|
|
|
|
|
কালকা-তদন্তে এখনও
সূত্রই হাতড়াচ্ছে মন্ত্রক
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
|
প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও কালকা মেলে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখনও ধন্দে রেল মন্ত্রক। ‘তদন্ত চলছে’, এই যুক্তিতে মুখ খুলতে চাইছেন না রেলের শীর্ষ কর্তারা। যদিও ঘটনা হল, ১০ জুলাই ঠিক কী কারণে মালওয়াঁ স্টেশনে কালকা মেল দুর্ঘটনাগ্রস্ত হল, তা এখনও হাতড়েই বেড়াচ্ছে মন্ত্রক।
লাইনে ফাটল, আচমকা সিগন্যাল বদলে যাওয়া, পয়েন্ট (যেখান থেকে লাইন বদল হয়) ঠিক ভাবে কাজ না করা এবং ইঞ্জিনে ত্রুটি মুখ্যত এই চারটি কারণের মধ্যে কোনও একটি বা একাধিক কারণের জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। নিশ্চিত ভাবে কিছু বলার অবস্থা এখনও আসেনি।
মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার প্রশান্ত কুমারের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের কাজ শেষ করেছে রেল মন্ত্রক। দুর্ঘটনার পরপরই লাইনে ফাটল বা চিড় থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বটে। তবে তদন্তে ৬৪এ পয়েন্টে যে ভাবে ফাঁক পাওয়া গিয়েছে, তাতে লাইনে চিড় থাকার সম্ভাবনা একেবারে বাতিল করছে না তদন্তকারী দল। মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, সাধারণত ছোট চিড় থাকলে তার উপর দিয়ে ইঞ্জিন-সহ প্রথম তিন-চারটি কামরা নির্বিঘ্নেই পার হয়ে যায়। কিন্তু পরে ওই চিড় ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে চতুর্থ বা পঞ্চম কামরা পার হওয়ার সময় ট্রেন বেলাইন হয়ে পড়ে। কালকার দুর্ঘটনাতেও সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চতুর্থ কামরাই।
কমিশনারের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে পাওয়া যাচ্ছে, পয়েন্টের যে অংশে লাইন বের হয় বা লাইন এসে মেশে, সেখানে একটি ফাঁক রয়েছে। কেন ফাঁক রয়েছে, তার সঙ্গে দুর্ঘটনার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। এ ছাড়া দেখা গিয়েছে, মালওয়াঁ স্টেশনের পয়েন্ট ‘লক’ হওয়ার আগেই সিগন্যাল সবুজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পয়েন্ট ‘লক’ না হওয়া পর্যন্ত সিগন্যাল লাল হয়ে থাকারই কথা। অতএব দুর্ঘটনার সময় সিগন্যালে এই ধরনের কোনও ত্রুটি ছিল কি না, তা-ও বিচার্য বিষয়। একটি সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছে, সে দিন কালকার চালক দূর থেকে দেখেছিলেন সিগন্যাল সবুজ রয়েছে। কিন্তু হঠাৎই তা লাল হয়ে যায়। তাই আচমকা ব্রেক কষতে হয় চালককে।
সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটে দিল্লিগামী শিয়ালদহ রাজধানীতে। বর্ধমান ও আসানসোলের মাঝে একটি জায়গায় সবুজ সিগন্যাল থাকায় নিশ্চিন্তে ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি ছোটাচ্ছিলেন চালক। সিগন্যাল থেকে ট্রেনটি যখন কয়েকশো মিটার দূরে, তখন তা হঠাৎই লাল হয়ে যায়। ফের কয়েক সেকেন্ড পরে তা সবুজ হয়। বিভ্রান্ত চালকের নার্ভাস ব্রেক ডাউনের মতো অবস্থা হয়। দায়িত্ব সামলাতে বাধ্য হন সহকারী চালক।
কালকার দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রথম থেকেই প্রশ্ন ওঠে, ওয়াপ-৭ ইঞ্জিনের ভূমিকা নিয়েও। একের পর এক ওয়াপ-৭ ইঞ্জিন যে ভাবে ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে, তাতে নড়েচড়ে বসেছে রেল মন্ত্রক। কালকার তদন্তের ক্ষেত্রে যেমন দেখা হচ্ছে, ইঞ্জিনের নীচের কোনও অংশ ভেঙে চাকায় জড়িয়ে গিয়ে আচমকা আপৎকালীন ব্রেক লেগে গিয়েছিল কি না। যদিও তদন্তকারীদের মধ্যেই আর একটি মত হল, আপৎকালীন ব্রেক আদৌ ব্যবহারই হয়নি ইঞ্জিনটিতে। ঘটনাস্থল থেকে ইঞ্জিনের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তার থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সূত্র মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে। মন্ত্রকের একটি অংশ চায়, বর্তমানে যে ক’টি ওয়াপ-৭ ইঞ্জিন চলছে সেগুলির বিশদ পরীক্ষা হোক। কিন্তু গোটা দেশে এখন ইঞ্জিনের যা অভাব, তাতে ওয়াপ-৭ ইঞ্জিনগুলিকে লোকো শেডে পরীক্ষার জন্য পাঠালে গোটা ট্রেন পরিচালন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও যাত্রীদের প্রাণের ঝুঁকিতে রেখে ওই ইঞ্জিনগুলি চালিয়ে যাওয়ারও বিরুদ্ধে মন্ত্রকের একটা বড় অংশ। ইঞ্জিনগুলি ফিরিয়ে নেওয়া হবে কি? রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল বলেন, “এখনও এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই রেল পদক্ষেপ করবে।”
আপাতত একাধিক সম্ভাবনাকে সামনে রেখে তদন্ত চলছে। মিত্তল বলছেন, “১৫-২০ দিনে রিপোর্ট মিলবে।” তবে বহু দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই তদন্ত রিপোর্ট ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রেলের বিরুদ্ধে। কালকা-রিপোর্টও আদৌ কবে আলো দেখবে, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। |
|
|
|
|
|