সম্পাদক সমীপেষু...
ফল প্রকাশ করাই যেত
আমি নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পরীক্ষা সমূহের নিয়ামক। ৩ জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা হয়েছে, নেতাজির উপাচার্য জুন ২০১০-এর স্নাতক স্তরের (বি ডি পি) পরীক্ষার ফলপ্রকাশ না-হওয়ার জন্য আমাকে দোষী করেছেন। এটি ভুল। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ওই খবর ছাপার আগে আমার বা উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন না বা যাচাই করার কোনও চেষ্টা করলেন না।
আমি ২০০৭ সালে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা সমূহের নিয়ামক হিসাবে যোগ দিই। অনেক রকমের অসুবিধা সত্ত্বেও পরীক্ষা নেওয়া ও ফল প্রকাশ প্রায় ঠিক সময়েই হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান উপাচার্যের কার্যকালে, বিশেষ করে ২০১০-২০১১-য়, নেতাজিতে একেবারেই কাজের আবহাওয়া ছিল না। তাঁর সময়ে ছয় জন রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান। আমি ও ফিনান্স অফিসার স্থায়ী চাকরি থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। অনেক চুক্তিভিত্তিক কর্মীকেও ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জুন ২০০৯-এর ছাত্রছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন দেরিতে হওয়ায় জুন ২০০৯ এবং ডিসেম্বর ২০০৯-এর বি এ, বি এসসি, ও বি কম (বি ডি পি) পরীক্ষা এক সঙ্গে নেওয়া হয়। যদিও বেশির ভাগ ফল ২১-৬-২০১০-এ প্রকাশিত হয়। পরীক্ষার ফল উপাচার্য ধাপে ধাপে প্রকাশ করতে আদেশ করেন। ২০১০-এর শেষ অবধি অনেক সময় পরীক্ষার ফল উপাচার্যের অনুমতির অপেক্ষায় থাকার ফলে দেরিতে প্রকাশিত হয়। এম ফিল-এর ফল ৩০-৮-২০১০-এ সম্পূর্ণ করে উপাচার্যর অনুমতির জন্য পাঠাই। তিনি আড়াই মাস বাদে ১৬-১১-২০১০ প্রকাশ করেন।
জুন ২০১০-এর পরীক্ষা (বি ডি পি) অগস্ট ২০১০-এ শেষ হয় এবং পরীক্ষার খাতা দেখে প্রত্যেকের নম্বর এসে যায় পরীক্ষা দফতরে ফেব্রুয়ারি ২০১১-তে। ঠিক এই সময়ে উপাচার্য কম্পিউটার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, অ্যাসিস্ট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান ও পোর্টারদের সঙ্গে সংঘাতে যান। কারণ, তাঁরা ন্যূনতম বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং এই বিষয়টি মাননীয় আচার্য মহাশয় (রাজ্যপাল), তদানীন্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী এবং শ্রম দফতরকে জানিয়েছিলেন। ফলে, পুরো ফলপ্রকাশ বিলম্বিত হয়। এই সব অপারেটর এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান যিনি পরীক্ষা দফতরের সঙ্গে যুক্ত গত তিন-চার মাস কোনও বেতন পাচ্ছেন না। অথচ কাজ করে যাচ্ছেন। আমি তিন মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে এসেছি। উপাচার্য এই সময়ের মধ্যে বি ডি পি-র ফল প্রকাশ করতে পারতেন আমায় দোষারোপ না-করে।
যে অভিযোগের ভিত্তিতে আপনার চিঠি, সেই অভিযোগ প্রতিবেদকের নয়। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সেই অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে এ কথা ঠিক যে, এই প্রেক্ষিতে আপনার বক্তব্য ছাপা গেলে ভাল হত। কিন্তু চেষ্টা করেও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এ জন্য দুঃখিত।

আগে ছাত্রদের কথা ভাবা দরকার
সীমান্ত গুহঠাকুরতার প্রতিবেদন ‘ছাত্রদের বছরে ছ’টা পরীক্ষা, শিক্ষকদেরই বা নয় কেন’ (ক্রোড়পত্র পর্বান্তর ৩০-৬) পড়ে ক’টি অতিরিক্ত কথা বলার ইচ্ছা হল। শিক্ষা-সংক্রান্ত সমস্ত আলোচনা-সমালোচনাই ইদানীং এক অদ্ভুত সরলীকরণের শিকার। যার মূল উপজীব্য শিক্ষক এবং শিক্ষা সংক্রান্ত রাজনীতি। অন্তত বিগত দশকটিতে এ বিষয়ে যা যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সবই প্রধানত এই দিক দুটিকেই লক্ষ করে। অথচ এই চিৎকৃত আলোড়নে যে কথাটি বেমালুম হারিয়ে যাচ্ছে তা হল, শিক্ষাক্ষেত্রে যদি কোনও পরিবর্তন আনতে হয়, তবে তার অভিমুখ হওয়া উচিত শিক্ষক নয়, শিক্ষার্থী। নিন্দুক যে রটিয়েছিল পাখিটাকে কেউ দেখে না, এ কথা অতিশয় সত্য। বেজায় পণ্ডিত গবেষকরা আর ভীষণ ব্যস্ত (এবং বুদ্ধিমান রাজনীতিকরা) স্থির করে দিচ্ছেন পরীক্ষা বছরে ছ’টি হবে না, আটটি। স্কুল চারটে পর্যন্ত হবে না, সাড়ে চারটে পর্যন্ত। সেই স্কুলের বারান্দায় বাচ্চারা হাঁটবে না, হামাগুড়ি দেবে ইত্যাদি ইত্যাদি। বেচারা ছাত্রটিকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করে না। করলে নিশ্চয়ই সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলত, সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত একটা ঘরে আটকা পড়ে থাকতে তার ভাল্লাগে না। বিকেলে বাড়ি ফিরে সে আর খেলার সময় পায় না। বলত, বই রোগা হলেই পড়ার চাপ কমে না, কমে অভিভাবকদের হিংস্র উচ্চাশা কিঞ্চিৎ হ্রাস পেলে। বলত, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লেই পরীক্ষার ভয় কমে না, বাড়ে। নিশ্চয়ই সে এ-ও বলত যে, ছুটির সংখ্যা আশি থেকে কমিয়ে পঁয়ষট্টি করলে ‘শিখন দিবস’ বাড়ে বটে, কিন্তু সে বড্ড হাঁপিয়ে যায়।
স্থানীয় গবেষকদের তাই মনে করিয়ে দিতে ইচ্ছে জাগে, ‘ছাত্রস্বার্থে’ বিগত এক দশকে যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই আসলে শিক্ষকদের একটু ‘টাইট’ দেওয়ার স্বার্থে। কেন এত বেশি ছুটি পাবেন ওঁরা? কেনই বা এত কম সময় ‘অফিসে’ থাকবেন? এই চিরন্তন অভিযোগের প্রতিকার করতে গিয়ে খাঁড়া নামিয়ে আনা হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের উপর। কিন্তু মুশকিল হল, শিক্ষকরা অন্য সরকারি কর্মচারীদের মতো ‘ফাইল’ নিয়ে কাজ করেন না, তাঁদের কারবার জ্যান্ত মানুষদের নিয়ে, যে মানুষগুলোর বয়স আবার বড্ড কম। ‘শিখন দিবস’, ‘শিখন ঘণ্টা’, ‘পরীক্ষার সংখ্যা’ এ সব ক্রমাগত বাড়িয়ে চলার আগে ওদের কথাও একটু মনে রাখলে ভাল হয়।
সংযোজন
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর চিঠিতে (নজরুল, সম্পাদক সমীপেষু, ১৭/৭) কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের যে অনুবাদটির কথা বলছেন, সেই অনুবাদটি করেছিলেন মোহিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
Previous Item Editorial First Page


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.