সম্পাদকীয় ২...
তৃণমূলের সমস্যা
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সি পি আই এম পরাজিত, রাজ্য কংগ্রেস আজ তাঁহার সহযোগী। কিন্তু আশঙ্কা হয়, এখন তাঁহার অনুগামীরাই তাঁহার প্রধান শিরঃপীড়া হইয়া না দাঁড়ায়। তেমন আশঙ্কার নানা কারণ ঘটিতেছে। যেমন শুক্রবার, কলিকাতা বিমানবন্দরে। তৃণমূল কংগ্রেসের অনুসারী কর্মী সংগঠন দীর্ঘক্ষণ বিমানবন্দরের দুই কর্তাকে ঘেরাও করিয়া রাখিল। দাবি সমর্থক-কর্মীদের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তি প্রভৃতি অভিযোগ প্রত্যাহার করিতে হইবে, কাজের নূতন সময়তালিকা প্রস্তুত করিতে হইবে। ইহার অন্তরালে অন্য এক উদ্দেশ্যও থাকা সম্ভব বিরোধী শিবিরের শ্রমিক সংগঠনের প্রতিপত্তি খর্ব করা। কিছু দিন ধরিয়াই দুই ইউনিয়নের টক্কর চলিতেছে, ঘেরাও কর্মসূচি তাহা হইতে বিচ্ছিন্ন নহে। দাবিদাওয়ার যৌক্তিকতা বা ইউনিয়নের রেষারেষির নৈতিকতার প্রশ্ন আপাতত থাকুক। মূল কথা: আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, বিশেষত ঘেরাওয়ের মতো ‘কৌশল’ অত্যন্ত আপত্তিকর এবং বিপজ্জনক।
এক কালে বামপন্থী কর্মী সংগঠন এই ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিয়া পশ্চিমবঙ্গকে বিনিয়োগকারীদের নিকট অচ্ছুত করিয়া দিয়াছিল, আজও এই রাজ্য তাহার কুফল ভোগ করিতেছে। এখন ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও যদি সেই পথের অনুগামী হয়, তবে ‘পরিবর্তন’ শব্দটি এক নির্মম ব্যঙ্গে পরিণত হইবে। বিমানবন্দরের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা স্থলে এমন কুনাট্য রচিয়া তৃণমূল সরকারের ভাবমূর্তিতেও প্রবল আঘাত করিল। মুখ্যমন্ত্রী ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ হইতে দলীয় কর্মীদের শৃঙ্খলা মানিয়া চলার যে নির্দেশ দিয়াছেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাহা অগ্রাহ্য করিল তৃণমূল অনুগামী শ্রমিক সংগঠন। প্রশ্ন, নির্দেশ অমান্য করিলে ব্যবস্থা নেওয়া হইবে বলিয়া মমতা মঞ্চ হইতে যে হুঁশিয়ারি দিয়াছিলেন, তাহা কি তিনি কাজে পরিণত করিতে পারিবেন? ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া স্টাফ ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর ওই বিশৃঙ্খল কর্মীরা কি শাস্তি পাইবেন?
প্রথম রাত্রে বিড়াল মারিবার একটি গল্প প্রচলিত রহিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রথম রাত্রির সুযোগ ইতিমধ্যেই হারাইয়াছেন। তাঁহার সরকার ক্ষমতায় আসিবার পর হইতে তাঁহার সমর্থকরা উচ্ছৃঙ্খলতার নানা নিদর্শন রাখিয়াছেন। এই বোধ ক্রমশই গভীর হইতেছে যে, মমতাদেবী নিজেকে দৃষ্টান্ত বলিয়া তুলিয়া ধরিতে চাহিলেও, তাঁহার কর্মীদের অন্তত একটি অংশের পছন্দের পথটি বরং বামপন্থী কর্মী-সংগঠনের হুজ্জতির সাবেকি পথ। তবে দলীয় সংগঠন মজবুত হইবার ফলে বাম সংগঠনগুলি ঘেরাও, ধর্মঘট প্রভৃতি কার্যক্রম দলের নির্দিষ্ট স্তরের নেতাদের নির্দেশ মানিয়াই করিত। সেই নির্দেশ ভুল হউক বা ঠিক হউক, তাহা ছিল দলীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু তৃণমূলের দলীয় সংগঠন সেই ধারার নহে। হইবার কথাও নহে। স্তালিনবাদী দলের অ-গণতান্ত্রিকতার বদলে সেই দলের কাঠামোয় এবং কার্যপদ্ধতিতে অনেকখানি মুক্তি থাকিবে, অবকাশ থাকিবে, ইহা প্রত্যাশিত এবং কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু মুক্ত পরিবেশ যদি বিশৃঙ্খলার রূপ ধারণ করে, দলের ছোট মাপের নেতারা যদি বড় মাপের নেতাদের বুড়ো আঙুল দেখাইয়া যথেচ্ছ ঘেরাও-অবরোধ-উচ্ছেদ করিতে থাকেন, তাহা দুর্ভাগ্যজনক। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের শৃঙ্খলার প্রতি মনোযোগী হউন। তাহাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃতার্থ হইবেন।
Previous Item Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.