ত্রিপুরায় ‘খাপ’ পঞ্চায়েত
দেশের আইনই হাতিয়ার, পিছু হটল মুরুব্বিরা
বার ‘খাপ’ পঞ্চায়েত। এ বার উত্তর-পূর্বে, খোদ বামশাসিত ত্রিপুরায়। তবে এ বার খাপ পঞ্চায়েতের তুঘলকি ফরমানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সংবিধানকেই হাতিয়ার করেছেন ‘অভিযুক্ত’ পরিবারটি। আর তাতেই পিছু হঠেছে জাতপাতের ধুয়ো তোলা গ্রামের মুরুব্বিরা।
ঘটনার শুরু ১৩ মে, ২০১১। ত্রিপুরার ধলাই জেলায় প্রচুর মণিপুরীর বাস। কমলপুরের বড়সুরমা গ্রামের মৈতৈ সম্প্রদায়ভুক্ত কুঞ্জধন সিংহের মেয়ে অঞ্জনার সঙ্গে রেজিস্ট্রি বিয়ে হয় কীতনা সম্প্রদায়ভুক্ত, খোয়াইয়ের বিক্রম দত্তগুপ্তের। কীতনা সম্প্রদায়ের মানুষরাও মণিপুরীই। রীতি অনুযায়ী অঞ্জনার বিবাহ অনুষ্ঠানে তথা ‘মাঙ্গানি চাকাওবা’-য় গ্রামের বিভিন্ন মানুষকে আমন্ত্রণ জানান অশীতিপর কুঞ্জধনবাবু। কিন্তু মৈতৈ সম্প্রদায়ের মুরুব্বিদের কথা মতো, কীতনা সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক চলে না। ফলে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রামের অধিকাংশ মৈতৈ ‘মুরুব্বি’ কুঞ্জধন সিনহার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার ‘তালিবানি’ ফতোয়া জারি করেন। অঞ্জনার বিবাহ অনুষ্ঠান বয়কটের জন্য গ্রামের সমস্ত মৈতৈ পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও অন্যান্য সম্প্রদায়ের নিমন্ত্রিতরা এসেছিলেন। কুঞ্জধনবাবুর পরিবারের ধোপা-নাপিতই বন্ধ করে দেন মুরুব্বিরা।
অঞ্জনার বড় ভাই, তরুণ কুমার সিংহও এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। পেশায় আইনজীবী তরুণবাবু তাঁর কর্মস্থলে ফিরে গিয়েই মৈতৈ সম্প্রদায়ের ১০ জন রক্ষণশীল ‘মুরুব্বি’, যাঁরা তাঁর পরিবারকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের আইনি চিঠি পাঠান। সামাজিক ও মানসিক ভাবে তাঁদের উপর অত্যাচার করার জন্য মোটা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পাশাপাশি, সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ করে কমলপুর থানায় গ্রামের মুরুব্বি মণিচন্দ্র সিংহ ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধেও একটি চিঠি পাঠান। দীর্ঘ দিনের প্রথাকে ভারতীয় আইনে চ্যালেঞ্জ জানানোয় সোরগোল পড়ে যায় গ্রামে। চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করলেও কমলপুর থানার ওসি বলেন, বড়সুরমা গ্রামে কুঞ্জধনবাবুর পরিবারকে সামাজিক বয়কট করার কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তিনি এখনও পাননি।
মণিপুরী সমাজে আট দশটা গ্রামের চার পাঁচশো পরিবারকে নিয়ে গড়া সর্বোচ্চ সামাজিক সংস্থা, ‘লেইপাক’-এর প্রভাব এখনও অপ্রতিহত। মূলত গ্রামের বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্রাহ্মণই ‘লেইপাক’-কে নিয়ন্ত্রণ করেন। এই সংস্থার আইনি বৈধতা থাক বা না থাক, এর সিদ্ধান্ত প্রজন্ম পরম্পরায় মেনে চলে মণিপুরী সমাজ। অন্তত তেমনই দাবি বড়সুরমার মৈতৈ পরিবারগুলির। কিন্তু লেইপাকের ‘সিদ্ধান্ত’ মৈতৈ সম্প্রদায়ের মধ্যেই শিক্ষিত কিছু ব্যক্তি বিনা বিতর্কে মেনে নিতে না পারাতেই সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক আলোড়নের।
মুম্বই থেকে তরুণবাবুর পাঠানো উকিলের চিঠি পাওয়ার পরে বড়সুরমা এবং আশপাশের গ্রামগুলির মুরুব্বিরা বৈঠকে বসেন। সম্প্রতি উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে ‘খাপ-পঞ্চায়েত’-এর কর্মকাণ্ডকে বেআইনি ঘোষণা করেছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। গ্রামের ‘মুরুব্বি’-দের সেই রায়ের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তরুণবাবু। তাতেই ‘নড়েচড়ে’ বসেন মৈতৈ মুরুব্বিরা। কুঞ্জধনবাবুর পরিবারের বিরুদ্ধে ফরমান জারি করা যে ঠিক হয়নি সেখানে তাঁরা তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তা প্রত্যাহারও করে নেওয়া হবে। বিনিময়ে মুরুব্বিরা চান, প্রত্যাহার করা হোক ওই আইনি চিঠি। মুরুব্বিদের বক্তব্য, আইনি নোটিস তুলে নিয়ে কুঞ্জধনবাবুদের মৈতৈ সম্প্রদায়ের রক্ষণশীলতাকে মর্যাদা দিতে হবে। মূল স্রোতের রাজনীতিকদের বাদ দিয়েই দু’পক্ষ মিটিয়ে নিয়েছে এই বিবাদ।
এত কাণ্ড ঘটে গেল, কী করছিলেন রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল? সিপিএমের রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিজন ধরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমি জানি না। যদি হয়ে থাকে তা হলে খুবই আপত্তিকর ঘটনা। সিপিএম এ ধরনের সামাজিক বয়কট, যে কারণেই হয়ে থাকুক, তা সমর্থন করে না।’’ আর ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র রতন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। খুবই লজ্জাজনক। কংগ্রেস দল এ ঘটনার প্রতিবাদ করবে। দলের কমলপুর শাখার সভাপতিকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব।’’
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.