|
|
|
|
সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিজেপিরই একাংশ |
ঋজু বসু • রাঁচি |
সরকারে তারাই রয়েছে, অথচ রাজনৈতিক অস্তিত্ব বাঁচাতে সেই দলের নেতারাই বার বার রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে চলেছেন। সরকারপক্ষের তাবড় নেতাদের বিক্ষোভ-আন্দোলন সামলাতেই রীতিমতো কাঠ-খড় পোড়াতে বাধ্য হচ্ছে ঝাড়খণ্ডের অর্জুন মুন্ডার নেতৃত্বাধীন সরকার। আগামী কাল, সোমবার জামশেদপুরে মুন্ডার দল বিজেপি-র পোড়খাওয়া নেতা সরযু রাইয়ের ঘোষিত আন্দোলনের জেরে তোলপাড় হতে পারে ইস্পাতনগরী। এবং এই আশঙ্কায় শঙ্কিত স্থানীয় প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে সরযু রাইয়ের দল বিজেপি-ও রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে।
ঠিক কী করতে চলেছেন, জামশেদপুর (পূর্ব) বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক সরযু রাই? রাজ্যের সরকারি জমি থেকে বেআইনি দখলদার-উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে আপত্তি তুলে কাল সকাল থেকে ইস্পাতনগরীতে, জেলার কালেক্টরের অফিসের সামনে আমরণ অনশনে বসতে চলেছেন বিজেপি কোর কমিটির সদস্য, এই প্রবীণ নেতা। গত তিন মাসে কোর্টের নির্দেশে এই উচ্ছেদ অভিযানে রাঁচি ও ধানবাদে পুলিশের গুলিতে মোট ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। কিছু দিন আগে উৎখাত হওয়া লোকজনের পুনর্বাসনে ‘অমানবিকতা’-র প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মরান্ডিও। রাজ্য বিজেপি-র মুন্ডা-বিরোধী শিবিরের লোক বলে চিহ্নিত সাংসদ যশোবন্ত সিনহাও কয়েক দিন আগে রাঁচি-লাগোয়া এইচইসি-র জমি থেকে দখলদারদের পক্ষে, সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু সরযু রাই এক কাঠি উপরে উঠে সরাসরি নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নেমে পড়ছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের তরফে অবশ্য তাঁর ‘মান-ভঞ্জনে’-র চেষ্টা চলছে। কিন্তু সরযুবাবুর বক্তব্য, “আমার সঙ্গে প্রশাসনের তরফে কেউ যোগাযোগ করেননি।” প্রশাসনের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ প্রবীণ বিজেপি নেতার? সরযুবাবু বলেন, “জামশেদপুরে টোল ব্রিজ থেকে মানগো বা কদমার দিকে রাস্তা চওড়া করার নামে অনেকে ঘরছাড়া হলেও তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। এমনকী, গরিবের ঝুপড়ি ভাঙা হলেও বাণিজ্যিক সংস্থার নির্মাণ কাজ অটুট। এ চলতে পারে না।” জামশেদপুরের জমির লিজ হোল্ডার ‘টাটা স্টিল’-এর দেওয়া পুর-পরিষেবার ক্ষেত্রেও খামতির অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি নেতা। তিনি বলেন, “২০০৫ সালে টাটা স্টিলের সঙ্গে চুক্তির নবীকরণ হলেও কিছু এলাকায় শর্ত মেনে পুর-পরিষেবা ঠিকঠাক মিলছে না। প্রশাসনকেই বিষয়টি দেখতে হবে।” এই সব অভিযোগের ভিত্তিতে সরযুবাবু অনশন শুরু করার হুমকি দিয়েছেন।
তাঁর বক্তব্য, “এই আন্দোলন স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় নেতাদের সায় থাকলেও এটা রাজ্য বিজেপি-র কর্মসূচি নয়।” সদ্য সমাপ্ত জামশেদপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সরযু রাই টিকিট না পেয়ে পার্টির উপরে ‘ক্ষুণ্ণ’ হয়েছিলেন বলে দলেরই একাংশের অভিযোগ। সরযু অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামীর আশা, “অনশনের জল বেশি দূর গড়াবে না। প্রশাসন জামশেদপুরে সক্রিয় হচ্ছে। বিষয়টি মিটমাট হয়ে যাবে।”
রাঁচিতে বিজেপি-র সহযোগী দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাও শীর্ষ বৈঠকে বসে পার্টিকে চাঙ্গা করতে প্রশাসনের ‘অকমর্ণ্যতা’-র বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা বলছে। আজই ধানবাদে সরকার-বিরোধী দল, বাবুলাল মরান্ডির ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানে শরিকি গোলমালে বিজেপি-জেএমএম-আজসুর জোট সরকার ভেঙে যাতে পারে বলে মরান্ডি জানিয়েছেন। |
|
|
|
|
|