|
|
|
|
নিবিড় বিদ্যুদয়নের কাজ ঢিমেতালে |
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় ক্ষোভ |
আনন্দ মণ্ডল • কোলাঘাট |
২০০৭ সালের মধ্যেই কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া ১০ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। আর পাঁচটা সরকারি প্রকল্পের মতো সেই কাজ আটকে যায় মাঝপথেই। ২০০৮ সালে নতুন করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া (৩-১০ কিলোমিটার এলাকার) ৭০টি মৌজায় বিদ্যুদয়নের প্রকল্প নেয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গ্রামীণ বিদ্যুৎ দফতর। কিন্তু সেই কাজও অত্যন্ত ঢিমেতালে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত এক বছরে মাত্র ২৭টি মৌজায় সম্পূর্ণ বিদ্যুদয়ন হয়েছে। শ্লথগতিতে কাজ চলার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদেরই দোষারোপ করা হচ্ছে। ঠিকাদারদের আবার বক্তব্য, বিদ্যুৎ দফতর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহে গড়িমসি করায় দেরি হচ্ছে। ঢিমেতালে কাজ চলার অভিযোগ মেনে নিলেও আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রকল্প আধিকারিক কল্লোলকান্তি দাস। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক শেষ হয়নি যেখানে, সেখানে আগামী দু’মাসের মধ্যে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে এলাকাবাসীর।
প্রায় ১২ বছর আগে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজ্যের তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী শঙ্কর সেন। মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর উদ্যোগী হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম দফায় ৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা গ্রামগুলিতে বিদ্যুদয়নের কাজ শুরু হয়। ডব্লিউবিপিডিসিএলের অর্থসাহায্যে ওই কাজ করছিল গ্রামীণ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গা ছাড়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌঁছেও যায়। কিন্তু পরবর্তী কালে যথাক্রমে ৫, ৭ ও ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে থাকা গ্রামগুলিতে বিদ্যুদয়নের পরিকল্পনা থাকলেও, কাজ এগোয়নি। ইতিমধ্যে রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন যোজনার কাজ শুরু হয়। উঠে যায় গ্রামীণ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম দফতরটি। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী (৩-১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের) ৭০টি মৌজায় নিবিড় বিদ্যুদয়নের জন্য ২০০৮ সালে সর্বশেষ পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার প্রকল্প নেয় জেলার গ্রামীণ বিদ্যুৎ দফতর। দফতরের হিসাব অনুযায়ী, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোলাঘাট ব্লকের ৪০টি, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ২০টি, তমলুক ব্লকের ৬টি ও পাঁশকুড়া-১ ব্লকের ৪টি মৌজায় বিদ্যুদয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ঠিকাদারদের কাজের দায়িত্ব দিতে দিতে গড়িয়ে যায় এক বছর। এরও এক বছর পরে ২০১০ থেকে কাজ শুরু হয়। অত্যন্ত ঢিমেতালে কাজ চলায় গত এক বছরে মাত্র ২৭টি মৌজায় বিদ্যুদয়নের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে কোলাঘাটের ১৫টি, মাতঙ্গিনী ব্লকের ৯টি, পাঁশকুড়া-১ ব্লকের দু’টি ও তমলুক ব্লকের ১টি মৌজা রয়েছে। মোট ২৭৬৯ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দফতরের হিসাব অনুযায়ী, আরও ১৫টি মৌজায় বিদ্যুদয়নের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। বাকি ২৮টি মৌজায় বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হতে এখনও অনেক বাকি। পূর্ব পাঁশকুড়ার বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, “১৯৯৯ সালে বিধানসভায় আমার দাবি মেনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে বিদ্যুদয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী শঙ্কর সেন। ২০০৭ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও কাজ শেষ হয়নি।” শ্লথগতির জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের ঢিলেমিকেই দায়ী করেছেন শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিভাস কর। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে ঠিকাদারদের সংগঠনের তরফে অনিমেষ মিশ্র বলেন, “আমরা কাজের দায়িত্ব পেলেও বিদ্যুৎ দফতর থেকে সময়মতো যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়নি। কোথাও কোথাও আবার স্থানীয় সমস্যার জন্য কাজে বাধা আসছে।” জেলা গ্রামীণ বিদ্যুৎ দফতরের প্রকল্প আধিকারিক কল্লোলকান্তি দাস বলেন, “কাজের গতি কম হওয়ার কিছু পারিপার্শ্বিক কারণ রয়েছে। বিদ্যুদয়নের যন্ত্রাংশ সরবরাহ, শ্রমিক পাওয়া নিয়ে সমস্যা রয়েছে। গ্রামীণ কিছু সমস্যার কারণেও অনেক জায়গায় কাজ ব্যাহত হয়েছে। তবে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।” কল্লোলবাবুর এই আশ্বাসে অবশ্য এখনও পর্যন্ত বিশেষ ভরসা পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। না আঁচালে বিশ্বাস নেই, ঠেকে শিখেছেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|