তৃণমূল সাংসদদের চিঠি অর্থমন্ত্রীকে
রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে সংসদে সরব হতে নির্দেশ মমতার
রাজ্যের উন্নয়নের জন্য অর্থের দাবিতে ‘সরব’ হতে তৃণমূল সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যসভায় চার নতুন সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর এবং লোকসভায় এক অগপ সাংসদ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে তৃণমূলের এখন সাংসদ সংখ্যা ২৬। এর মধ্যে লোকসভাতেই রয়েছেন ২০ জন (নির্বাচনী জোটসঙ্গী এসইউসি-র এক জন ছাড়া)। ফলে সংসদে তৃণমূলের ‘অস্তিত্ব’ ক্রমশই ‘জোরালো’ হচ্ছে। যে সংখ্যাকে ‘রাজ্যের স্বার্থে’ কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ‘চাপ’ তৈরির জন্য ব্যবহার করতে চাইছেন মমতা।
সাংসদরা নিজের রাজ্যের জন্য লোকসভায় মুখ খুলবেন, এতে ‘অভিনবত্ব’ খুব কিছু নেই। কিন্তু গোটা বিষয়টিতে অন্য মাত্রা দিয়েছে রাজ্যের সাম্প্রতিক আর্থিক সঙ্কট এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে (যিনি ঘটনাচক্রে, এ রাজ্য থেকেই সাংসদ) মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বাক্যালাপ। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী বিনীত অথচ দৃঢ় ভাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, দীর্ঘ ৩৪ বছর পর সিপিএম-কে হারিয়ে রাজ্যে একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের (আসলে অর্থমন্ত্রীর) উচিত তাদের ‘নিরুৎসাহিত’ না-করে ‘উৎসাহিত’ করা। মমতা প্রণববাবুকে আরও জানিয়েছেন, বাংলাকে যে অবস্থায় বাম সরকার রেখে গিয়েছে, তাতে গোটা রাজ্যকে ঢেলে সাজতে হবে। নতুন সরকার কাজ করতে চায়। কিন্তু কাজ না-করতে পারলে ‘চুপচাপ বসে’ থাকতে চায় না। কেন্দ্রীয় অর্থ-সহায়তা না-পেলে তিনি সব কর্মসূচি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন!
তার পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে সংসদে দলীয় সাংসদদের ‘সরব’ হতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাকে শাসক শিবিরের একাংশের তরফে কেন্দ্রের উপর ‘চাপ’ তৈরি বলেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। দলের এক প্রথম সারির সাংসদের কথায়, “আমরা অধিবেশনে তো বলবই। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানাব।”
বস্তুত, তৃণমূল সাংসদরা ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠির খসড়া তৈরি করেছেন তৃণমূলেরই এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আপাতত তাতে দলীয় সাংসদদের সই নেওয়া চলছে। সাংসদের আসন্ন অধিবেশনে ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে সেটি প্রণববাবুকে দেওয়া হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে ‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে, জঙ্গলমহল ও দার্জিলিংয়ের মতো পিছিয়ে-পড়া এলাকার বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য, রাজ্যে শিল্পায়নের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য অন্তত দু’বছর রাজ্যের কেন্দ্রের তরফে আর্থিক অনুদান প্রয়োজন।’ চিঠিতে আরও বলা হচ্ছে, অন্তত ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে আর্থিক অনুদান আশা করে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালেই পরবর্তী লোকসভা ভোট হওয়ার কথা। চিঠির এই বক্তব্যে ‘বার্তা’ খুব স্পষ্ট আগামী লোকসভার ভোট পর্যন্ত কেন্দ্র যেন রাজ্য সরকারকে ‘দেখে’। তত দিন তৃণমূলও কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘দেখবে’।
প্রণববাবুকে লেখা সাংসদের চিঠিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে এই বলে যে, তিনি (প্রণববাবু) নিজে এ রাজ্যের বাসিন্দা তথা সাংসদ হওয়ায় বিষয়টি বুঝবেন এবং বিগত বাম সরকার ৩৪ বছর ধরে রাজ্যকে যে ভাবে দেউলিয়া করে গিয়েছে, সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবেন। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইতিমধ্যেই একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী নিজে এবং রাজ্যের অর্থমন্ত্রী তাঁর (প্রণববাবু) কাছে পুরো বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে যে ভাবে রাজ্যকে ‘কর’ বসিয়ে ‘রাজস্ব’ আদায়ের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তা উল্লেখ করে চিঠির প্রথম দিকেই বলা হচ্ছে যে, রাজ্য কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোনও ‘দান’ চাইছে না। বা রাজ্যকে ‘উদ্ধার’ করতেও বলছে না। রাজ্য চাইছে, বাম-আমলে দেউলিয়া অবস্থা থেকে বেরোতে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারেরও রাজ্যকে সাহায্য করা কর্তব্য।
সংসদের আগামী অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা আগামী ১ অগস্ট। একাধিক কারণে এই অধিবেশন ইউপিএ সরকারের কাছে ‘গুরুত্বপূর্ণ’। এই অধিবেশনেই আসার কথা জমি অধিগ্রহণ বিল, মহিলা সংরক্ষণ বিল, লোকপাল বিল। তা ছাড়া, টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে এখনও যৌথ সংসদীয় কমিটি এবং সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির তদন্ত চলছে। আসন্ন অধিবেশন নিয়ে আলোচনা করতে সব দলের সংসদীয় দলনেতাকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ করেছেন লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার। সাংসদ পদে এখনও ইস্তফা না-দেওয়ায় তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা মমতাই। তাঁর কাছেই স্পিকারের তরফে চিঠি এসেছে। (তৃণমূল সূত্রের খবর, সংসদের এই অধিবেশনে তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা পরিবর্তন না-করার কথাই ভাবছেন মমতা। তবে তিনি নিজে মনে করলে তা করতেও পারেন।) কিন্তু রাজ্যে ব্যস্ত থাকায় তিনি পাঠাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তারও আগে, আগামিকাল, মঙ্গলবার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল সমস্ত দলের মুখ্য সচেতকদের বৈঠক ডেকেছেন। ওই দিন সন্ধ্যায় আবার স্পিকার মীরা কুমার চা-পানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সদ্য মন্ত্রিত্বে যোগ-দেওয়া সুদীপবাবু এবং নতুন রেলমন্ত্রী হওয়া দীনেশ ত্রিবেদীকে (সব নতুন মন্ত্রীকেই স্পিকার ডাকছেন। ওই দিন সুদীপ-দীনেশের পালা)।
সংসদে যে বিলগুলি নিয়ে আলোচনা হবে, তার মধ্যে জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে মমতার নিজস্ব বক্তব্য রয়েছে। আবার মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে গত বছর রাজ্যসভায় যে তুলকালাম হয়েছিল, এ বার লোকসভায় তার পুনরাবৃত্তি চায় না কেন্দ্র। এরই সঙ্গে রয়েছে লোকপাল বিল। যা নিয়ে আপাতত দেশ জুড়ে তুমুল বিতর্ক। টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়েও ইউপিএ সরকার প্রবল বেকায়দায়। এই পরিস্থিতিতে বিল পাস করানো তো বটেই, ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র স্বার্থেও মমতাকে যথেষ্ট প্রয়োজন ইউপিএ-র।
ঠিক এই জায়গাটাতেই মমতাও তাঁর ‘প্রাপ্য’ বুঝে নিতে চান। তবে তা একান্ত ভাবেই রাজ্যের স্বার্থে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আমরা ইউপিএ সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন করে আসছি। তার বিনিময়ে তো আমরা কিছুই চাইছি না। সিপিএম-কে হারিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের স্বার্থেই আমরা আর্থিক অনুদান চাইছি। গোটা দেশে তিনটি রাজ্য এমন দেউলিয়া অবস্থার মধ্যে রয়েছে। বাকি দুই রাজ্য কেন্দ্রীয় সাহায্য চায়নি। আমরা চাইছি। তা হলে কেন আমরা প্রত্যাশিত সাহায্য পাব না? হাজার হোক, কেন্দ্রে তো আমাদেরই সরকার! ইউপিএ-১ সরকার তো বটেই, ইউপিএ-২ সরকারও একাধিকবার এ রাজ্যের বাম সরকারকে চাহিদামতো অনুদান দিয়েছে। তা হলে আমাদের সরকারকে কেন জনতার উপর কর বসিয়ে নিজেদের রাজস্ব নিজেদের তুলতে বলা হবে!”
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.