একই ঘরে পাশাপাশি চলছে রান্না আর পঠনপাঠন |
বেহাল পরিকাঠামোয় ধুঁকছে বিদ্যালয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মথুরাপুর |
নিজস্ব বাড়ি নেই। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, শৌচাগার। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যায় শিক্ষক। এত সমস্যা সত্ত্বেও প্রায় দেড়শো পড়ুয়া নিয়ে দিনের পর দিন পঠনপাঠন চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ১ ব্লকের লালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব রানাঘাট বিজয়কলোনি হরেন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যাগুলি নিয়ে বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও সমস্যার সমাধান অধরাই থেকে গিয়েছে। |
|
স্কুলঘরের ভাঙা ছাদ। |
২০০৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সসদের অনুমোদন পায় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের কোনও নিজস্ব বাড়ি না থাকায় স্থানীয় একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের বাড়িতেই এই বিদ্যালয় চালু হয়। কিন্তু বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটির বিপজ্জনক অবস্থা। তা সত্ত্বেও সেখানেই চলছে স্কুল। পড়ুয়াদের মিড ডে মিল দেওয়ার জন্য যে রান্না হয় তারও কোনও আলাদা ঘর নেই। ফলে পড়াশোনা চলার মধ্যেই রান্নার কাজও চলে এক ঘরে। জ্বালানির ধোঁয়ায় নাকাল পড়ুয়াদের তার মধ্যেই পড়াশোনা করতে হয়। স্কুলের এতজন ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোনও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা নেই মিড ডে মিল রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় জলেরও। কারও জল পিপাসা পেলে তাকে আট-দশ মিনিট হেঁটে গ্রামের ভিতরে গিয়ে জল খেতে হয়। নলকূপ না থাকায় পুকুরের জলে রান্না করা হয় মিড ডে মিল, ছাত্রছাত্রীদের শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও। পানীয় জলের পাশপাশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুলে কোনও শৌচাগারেরও ব্যবস্থা নেই। এই সব সমস্যার কারণে বিদ্যালয়ে ১৫২ জন ছাত্রছাত্রী থাকলেও গড়ে রোজ স্কুলে হাজিরা দেয় মাত্র ৭০-৭৫ জন পড়ুয়া। এক জন মাত্র শিক্ষককেই সমস্ত পড়ুয়ার দিকে নজর দিতে হয়।
স্কুলের এমন বেহাল পরিকাঠামোর জন্য অনেকেই তাঁদের ছেলেমেয়েদের দূরে অন্য স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে ঘরে স্কুল চলে তার অবস্থা এতই খারাপ যে ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। বৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে জল পড়ে। বইপত্র ভিজে যায়। তার উপর চারপাশের দেওয়াল এতই জীর্ণ যে ঝড় উঠলে তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় আতঙ্কে থাকতে হয়। ছেলেমেয়েদ জল খাওয়ার ব্যবস্থায় নেই। নেই শৌচাগার। কাছাকাছি কোনও স্কুল না থাকায় বাধ্য হয়েই ওখানে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল মোল্লা, রফিক মোল্লারা জানান, স্কুলের বেহাল পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য কারও কোনও উদ্যোগ দেখা যায় না। |
|
ঘরের একপাশে পড়ে রান্নার জ্বালানি। |
বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক অখিলবন্ধু ঘোষ বলেন, “২০০৯ সালে স্কুলের জন্য ঘর ও শৌচালয় নির্মাণের জন্য সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়। কিন্তু স্কুল তৈরির জন্য গ্রামবাসীদের দান করা ৬ বিঘা জমির অর্ধেকটাই নীচু জমি হওয়ায় তা ভরাট করার প্রয়োজন। ভরাট করেই ঘর তৈরির কাজ করা যাবে।” কেন ওই টাকায় ভরাটের কাজ করা গেল না তার উত্তরে তিনি বলেন, “ওই জলাজমি ভরাট করে ভবন নির্মাণ করতে গেলে আরও টাকা লাগত। তাই কাজ শুরু করা যায়নি। বিষয়টি আমি স্কুল পরিদর্শককে জানিয়েছি।”মথুরাপুর-১ এর বিডিও শীতল পাল বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ ও শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সমস্যা যাতে দ্রুত মেটানো যায় তার ব্যবস্থা হচ্ছে।”
|
--নিজস্ব চিত্র। |
|