|
|
|
|
হাতির হানায় সোনামুখীতে ভাঙল বাড়ি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সোনামুখী |
বাড়ির বাইরের দেওয়ালে কালো ছাইয়ের আস্তরণ। দূষণ থেকে বাঁচতে সারা দিন ঘরের জানলা-দরজা বন্ধ করে রাখছেন বাসিন্দারা। জলের বিষে শুকিয়ে যাচ্ছে নালার পাশের ঘাস। দূষণের জেরে দুর্গাপুরে দিন দিন বাড়ছে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টের মত নানা অসুখ। কারখানার কালো ধোঁয়া ক্রমশ গ্রাস করছে শহরবাসীকে। কারখানার বর্জ্য মেশানো জল মিশছে দামোদরে। সেই জলই ফের শোধন করে পানীয় জল হিসাবে সরবরাহ হচ্ছে।
দুর্গাপুরের দূষণ রুখতে শিল্পাঞ্চলের সমস্ত কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। বৈঠকে থাকবেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারাও। ফের কারখানা কর্তৃপক্ষকে দূষণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হবে। তাতেও সমস্যা না মিটলে লাগাতার অভিযান হবে বলে জানান জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। তিনি বলেন, “দূষণের জন্য বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন দুর্গাপুরের নাগরিকেরা। এটা চলতে দেওয়া হবে না। দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।” |
|
রবিবার ভাঙা বাড়ির ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র। |
এক রাতে একটি হাতির তাণ্ডবে ১৪টি বাড়ি ভেঙেচুরে গেল বন দফতরের সোনামুখী রেঞ্জের অফিস লাগোয় তিনটি গ্রামে। শনিবার রাতে ইন্দকাটা, বাঁধগাবা ও রাজদহ গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। হাতিটিকে দ্রুত তাড়াবার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন গ্রামবাসীরা। একই সঙ্গে ওই রেঞ্জ অফিসে গিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এই হামলায় ইন্দকাটা গ্রামের ৭টি, বাঁধগাবায় ৫টি ও রাজদহের ২টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়। বাঁধগাবার বলাই মুর্মু বলেন, “তখন রাত ১০টা হবে। আমরা সবে ঘুমোতে যাচ্ছিলাম। একটি বিশাল চেহারার দাঁতাল দাঁত ও শুঁড় ঢুকিয়ে ভেঙে ফেলে বাড়ির দেওয়াল। কোনওরকমে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। পরে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিই। চিৎকার করে গ্রামবাসীদের জড়ো করার আগেই গ্রামের পাঁচটি বাড়ি ভেঙে ফেলে হাতিটি।”
ওই গ্রামের বাসিন্দা বাপি সোরেন বলেন, “আমার বাড়িতে ঢুকেও হামলা চালায় ওই দাঁতাল হাতিটি। ওর নজর এড়িয়ে সপরিবারে পালিয়ে গিয়ে কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছি।” গ্রামবাসী লক্ষ্মণ মুর্মুর ক্ষোভ, “বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি বস্তায় রাখা কয়েক ক্যুইন্ট্যাল চাল ও গম খেয়ে, ছড়িয়ে নষ্ট করেছে হাতিটি। প্রতিটি বাড়ির রান্নার জিনিসপত্র, আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। ফলে আমরা বেশ সমস্যায় পড়েছি।”
একই অবস্থা হয়েছে, রাজদহ এবং ইন্দকাটা গ্রামেও। রাজদহ গ্রামের বাসিন্দা তারাপদ লোহার বলেন, “অনেক কষ্টে মশাল জ্বালিয়ে পটকা ফাটিয়ে হাতিটিকে জঙ্গলে পাঠাই। তার আগে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে আমার ও সন্তোষ লোহারের ঘর। রবিবার সকাল পর্যন্ত বন দফতরের কাছ থেকে কোনও সাহায্য মেলেনি।”
ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সোনামুখী রেঞ্জের আধিকারিক সুধাময় রায়। তিনি বলেন, “খুবই বড় ঘটনা। তিনটি গ্রামে ১৪টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছে হাতিটি। আমি বনকর্মীদের হাতিটির দিকে বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্থদের নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” উল্লেখ্য, এই মাসেই এই একটি হাতির লাগাতার হামলায় নাজেহাল সোনামুখী রেঞ্জের গ্রামগুলি। তাই হাতিটিকে দ্রুত সরানোর জন্য বন দফতর কী ভূমিকা নেয় সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন বাসিন্দারা। |
|
|
|
|
|