবদ্ধ লড়াই’য়ে নামার কথা বলেছে সিটু। একই সঙ্গে শ্যামলবাবুর হুঁশিয়ারি, ‘আমরা রাজ্য সরকারকেও সতর্ক করে দিচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গে এই অপচেষ্টা চললে তা রুখে দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। যাঁরা নির্বাচনে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, নির্বাচনী ইস্তাহারে তৃণমূল কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের এই পরিকল্পনার বিরোধিতাই করেছিল’।
ফ ব-র শ্রমিক সংগঠন টিইউসিসি ঠিক করেছে, আগামী ৫ ও ৬ অগস্ট রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে। বিভিন্ন বাজারের সামনে ধর্ণা-অবস্থান চালানোর পাশাপাশি তারা খুচরো ব্যবসায়ীদের ‘রক্ষা’ করার জন্য জনমত সংগ্রহ করবে। কলকাতায় নিউ মার্কেট এবং পার্ক সার্কাস বাজারে দু’টি জমায়েত করার পরিকল্পনাও আছে তাদের। টিইউসিসি-র রাজ্য সম্পাদক তথা রাজ্য বিপণন পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রথমে খুচরো বিপণন দিয়ে শুরু হলেও বহুজাতিক সংস্থাগুলি ধীরে ধীরে উৎপাদন ব্যবস্থাতেও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করবে। তার ফলে খুচরো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।” নরেনবাবুদের যুক্তি, খুব স্বল্প পুঁজিতে অন্য কোনও পরিকাঠামো ছাড়াই খুচরো ব্যবসা চালানো যায় বলে স্বল্পবিত্ত মানুষের কাছে তা অন্যতম নির্ভরযোগ্য এবং ‘স্বাধীন’ জীবিকা। বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে সেখানে ব্যবসা করতে দিলে ওই ছোট ব্যবসায়ীরা জীবিকা হারাবেন। প্রসঙ্গত, বাম জমানায় এ রাজ্যে ‘মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’র মতো বৃহৎ সংস্থাকে পাইকারি ব্যবসার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল, খুচরো বিপণনের নয়।
রাজনৈতিক প্রতিবাদের সঙ্গে সঙ্গেই অরাজনৈতিক আন্দোলনও শুরু হচ্ছে। খুচরো ব্যবসায়ীদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডাসর্’ (সিএআইটি) কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের প্রতিবাদে ২৬ জুলাই দেশের ১০০টি স্থানে ধর্ণায় বসবে। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ওই সুপারিশের ‘ক্ষতিকর প্রভাব’ কী হতে পারে, তা জানাতে চায় তারা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও তারা কথা বলবে। |
|
|
|
|
|