|
|
|
|
কালো ধোঁয়ায় টেকা দায়, দূষণে অতিষ্ঠ দুর্গাপুরবাসী |
নিজস্ব সংবাদদাতা• দুর্গাপুর |
বাড়ির বাইরের দেওয়ালে কালো ছাইয়ের আস্তরণ। দূষণ থেকে বাঁচতে সারা দিন ঘরের জানলা-দরজা বন্ধ করে রাখছেন বাসিন্দারা। জলের বিষে শুকিয়ে যাচ্ছে নালার পাশের ঘাস। দূষণের জেরে দুর্গাপুরে দিন দিন বাড়ছে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টের মত নানা অসুখ। কারখানার কালো ধোঁয়া ক্রমশ গ্রাস করছে শহরবাসীকে। কারখানার বর্জ্য মেশানো জল মিশছে দামোদরে। সেই জলই ফের শোধন করে পানীয় জল হিসাবে সরবরাহ হচ্ছে।
দুর্গাপুরের দূষণ রুখতে শিল্পাঞ্চলের সমস্ত কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। বৈঠকে থাকবেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারাও। ফের কারখানা কর্তৃপক্ষকে দূষণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হবে। তাতেও সমস্যা না মিটলে লাগাতার অভিযান হবে বলে জানান জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। তিনি বলেন, “দূষণের জন্য বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন দুর্গাপুরের নাগরিকেরা। এটা চলতে দেওয়া হবে না। দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।” |
|
নিজস্ব চিত্র। |
দুর্গাপুরে দূষণ ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত সরকারি বা বেসরকারি সব ধরণের কারখানাই। শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। সদ্যোজাতদেরও দূষণের জেরে শ্বাসকষ্টের শিকার হতে হচ্ছে। সগরভাঙা, অঙ্গদপুর, রাতুরিয়া, ডিটিপিএস কলোনি থেকে অভিজাত সিটি সেন্টার, ননকোম্পানি কিংবা বিধাননগর এলাকা। দূষণ ছড়িয়েছে সর্বত্রই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনে দূষণের মাত্রা কম থাকলেও সন্ধ্যা নামলেই রাস্তা দিয়ে খালি চোখে হাঁটা বা মোটরবাইক চালিয়ে যাওয়া যায় না। চোখ জ্বালা করে। দিনের বেলা বেশির ভাগ কারখানাই দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে উৎপাদন খরচ বাঁচাতে সেই যন্ত্র খুলে দেওয়ার কারণেই সন্ধ্যা নামলেই দূষণ বাড়ে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বেসরকারি কারখানা মালিকদের একটি সংগঠনের কর্তা অশোক সরাফ বলেন, “কিছু কারখানা নিয়ম মানে না। তাদের বলা হবে নিয়ম মেনে কারখানা চালাতে।”
বেসরকারি স্পঞ্জ আয়রন, পিগ আয়রন, ফেরো ম্যাঙ্গানিজ কারখানাগুলি তো বটেই, সরকারি সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল) বা দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন (ডিটিপিএস) থেকেও দূষণে ছড়াচ্ছে বলে জানান বাসিন্দারা। সিটি সেন্টারের বাসিন্দা শ্যামল মণ্ডল বলেন, “ঘরের দরজা-জানালা রাতে বন্ধ থাকে। সকালে বারান্দায় পা দেওয়া যায় না। ছাইয়ের আস্তরণ জমে থাকে।” প্রসঙ্গত, সিটি সেন্টারের কাছেই ডিপিএল। কারখানা কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, দূষণ রোধে তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছেন। দুর্গাপুর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরিবেশ ইঞ্জিনিয়ার (এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার) সুদীপ ভট্টাচার্য জানান, মূলত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেই ‘ফ্লাই অ্যাশ’ বাতাসে ছড়ায়। শুধু বায়ু দূষণ নয়। দুর্গাপুরের জল দূষণও যথেষ্ট উদ্বেগের। শিল্প তালুক থেকে বর্জ্য জল গিয়ে পড়ে দামোদরে। সেই জলের প্রভাবে শুকিয়ে যায় নালার দু’পাশের ঘাস। সেই জলই শোধন করে শহরবাসীর কাছে যায় পানীয় জল হিসাবে। সেই পরিশোধিত জল খাওয়ার যোগ্য কি না তা নিয়ে কয়েক বছর আগেই প্রশ্ন তুলেছিল খড়গপুর আইআইটি-র একটি সমীক্ষক দল।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভিজিল্যান্স শাখা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কারখানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু তা যে যথেষ্ট নয়, দুর্গাপুর সাম্প্রতিক দূষণ তারই প্রমাণ। তবে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ছোট-বড় সব কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক হবে। জেলাশাসক জানান, কারখানা চালানোর ব্যপারে দূষণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী ও কারখানা কর্তৃপক্ষের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা হবে বৈঠকে। এর পরে পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হবে। প্রয়োজনে হবে ধারাবাহিক অভিযানও। কেবল বেসরকারি নয়, সরকারি কারখানাগুলিকেও বৈঠকে ডাকা হবে বলে জানান দুর্গাপুর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরিবেশ ইঞ্জিনিয়ার সুদীপবাবু । |
|
|
|
|
|