ভবিষ্যনিধি খাতের টাকা জমা না পড়ায় সেচ-নিগমে ক্ষোভ
০০৪ সালে প্রভিডেন্ট ফান্ড (ভবিষ্যনিধি) খাতে টাকা কাটা হয়েছিল। সাত বছরেও সেই টাকা জমা পড়েনি। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে সেচনিগমের কর্মীদের হাতে আসে এই তথ্য। তার পরেই কেটে নেওয়া টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত নেয় দফতর (যার অন্তর্গত এই নিগম)। কিন্তু ক্ষুব্ধ কর্মীদের একাংশ সেই টাকা ফেরত নিতে অস্বীকার করেছেন। পরিবর্তে তাঁরা এই ঘটনার তদন্ত দাবি করতে চলেছেন মন্ত্রীর কাছে।
কর্মীদের প্রধান দাবিগুলি হল, কার গাফিলতিতে টাকা কেটেও জমা দেওয়া হল না, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। ‘দোষী’ চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পড়ে থাকা ওই টাকা এত দিন কোন অ্যাকাউন্টে জমা ছিল, তা জানাতে হবে। কোন ব্যক্তি বা অফিসার সুদ ভোগ করেছেন, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। তার পরেই একমাত্র টাকা ফেরত নেওয়ার প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু ফেরত দিতে হবে বিগত সাত বছরের সুদ-সহই। ইতিমধ্যেই দফতরের আধিকারিকদের কাছে এই দাবি জানিয়েছেন কর্মীরা। দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের ম্যানেজার বিমল বাড়ুই বলেন, “কী কারণে কেটে নেওয়া টাকা জমা পড়েনি, তা আমার পক্ষে বলা কঠিন। তবে কিছু কর্মী সুদ-সহ টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সেই দাবির কথা জানিয়েছি।”
রোপা ১৯৯৮ প্রয়োগের পরে এই দফতরের কর্মীদের মাইনে বাড়ে। ২০০৪ সালে রোপা ’৯৮ প্রয়োগ হয়। তার ফলে এককালীন বাড়তি মাইনেও পান কর্মীরা। সেই বৃদ্ধি অনুযায়ী প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্যও টাকা কাটা হয়। কোনও কর্মীর ১৮৩৯ টাকা, কোনও কর্মীর ৩৬৩৭ টাকা, কারও বা ৩৪২৯ টাকা কাটা হয়েছিল। দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনে সে সময়ে ৩৮০ জন কর্মী ছিলেন। বর্তমানে অবশ্য অনেকেই অবসর নিয়েছেন। কেউ কেউ মারাও গিয়েছেন। রাজ্যের চারটি ডিভিশনে সব মিলিয়ে কর্মী সংখ্যা ১৩০০। সব কর্মীর প্রভিডেন্ট ফান্ড খাতে কেটে নেওয়া টাকার পরিমাণ কম নয়, প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। ২০০৪ সালে যে টাকা কাটা হয়েছিল, ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্যাঙ্কে থাকলে সুদ জমবে। কর্মীদেরই প্রাপ্য সেই সুদ। কাটা টাকা জমাই পড়েনি, সেটা জানতে পারা যায় রাজ্যে পালাবদলের পরে। বিগত সরকারের আমলে বড়সড় একটা কেলেঙ্কারিই ঘটেছে বলে অভিযোগ।
মেদিনীপুর ডিভিশনের কর্মী গোবর্ধন মাইতি বলেন, “আমার ১৭২০ টাকা কাটা হয়েছিল। পরে অফিসের নথি থেকে তা জানতে পেরেছি। এত দিন ওই টাকা নিয়ে কেউ কিছুই জানাননি। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা ভেবেছিলাম আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের অ্যাকাউন্টেই তা জমা রয়েছে। এখন দেখি তা নেই। এ নিয়ে চাপাচাপি করতে কেটে নেওয়া আসল টাকা ফিরিয়ে দিতে চাইছে দফতর। কিন্তু সেই টাকা ফেরত নিতে আমি অস্বীকার করেছি। কারণ আগে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তার পরে সুদ-সহ টাকা ফেরত দিতে হবে।” দফতরের আর এক কর্মী মনোরঞ্জন সামুই অবশ্য আসল টাকা ফেরত নিয়েছেন। তার পরেও কিন্তু তিনি সুদ দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “আসল নিয়েছি এটা ঠিক। কিন্তু সুদটাও তো আমাদের প্রাপ্য। তাই সুদ চেয়ে আবেদন জানিয়েছি।” এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের কাছে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘স্টেট গভনর্র্মেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন’। সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখার সম্পাদক সুব্রত সরকার বলেন, “এর পিছনে গভীর চক্রান্ত ছিল বলেই আমাদের ধারণা। একটা বড় পরিমাণ টাকার সুদ কেউ ব্যক্তিগত ভাবে ভোগ করছে বলে মনে হচ্ছে। রাজ্যে সরকারের পরিবর্তন না হলে হয়তো পুরো টাকাটাই নয়ছয় হয়ে যেত। দুষ্টচক্রের সঙ্গে কারা জড়িত, তার তদন্ত হোক, মন্ত্রীর কাছে এই দাবিই জানাব।” প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য কেটে নেওয়া অর্থ কর্মীদের অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে কী ভাবে এত দিন পড়ে থাকল তা কেউ ভেবে উঠতে পারছেন না। দফতরের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে কর্মীদের দাবির কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার।
Previous Story Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.