|
|
|
|
আমরা নিধিরাম, বলছেন সদস্যই |
নোংরা কামরায় ইঁদুর-আরশোলা, কী করছে কমিটি |
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
নৈহাটির অমল ভট্টাচার্য সম্প্রতি কোলফিল্ড এক্সপ্রেসে চড়ে দুর্গাপুরে গিয়েছিলেন। দেখেন, বাথরুমের উপচানো জলে কামরা থইথই! দুর্গন্ধে টেকা দায়। ঘণ্টা তিনেকের যাত্রাপথের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা তিনি জীবনে ভুলবেন না।
সল্টলেকের চিত্রেয়ী লোধ ইস্পাত এক্সপ্রেসে গিয়েছিলেন খড়্গপুর। ট্রেনে উঠেই নজরে এসেছিল, বেশ ক’টা সিটের নীচে ডাঁই করা আবর্জনা! বাথরুমে ঢোকে, কার সাধ্যি!
বেসরকারি সংস্থার কর্মী দেবাশিস রায় সম্প্রতি কলকাতা থেকে পুরী বেড়াতে গিয়েছিলেন দুরন্ত এক্সপ্রেসে। বাতানুকূল কামরার জানলায় তেলচিটে পর্দার বহর দেখে ‘দুরন্ত’ সম্পর্কে তাঁর ধারণাই পাল্টে গিয়েছে!
শুধু ওঁরা নন। পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অজস্র ট্রেনের বহু যাত্রীকে এ সব মেনেই যাতায়াত করতে হয়। এমনকী, পচা খাবার খেয়ে অসুস্থতা কিংবা বাতানুকূল কামরায় ইঁদুর-আরশোলার উপদ্রবে নাকাল হওয়াটাও আশ্চর্য নয়।
অথচ ২০০৯-এ রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রী-পরিষেবা ও যাত্রী-সাচ্ছন্দ্যে জোর দেওয়া হবে। এ জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ২০০৯-এর জুলাইয়ে দু’টো কমিটি গড়েন তিনি। যাত্রী-পরিষেবা কমিটি ও যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য কমিটি। কোন কমিটি কী কী বিষয় দেখভাল করবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। কী রকম?
পরিষেবা কমিটির আওতায় যাত্রীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা, প্ল্যাটফর্মের টেলিফোন বুথ, স্টল ইত্যাদি। আবার ট্রেন-স্টেশনের পরিচ্ছন্নতা, অনুসন্ধানের ব্যবস্থা, প্ল্যাটফর্মে বসার জায়গা, সংরক্ষণ, যাত্রী নিরাপত্তা ইতাদি সাচ্ছন্দ্য কমিটির বিবেচ্য। পরিষেবা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ডেরেক ও ব্রায়েন (সম্প্রতি রাজ্যসভায় তৃণমূলের সদস্য হওয়ার সুবাদে ইস্তফা দিয়েছেন) এবং সাচ্ছন্দ্য কমিটির চেয়ারম্যান রয়েছেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। সম্প্রতি দু’টো কমিটিরই মেয়াদ আরও দু’বছরের জন্য নবীকরণ করেছে রেল। কমিটির সদস্যেরা রেলের তরফে মাসে মাসে ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা সাম্মানিক পান (দু’-এক জন অবশ্য তা নেন না)। বিনিময়ে যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধে সম্পর্কে রেলকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন ওঁরা।
কিন্তু পরিষেবা ও সাচ্ছন্দ্যের ব্যাপারে পরামর্শ পাওয়ার জন্য এত খরচ করলেও যাত্রীদের কাছে আদৌ তার সুফল পৌঁছচ্ছে কি? কর্দমাক্ত কামরা, তেলচিটে পর্দা, নোংরা শৌচাগার কিংবা ইঁদুর-আরশোলার দৌরাত্ম্যের প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন স্বভাবতই সামনে চলে আসছে। উপরন্তু দূরপাল্লার অধিকাংশ ট্রেনে প্যান্ট্রি নেই! ট্রেনের খাবারও মুখে তোলা যায় না বলে হামেশা অভিযোগ জানিয়ে থাকেন যাত্রীরা। এ সবের কিছুই কি চোখে পড়ে না কমিটির?
ডেরেকের দাবি: তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটি রেলের ১৩টি জোনের ৫০টি এলাকায় ঘুরে খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ও গুণমান খতিয়ে দেখেছে। ৫০টি স্টেশনে জনাহার (সস্তার খাবার) স্টল খোলা হয়েছে। তবে কামরায় ইঁদুর-আরশোলার উপদ্রব সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। অন্য দিকে শুভাপ্রসন্নবাবুর বক্তব্য, “আমরা মাসে এক বার বৈঠকে বসি। সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে রেলকে জানানো হয়। তবে তা কার্যকর করা-না করা রেলের সিদ্ধান্ত।” শুভাপ্রসন্নবাবুর অবশ্য দাবি, তাঁদের সুপারিশের ভিত্তিতে রেলের একটি পত্রিকা (রেলবন্ধুু) প্রকাশ ও প্ল্যাটফর্মে বয়স্ক যাত্রীদের জন্য বিশেষ গাড়ির ব্যবস্থা হয়েছে।
কিন্তু এতে সাধারণ যাত্রীদের নিত্য দুর্ভোগের কী সুরাহা হয়েছে, সে সংশয় থেকেই যায়। পাশাপাশি এ প্রশ্নও ওঠে, সম্প্রতি দুর্ঘটনাগ্রস্ত কালকা মেলের যাত্রীদের চরম দুর্দশার সময়ে কমিটির সদস্যদের পাশে পাওয়া যায়নি কেন?
শুভাপ্রসন্নবাবুর জবাব, “আমরা তো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নই! ওটা আমাদের কাজ নয়। বুঝতে ভুল করবেন না।” কিন্তু যেটা ওঁদের কাজ, সেটাই বা ঠিকঠাক হচ্ছে না কেন?
যাত্রী সাচ্ছন্দ্য কমিটির অন্যতম সদস্য পল্লব কীর্তনীয়ার স্পষ্ট আক্ষেপ, “কমিটি আসলে ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দার। আমরা অনেক কিছুই রেলকে বলেছি। কোনও লাভ হয়নি।”
তা হলে বছরে লাখ লাখ টাকা খরচ করে এই ধরনের কমিটি রাখার উপযোগিতা কী?
মন্তব্য করতে চাননি রেলের কর্তাব্যক্তিরা। |
|
|
|
|
|