|
|
|
|
স্কুলভোটে মাঝপথেই রণে ভঙ্গ দিল বামেরা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যে স্কুলের পরিচালন সমিতির ক্ষমতায় ছিল বামেরা, রবিবার সেই গোবরডাঙার খাঁটুরা প্রীতিলতা শিক্ষা নিকেতন (বালিকা বিভাগ)-এর অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন চলাকালীন মাঝপথে রণে ভঙ্গ দিল তারা। তৃণমূলের ‘অত্যাচার’-এর প্রতিবাদেই তাঁরা সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি। সহজেই ভোটে জিতে যায় তৃণমূল নেতৃত্বাধীন জোট।
এ দিন সকাল ৯টায় ওই স্কুলে ভোট শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যালট-পেপারে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ায় দু’ঘণ্টা পরে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ভোটদাতার সংখ্যা ৫৫৪ জন। স্কুলের বাইরে বুথ করেছিল সিপিএম। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পরে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বামেরা। প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে গিয়ে সিপিএম নেতারা লিখিত ভাবে আবেদন করেন, তাঁরা এই স্কুল নির্বাচন থেকে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করছেন এবং ভোট থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। প্রিসাইডিং অফিসার কুতুবুদ্দিন মোল্লা ওই আবেদনপত্র গ্রহণ করেননি। এর পরে সিপিএম নেতারা তাঁদের প্রার্থীদের নিয়ে স্কুল ছেড়ে চলে যান।
সিপিএমের অভিযোগ, ভোট চলাকালীন তাদের বুথে ঢুকে তৃণমূলের লোকজন চেয়ার-টেবিল উল্টে ফেলে দেয়। দলীয় সমর্থক ভোটদাতাদের ভোটদানে বাধা দেয়। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কটূক্তি করে। এমনকী, ভুয়ো ভোটও দেয়। সিপিএমের গোবরডাঙা শহর লোকাল কমিটির সম্পাদক অশোক দাম বলেন, “সব কিছু জানিয়ে আমরা ওই আবেদন করি প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে। পুলিশকেও জানিয়েছিলাম। প্রিসাইডিং অফিসার আবেদনপত্র গ্রহণ করেনি। পুলিশও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। গোবরডাঙা শহর তৃণমূল সভাপতি সমীর নন্দী বলেন, “হার নিশ্চিত বুঝতে পেরেই এ ভাবে ভোট থেকে সরে দাঁড়াল বামেরা। এত দিন ওরা ভোট করতে দিত না। ছাপ্পা ভোট দিয়ে জিতছিল। এ বার পারল না।” প্রসঙ্গত, গোবরডাঙা পুরসভার ভোট এবং গাইঘাটা বিধানসভার ভোটে জেতার পরে এই স্কুল নির্বাচনেও জিততে মরিয়া ছিল তৃণমূল। এ জন্য জোরদার প্রচারও চালিয়েছিল তারা।
স্কুলভোটের প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, “এখানে কোনও ভাবে ভুয়ো ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। বামেরা যে পদ্ধতিতে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করতে চাইছিলেন তা করা যায় না। ওঁরা কয়েক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ পর্বে সামিলও হয়েছিলেন। সেই কারণে ওই আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।” উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানিয়েছেন, ভুয়ো ভোট পড়ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব পুলিশের নয়। ভোটকে কেন্দ্র করে শান্তিশৃঙ্খলা কোনও ভাবে বিঘ্নিত হয়নি।
এ দিন আরও কয়েকটি স্কুলেও অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। তার মধ্যে বাদুড়িয়ার কাদম্বিনীদেবী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে লড়াই হয় ত্রিমুখী। অর্থাৎ, কংগ্রেস, তৃণমূল এবং সিপিএম প্রার্থী দেয়। ৬টি আসনেই জিতে যায় তৃণমূল। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলটির পরিচালন সমিতি কংগ্রেসের হাতে ছিল। আবার, স্বরূপনগরের গোপালপুর বারঘরিয়া হাইস্কুলে কংগ্রেস সব ক’টি আসনেই জেতে। ভোট হয় হিঙ্গলগঞ্জের এ বি এস মদনমোহন বিদ্যালয়েও। বিজেপি ৩টি, তৃণমূল ২টি এবং সিপিএম ১টি আসন পায়। আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হাড়োয়ার পির গোরাচাঁদ হাইস্কুলের নির্বাচনে জিতে গিয়েছিল তৃণমূল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের সুন্ধিয়া সরলা মতিলাল হাইস্কুলেও এ দিন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক জন অভিভাবক এসে দেখেন স্কুলের গেটে তালা ঝুলছে। প্রধান শিক্ষক গহর চৌধুরী বলেন, “সব অভিভাবককে ভোটের নির্দিষ্ট দিন চিঠি দিয়ে জানানোর কথা। কিন্তু পত্রবাহক অনেকের ঠিকানা খুঁজে পাননি। তাঁদের ভোটের কথা জানানো যায়নি। সেই কারণে প্রশাসন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভোট স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছি। প্রার্থীদেরও সে কথা জানানো হয়েছে।” যদিও এর পিছনে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে সিপিএম। স্থানীয় সিপিএম নেতা সাত্তার মোল্লার অভিযোগ, “হার নিশ্চিত জেনে নির্বাচন ভেস্তে দেওয়ার জন্য তৃণমূল প্রধান শিক্ষককে প্রভাবিত করে স্কুল বন্ধ রাখে।” সিপিএমের অভিযোগ মানেননি তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গির খান চৌধুরী। |
|
|
|
|
|