|
|
|
|
সিএজি রিপোর্ট |
‘নির্মল গ্রাম’ প্রকল্পে শেষ সারিতে বিহার, মানছে সরকার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা |
‘নির্মল’ নয় বিহার!
বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তৈরির কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা গত পাঁচ বছরে রাজ্য সরকার খরচই করতে পারেনি। রাজ্য সরকার সিএজি-র এই অভিযোগ অস্বীকার করছে না। বরং জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী চন্দ্রমোহন রায় এই অভিযোগ স্বীকার তো করছেনই। তারই পাশাপাশি যে দেড় হাজার কোটি টাকা এতদিনে খরচ হয়েছে তা ঠিকঠাক খরচ হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং মন্ত্রী। মন্ত্রীর অভিযোগের আঙুল আবার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির (এনজিও) দিকে। প্রসঙ্গত, অনেক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মতো এই ‘নির্মল গ্রাম’ প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রেও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির ভূমিকাই প্রধান।
২০০৯-১০ আর্থিক বছরে, বিহার সরকারের কাজকর্ম নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের সিএজি রিপোর্টটি উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী সুশীল মোদী সম্প্রতি বিধানসভায় পেশ করেছেন। ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সাল অবধি রাজ্যের ‘নির্মল’ গ্রাম তৈরির কাজের অগ্রগতি সমীক্ষা করেছে সিএজি। ওই সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিহারে শৌচালয় তৈরির কাজকর্ম কার্যত বিফল হয়েছে। এমনকী, এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থ বরাদ্দ করেছিল, তার ২৫ শতাংশ অর্থই ব্যবহার না হওয়ার ফলে ফেরত গিয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, “কেন্দ্রীয় সরকার দেশ জুড়ে শৌচাগার তৈরিতে ১৯৯৯ সালে এই প্রকল্প চালু করেছিল। তার পর থেকে বিহারে লাগাতার এই প্রকল্পের কাজ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে করাই হয়নি।” এর ফলে, এখন দেশের মধ্যে ছ’জন ব্যক্তির কাছে যদি শৌচালয় না পৌঁছে থাকে, তার মধ্যে এক জন অবশ্যই বিহারের। এ ছাড়াও, শৌচালয় তৈরিতে বিহারই দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া রাজ্য। জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে এমনিতেই একটু কোণঠাসা রয়েছে নীতীশ সরকার। তার পরে এই রিপোর্ট যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে সরকারকে। সিএজি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে কেন্দ্রের কাছ থেকে শৌচালয় তৈরির জন্য ২০১০ সাল অবধি বিহার সরকার পেয়েছে মোট ১৯৬৭.১১ কোটি টাকা। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ অর্থই ফেরত গিয়েছে।
যদিও নীতীশ সরকারের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী চন্দ্রমোহন রায় সিএজি রিপোর্টকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। বরং তিনি তা স্বীকার করে নিয়ে বলছেন, “রিপোর্টে কিছু ভুল বলেনি। সত্যিই আমাদের এই কাজে বড়সড় গাফিলতি রয়েছে। আমরা সেই ত্রুটি শোধরানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।” চন্দ্রমোহনবাবুর দাবি, “এটা সত্যি যে, আমরা এই কাজে অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছি। তার অন্যতম কারণ, কাজের সদিচ্ছা না থাকা। সিএজি রিপোর্টে যে অর্থ ব্যবহার হয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে, তার
মধ্যেও অনেক অর্থ সঠিক ভাবে ব্যবহার হয়নি।” এর কারণ হিসেবে মন্ত্রী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির ‘দুর্নীতি’-কেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি ঠিকঠাক কাজ করেনি। অথচ, কেন্দ্রের নিয়মানুযায়ী, কাজ করাতে হবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যেই। তা ছাড়া, শৌচালয় তৈরির সচেতনতা বাড়াতে যতটা প্রচারের প্রয়োজন ছিল, সেটাও হয়নি।” মন্ত্রীর দাবি, ইতিমধ্যেই সরকার বিষয়টি শুধরে নিয়ে নতুন করে এই ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেছে। তাঁর দাবি, “নতুন করে আমরা কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নতুন একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। সেই অনুযায়ী, খুব শীঘ্রই আমরা কাজ শুরু করে দেব।”
একই সঙ্গে মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিপিএল পরিবারের পাশাপাশি যাতে এপিএল পরিবারেও শৌচালয় থাকে, তা-ও নিশ্চিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেই কারণে, কেন্দ্রের প্রকল্পের পাশাপাশি রাজ্য সরকারও ‘লোহিয়া স্বচ্ছ্বতা যোজনা’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|