সচিনের সঙ্গে ক্রিকেটজীবনের প্রান্তে এসে মিলছে দ্রাবিড়দর্শন
রূপকথার স্বপ্নভঙ্গ? না বাস্তবের জয়গান?
রবিবারের যে কোনও ব্রিটিশ দৈনিক খুললে উত্তরটা পেতে কুড়ি সেকেন্ডেরও বেশি লাগবে না। হোম অব ক্রিকেটে রূপকথার স্বপ্নভঙ্গ! মাইক ব্রিয়ারলি থেকে ভিক মার্কস। সকলের লেখায়, রাতের স্কাই টিভি কভারেজে ভিজিটার্স ড্রেসিংরুমের বাইরের বিখ্যাত বোর্ডে সচিন তেন্ডুলকরের নাম কেন উঠল না তা নিয়ে আলোচনা এবং আফসোস। কেউ কেউ বলছেন, গতকাল তেন্ডুলকর ব্যাট করতে নামার সময় লর্ডস জনতার যে স্বতঃস্ফূর্ত দাঁড়িয়ে উঠে অভিবাদন-দৃশ্য দেখা গিয়েছে, ওভালে ব্র্যাডম্যানের জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসের সঙ্গে তা নাকি তুলনীয়। অমিল সামান্যএখানে ব্যাটসম্যান উইকেটে যাওয়ার সময় ইংল্যান্ড অধিনায়ক দলের সকলকে জড়ো করে অঘোষিত গার্ড অব অনার দেননি।
“সচিন যে এই গোটা চাপ নিয়ে নেয় এটা আমার পক্ষে ভালই। আমি পিছন থেকে নজরবিহীন ভাবে নিজের কাজটা করে যেতে পারি,” ব্রিটিশ মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখে কাল রাত্তিরে রাহুল দ্রাবিড়ের কণ্ঠস্বরই কানে বাজছিল। এমন চাঁছাছোলা ভাবে মনে হয় না তাঁকে কেউ কখনও জিজ্ঞেস করেছে বলে যে সারা জীবন এই যে সচিনের ছায়া হয়ে থাকা, এই জীবন আপনার কেমন লাগে?
ভারত যে ম্যাচে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে খুব পরিষ্কার। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে কারও মেজাজ ভাল থাকার কথা নয়। কিন্তু দ্রাবিড় প্রথম ইনিংসের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে যেন বহু দিন পর ভাল ভাবে বেঁচে থাকার সঞ্জীবনী মন্ত্র পেয়েছেন। বাকি পৃথিবী কী বলল, কী লিখল, রিকি পন্টিংকেও ছাপিয়ে মোট টেস্ট রানে সর্বকালের দু’নম্বর হওয়ার দিনে যথেষ্ট গুরুত্ব দিল কি না-তে যাঁর কিছু আসে-যায় না। লর্ডস সেঞ্চুরিতে যেন দ্রাবিড় নিজের সঙ্গেই একটা যুদ্ধ জিতলেন। হ্যাঁ, আমি এখনও যোগ্য। যে রকম চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে লড়াই করে টিমকে ভাল জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ জিততে হয় সেটা আমার দ্বারা এখনও সম্ভব।
লর্ডসে সেঞ্চুরির হাসি।
নইলে এত খোলাখুলি বলতেন না, “গত চার-পাঁচ বছরের মধ্যে আমার এই দু’টো হান্ড্রেড-ই সেরা। জামাইকা আর লর্ডস। জামাইকার পিচ খারাপ ছিল। আর লর্ডসে সারা দিন বল সুইং করেছে।” টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বাধিক রানকারী হয়েও কোনও উচ্ছ্বাস নেই। দ্রাবিড়ের বরঞ্চ মনে হয় “ম্যাচ যে বেশি খেলবে তার তো বেশি রান আর রেকর্ড হবেই।” এটাও বোধহয় দ্রাবিড়ের পক্ষেই একমাত্র বলা সম্ভব।
স্বীকার করলেন মাঝখানে একটা সময় যখন নিজের মানোপযোগী ক্রিকেট খেলতে পারছিলেন না তখন নিজের মধ্যেই নানান আশঙ্কা আর অবিশ্বাসের দোলাচল ঘুরঘুর করছিল। মনে হচ্ছিল সত্যি কি আমার চলে যাওয়া উচিত? সত্যি কি নিজের খেলাটা আর ফেরত পাব না?
লর্ডস প্রথম ইনিংস সে দিক থেকে তাঁর কাছে যতটা না পনেরো বছর আগের মৃত স্বপ্নের পুনরুদ্ধার। তার চেয়ে বেশি ক্রিকেটজীবনের ব্যক্তিগত রোমান্টিসিজমের পুনরুদ্ধার। ক্ষত্রিয় ছিলাম আমি। আজও ক্ষত্রিয়ই আছি। সবাই জানল। তার চেয়েও জরুরি, আমি নিজে জানলাম! অনিবার্য প্রশ্নটা উঠল। এই মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা ইনিংসের পর আর কত দিন? কারও কারও মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ডে শুরু। এখানেই না ছেড়ে দেন। অধিনায়কত্ব তো এখানেই সিরিজ জিতে ছেড়ে দিয়েছিলেন।
দ্রাবিড় এই সময় একটা উত্তর দিলেন যা সাংবাদিক জমায়েতকে বেশ হকচকিয়ে দিল। বললেন, “আমি সচিনের থেকে এটা শিখেছি। বর্তমানে থাকতে জানা। অতীত নিয়ে না ভাবা। আবার ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন না হওয়া। যখন যেমন চলছে, সেই সময়কে তখন তেমন নেওয়া।” দ্রাবিড়দর্শন আর সচিনদর্শন যে নিজের নিজের ক্রিকেটজীবনের প্রান্তে এসে মিলবে এটা যেমন অভাবিত। তেমনই অভাবিত দ্বিতীয় ইনিংসে চরম অপছন্দের জায়গা ওপেনার হিসেবে গিয়ে লর্ডস জনতার ক্রমাগত চিৎকার, ‘দ্রাবিড়’, ‘দ্রাবিড়’।
পরিবর্তিত জীবনদর্শনের সঙ্গে জীবনও কি বদলাতে শুরু করল রাহুল দ্রাবিড়ের? লর্ডস পরিচিতি দিয়েও খানিকটা রেখে দিয়েছিল সেই পনেরো বছর আগে। আজ কি লর্ডসই বৃত্তটা মিলিয়ে দিল?
উত্তর চলতি সিরিজ শেষ হওয়ার আগে মনে হচ্ছে পাওয়া যাবে।
Previous Story Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.