টটেনহ্যামে নতুন ভোর আনার অপেক্ষায় ডাচ বেকহ্যাম
মুখটা খুব কাছ থেকে দেখলে, একটা কোণ থেকে অবিকল ডেভিড বেকহ্যাম। চিবুকের উপর হাতটা রেখে তাকিয়ে থাকলেও একেবারে ডেভিড বেকহ্যাম।
সাধে কী রাফায়েল ভ্যান ডার ভার্ট-কে ‘ডাচদের বেকহ্যাম’ বলে?
আসল বেকহ্যাম প্রিমিয়ার লিগে নেই। ডাচ বেকহ্যাম দিন-দিন আলো ছড়াচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ থেকে এসে। টটেনহ্যামকে জোড়া গোল করে ভোডাকম চ্যালেঞ্জ ট্রফিটা দেওয়ার পরে, টিম বাসের দিকে এগোনোর ফাঁকে এই বেকহ্যাম বললেন, “আসল লড়াই ইপিএলে। আমার মনে হয়, ম্যাঞ্চেস্টার আর চেলসি একটু এগিয়ে থাকবে। তার পরে লিভারপুল, আর্সেনাল।” পরে মৃদু হেসে, “আমাদেরও ধরে রাখতে পারেন! টটেনহ্যামও চ্যাম্পিয়ন হতে পারে।”
ম্যাঞ্চেস্টারের মতো ধারাবাহিকতা অন্য দলগুলো দেখাতে পারছে না কেন? বিশ্বকাপের মতো নিরাপত্তা অত কড়া নয় যে, ফুটবলারের পিছু পিছু হাঁটলে সাংবাদিককে ঘাড় ধরে কুকুরছানার মতো তুলে ধরবে নিরাপত্তারক্ষীরা। ফাঁকা পথে প্রশ্ন শুনে আনমনা গলায় ভ্যান ডার ভার্ট: “ম্যাঞ্চেস্টার বড় দল। বড় পরিবেশ। অনেক বেশি বড় প্লেয়ার ওখানে। অনেক দিন ধরে একটা টিম ধরে রাখতে পারে। ওই জন্যই ধারাবাহিকতা।”
গত জুলাইয়ে এই দেশ থেকে ফিরেছেন বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরে। এই জুলাইয়ে অন্তত একটা ট্রফি জিতে যাচ্ছেন। বিশ্বকাপ ফাইনালে আপনার পারলেন না কেন? প্রশ্ন করি এবং বেকহ্যাম স্টাইলে চিবুকে হাত বুলিয়ে ডাচ সুপারস্টার প্রথমে ম্লান হাসেন, “পেইনফুল কোয়েশ্চেন।” তার পরে যোগ করলেন, “বিশ্বকাপের ওই হারটা এখনও আমায় নাড়া দেয়। ভুলতে পারিনি। আর কবে সেই সুযোগ নেদারল্যান্ডসের কাছে আসবে, আমি জানি না। দারুণ সুযোগ হারিয়েছি আমরা।”
রাফায়েল ভ্যান ডার ভাট।
বিশ্বকাপের সময় এ দেশে ঘুরে যাওয়া যে কোনও বিদেশি ফিরে এলে প্রতিপদে নস্টালজিয়ার বাতাস তাড়া করবেই। এখানে সে বার এই হয়েছিল, ওখানে সে বার ওই। ভ্যান ডার ভার্টকে তো আরও স্মৃতি তাড়া করবে। ফাইনালটায় তাঁকে বহু পরে নামান ডাচ কোচ মারউইক। আর এ বার টটেনহ্যাম কোচ রেডন্যাপ তাঁকে বাড়তি দায়িত্ব দিলেন। এবং ভ্যান ডার ভার্ট লা জবাব।
জানতে চাই, রিয়াল মাদ্রিদে খেলে আসার পরে টটেনহ্যামে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে না? লা লিগা এবং ইপিএলের স্টাইলের ফারাকটা কোথায়? প্রথম দিকে টটেনহ্যামে এসে পুরনো ধ্যানধারণা দেখে ধাক্কা খেয়েছিলেন ভ্যান ডার ভার্ট। লন্ডনের এই প্রাচীন ক্লাবে প্রাচীন নিয়মের শিকড় থেকে গিয়েছে। ড্রেসিংরুমে কাঠের চেয়ার টেবিল। এখনও অ্যাকাডেমির জুনিয়র প্লেয়ারদের সিনিয়র দাদাদের বুট পরিষ্কার করে দিতে হয়। এখানে প্রশ্নটার উত্তর শুনে মনে হল, স্পার্সে এত দিনে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। “ইপিএলে লড়াই অনেক বেশি। লা লিগায় দুটো দলের মধ্যে লিগ জেতার লড়াই। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ। ইপিএলে কিন্তু অনেক বেশি লড়াই। তার পাঁচটা দল যখন-তখন যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে। কেউ বলতে পারে না, কী হবে।”
টটেনহ্যামে কেমন মানিয়ে নিয়েছেন নিজেকে, তা বোঝা গেল অরল্যান্ডো পাইরেটসের বিরুদ্ধে তাঁর ফ্রি-কিক গোলে। এখানে তিনটে ম্যাচে দুটো সেটপিসে গোল করলেন ডাচ বেকহ্যাম। রোনাল্ডো, মেসি, স্নেইডার, পির্লোর মতো ভ্যান ডার ভার্টের ফ্রি-কিক গোলে প্রসিদ্ধি। সেটা যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল। এখন সেই তাগিদটা ফিরছে, বলে দিলেন ভ্যান ডার ভার্ট। দেখাও তো গেল!
আসল বেকহ্যামের ব্র্যান্ডনেমে যেমন নতুন মাত্রা এনেছেন স্ত্রী ভিক্টোরিয়া, ডাচ বেকহ্যামের পরিচিতিতে নতুন মাত্রা দিয়েছেন তাঁর মডেল ও অভিনেত্রী স্ত্রী সিলভি। ভ্যান ডার ভার্ট নিজেই বললেন, “আমার স্ত্রী এত জনপ্রিয় যে, আমার দিকে কেউ ফিরে তাকায় না।” তাঁর জার্সি পরে এই দূর দক্ষিণ আফ্রিকার গ্যালারিতে কত লোক! গত এক বছরে স্ত্রীর ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে নাজেহাল ছিলেন ভ্যান ডার ভার্ট। এখন স্ত্রী অনেক ভাল। স্বামীর খেলাতেও সেই আগের লাবণ্যের ছাপ। টটেনহ্যামে তাঁকে দুটো পজিশনে দুই অর্ধে দেখলাম। প্রথমে পিটার ক্রাউচের পাশে ফরোয়ার্ডে। পরে লুকা মডরিচ, গারেথ বেলের সঙ্গে মাঝমাঠে। দুটো পজিশনেই দীপ্ত। বিশ্বকাপ না খেলেও ফাইনালে পরে নেমে নেতৃত্বের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। টটেনহ্যামে মনে হল এক বছরেই সত্যিকারের নেতা।
কোচ হ্যারি রেডন্যাপও কি তাঁর উপর বেশি নির্ভর করছেন? শুনলাম, রিয়াল মাদ্রিদ থেকে অনেক কম অর্থে ভ্যান ডার ভার্টকে নিয়ে টটেনহ্যাম চেয়ারম্যান ফোনে রেডন্যাপকে বলেছিলেন, “আপনার জন্য একটা দারুণ উপহার রয়েছে।” রেডন্যাপ ভেবেছিলেন, দারুণ উপহার মানে একটা গাড়ি। আসল গাড়ি নয়তিনি পেয়েছেন মানুষ ভ্যান। “ভ্যান ডার ভার্ট আমার দলের নেতা,” ট্রফি জিতে বলে দিলেন টটেনহ্যাম কোচ।
গ্যারি লিনেকার, যুরগেন ক্লিন্সমান, পল গাসকোয়েন, গ্লেন হডল, ক্রিস ওয়াডল, টেডি শেরিংহ্যামের আমলে রীতিমতো ডাকাডাকি করত টটেনহ্যামের প্রতীক মোরগ। তাঁরাও প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন টটেনহ্যামের। ভ্যান ডার ভার্ট যদি আবার ও রকম মোরগ ডাকার নতুন ভোর আনতে পারেন!
Previous Story Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.