অধিনায়কদের সংবর্ধনা ঘিরে লর্ডসে ক্ষোভ আর বিভ্রান্তি
দু’দেশের মধ্যে শততম টেস্ট ঘিরে ভারত-ইংল্যান্ড দু’দেশের অধিনায়কদের সংবর্ধনা দেওয়া হল লর্ডসে। গলফ কার্টে ঘোরানো হল গোটা মাঠ। কিন্তু সেই অর্থে উৎসব হয়ে ওঠার মতো কোনও মাত্রায় পৌঁছতে পারল না। বরং রেখে গেল একরাশ বিভ্রান্তি, ক্ষোভ আর বিরক্তি।
লাঞ্চের সময় ম্যাচটা যখন খুব উত্তেজক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে, ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে ৭২, সেই বিরতিতে প্রাক্তনদের নিয়ে যাওয়া হয় লর্ডস প্যাভিলিয়নে। রবিবাসরীয় লর্ডস দর্শক তখন খুবই মনোযোগী। অনুষ্ঠানটা আরও জমকালো হওয়ার সব রকম সুযোগ ছিল। হয়ে দাঁড়াল সাদামাঠা।
মাঠের মধ্যে একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসানো হল প্রাক্তনদের। এক দিকে ইংল্যান্ড। এক দিকে ভারত। ভারতের প্রতিনিধিত্ব খুবই জোলো। সুনীল গাওস্কর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রবি শাস্ত্রী এবং ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার। ছিলেন ডেভিড গাওয়ার আর মাইকেল ভন-ও। দু’দেশের ক্রিকেটারেরা কাঠের বেঞ্চিতে বসে গ্রুপ ছবি তুললেন। অনুষ্ঠানের এটাই বোধহয় সেরা স্মারক হয়ে রইল।
জোড়ায় জোড়ায় নাম ডাকা হল। প্যাভিলিয়ন থেকে একে একে বার হলেন। সৌরভকে ডাকা হল বব উইলিসের সঙ্গে। গাওস্কর অবশ্য দেশজ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে মাঠে ঢুকলেন। ইঞ্জিনিয়ার পরে বললেন, “খুব নস্ট্যালজিক লাগছিল। ১৯৭১-এ ঠিক এই গেটটা দিয়েই আমি আর সুনীল সেকেন্ড ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলাম। ওই ম্যাচটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। সে দিনই জন স্নো এসে রান নেওয়ার সময় সুনীলকে ওই বিশ্রী ধাক্কাটা মেরেছিল।”
লর্ডসে অধিনায়কদের সংবর্ধনা: কার্টে চড়ে মাঠে এলেন গাওস্কর। সঙ্গী বোথাম (পিছনে)।
জিওফ্রে বয়কট, টেড ডেক্সটার, কিথ ফ্লেচার, মাইক স্মিথ, আথারটন, নাসের হুসেন, ডোনাল্ড কার এবং ইয়ান বোথাম এঁদের ডাকা হল পর পর। বয়কট আর বোথাম এত দিন এক টিমে খেলেছেন। কেউ কারও দিকে দৃষ্টিপাত পর্যন্ত করলেন না। ধারাভাষ্য কখনও নিশ্চয়ই একসঙ্গে দিতে হয়। কিন্তু তার বাইরে এক বারও কথা বলতে দেখিনি। ওঁদের গণ্ডগোল শুরু একটা টেস্ট ম্যাচে বোথাম ইচ্ছাকৃত ভাবে বয়কটকে রান আউট করা থেকে। বয়কট এক দিক আঁকড়ে দলবিরোধী, স্বার্থকেন্দ্রিক খেলা খেলছেন বলে বোথাম ক্রিজে যাওয়া মাত্র তাঁকে রান আউট করে দেন। যখন তিনি ব্যাট করতে যাচ্ছেন ড্রেসিংরুমে গোটা টিম তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছিল, যেটা করতে যাচ্ছ সেটা যেন করে আসতে পারো। ৮০ বলে ২৬ রান আউট হয়ে যাওয়ার পর প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে যান বয়কট। আশ্চর্য তিনি আবার ছিলেন সেই টিমের অধিনায়ক!
১৯৭৮-এর ঘটনা। কিন্তু ২০১১-তেও তার জের চলছে। বয়কট ঢুকলেনও হাতে জলের বোতল নিয়ে। হাবেভাবে পরিষ্কার, এই যে এমসিসি সেন্টিনারি ক্যাপ দিয়ে সকলকে সম্মান জানানো হচ্ছে তার গাম্ভীর্য সম্পর্কে তিনি বিশেষ গদগদ নন। বয়কটের সতীর্থ প্রাক্তন এমসিসি প্রেসিডেন্ট ডেরেক আন্ডারউড অবশ্য ডেক্সটার জাতীয় প্রবীণদের মতোই সংবর্ধনায় খুশি। বললেন, “ভারত সফর বললেই আমার মনে পড়ে যায় পেটের অসুখ যে কোনও সময় হয়ে যাবে সেই ‘দিল্লি বেলি’ সম্পর্কে ভয়ঙ্কর ভীতি। আর ইডেন টেস্টের একটা দিন। যে দিন টনি গ্রেগ আর রজার টলচার্ড সারা দিন ক্রিজে কাটিয়েছিল।”
প্রশ্ন উঠল, আন্ডারউড তো কখনও ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করেননি। তিনি এখানে আমন্ত্রিত কেন? বয়কট তো বিবিসি টিভিতে বলেই দিলেন, “ডেভিড লয়েড গুমরোচ্ছে আমন্ত্রণ পায়নি বলে। তার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ওর ভারতের বিরুদ্ধে ডাবল হান্ড্রেড আছে।”
বয়কট, গুচদের সঙ্গে সৌরভ। রবিবার।
দিলীপ বেঙ্গসরকর আবার আশ্চর্য হয়ে গেলেন শুনে যে, ইঞ্জিনিয়ারকে সম্মানিত করা হয়েছে। বললেন, “তা হলে মোহিন্দর অমরনাথ বা দিলীপ দোশী কী দোষ করল? ফারুখ তো কখনও ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন হয়নি।” ১১৬ টেস্ট ম্যাচ খেলা বেঙ্গসরকর দেশের অধিনায়ক ছিলেন দু’বছর। ১৯৮৭-’৮৯-এর পাকিস্তান সফরের আগে পর্যন্ত। লর্ডসে তিনটে সেঞ্চুরি। প্রথম তিন দিন মাঠে বসে খেলাও দেখেছেন। কিন্তু তাঁকে কেউ আমন্ত্রণ জানায়নি। রবিবার উইম্বলডনে বাঙালি বন্ধুর ডাকা বার্বিকিউ ভোজ থেকে ফোনে বেঙ্গসরকর বললেন, “কোনও রাজনীতি আমায় বাদ দিল কি না জানি না। তবে গোটা ব্যাপারটা খুব আশ্চর্য লাগছে।” শোনা গেল মহম্মদ আজহারউদ্দিনও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। ভারতীয় বোর্ড কোনও উচ্চবাচ্য করেনি।
অনুষ্ঠানটা কী করে ক্যাপ্টেন কেন্দ্রীভূত না থেকে প্রাক্তন প্লেয়ারেও চলে গেল, কেউ বলতে পারলেন না। তবে সবচেয়ে বেশি হাততালি পেলেন সৌরভ। ভারতের পরেই বঙ্গসন্তানের সবচেয়ে ক্যাপ্টিভ অডিয়েন্স ইংল্যান্ডে। সকালে প্রেসবক্সের নীচে কফি খেতে যাওয়ার জন্য তাঁর দু’জন দেহরক্ষী লাগল। তাতেও সামলানো যাচ্ছিল না এমন আবেগের ঢেউ। সৌরভরা যে গলফ কার্টে গোটা মাঠ ঘুরলেন তাতে ছিলেন নাসের হুসেন এবং মাইক আথারটন। দর্শক ফেটে পড়ছে দেখে নাসের মজা করলেন, “আমার খেলার কত ফ্যান। লোকে আজও ভোলেনি।”
সমস্যা হল, এত তাৎপর্যপূর্ণ একটা অনুষ্ঠান। রাজনীতি এবং আশ্চর্য অপেশাদারিত্বে তার কোনও রেশ থাকল না। রাত গয়ি বাত গয়ি? না, বিরক্তিটা যে থাকল। বিভ্রান্তিও।

ছবি: গেটি ইমেজেস, এএফপি
Previous Story Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.