মৃতদেহ সেজে প্রাণে বেঁচে গেলেন ভারতীয় মহিলা
মাথায় একটাই চিন্তা, কী করে বাঁচা যায়? ইউটোয়া দ্বীপে তখন এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে অ্যান্ডার্স ব্রেহরিং ব্রেভিক। উপায়? বাঁচতে হলে একটাই পথ। স্রেফ মড়ার ভান করে পড়ে থাকো। প্রাবলিনও বেছে নিলেন সেই রাস্তাই। বরাত ও বুদ্ধির জোরে কোনও মতে প্রাণ নিয়ে ফিরলেন ইউটোয়া থেকে।
লেবার পার্টির যুবনেত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রাবলিন কৌর। দলীয় সম্মেলনে গিয়েছিলেন ইউটোয়া দ্বীপে। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতেই হঠাৎ গুলির আওয়াজ পান। ঘটনার ভয়াবহতা বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই সবার দেখাদেখি বাবা-মাকে মোবাইলে মেসেজ পাঠালেন। লিখলেন “আমি তোমাদের ভালবাসি”। মেয়ের কাছ থেকে এমন একটা মেসেজ পেয়ে মা থাকতে পারেননি। ফোন করলেন মেয়েকে। ফোনটা ধরে শুধুই কেঁদে ছিলেন তিনি।
শিবিরেরই এক সঙ্গীর মৃতদেহের উপর মড়ার মতো শুয়ে ছিলেন প্রাবলিন। তাতেও রক্ষে নেই। গুলি করতে করতে এক সময় আততায়ী চলে এল খুব কাছে। তাঁর কথায়, “একটা সময় মনে হয়েছিল আর বাঁচব না। সে এসে গিয়েছে। এ বার আমি মরতে চলেছি।” চার পাশ থেকে ভেসে আসছে আহতদের যন্ত্রণার আওয়াজ। কেউ কেউ আবার ঝাঁপ দিচ্ছেন জলে। প্রায় এক ঘণ্টা ও ভাবে শুয়ে থাকার পর হঠাৎই আসে সাহায্য। একটা ছোট্ট নৌকায় করে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন এক ব্যক্তি। তাঁর নৌকায় আবার তখন জল চুঁইয়ে ঢুকছে। ক্লান্ত শরীরেই হাত লাগান প্রাবলিন। বালতি করে জল বের করতে থাকেন দু’জনে মিলে। আর বহু চেষ্টায় কোনও মতে পৌঁছন তীরে।
নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে মায়ের সঙ্গে হাজির এই শিশুটিও। এএফপি
প্রাবলিনের মতো অনেকের কাছেই ইউটোয়া দ্বীপে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মনোরম দিনটা চিরকালের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে রয়ে গেল।
এই তাণ্ডবের প্রয়োজন ছিল বলে মনে করে ধৃত অ্যান্ডার্স ব্রেহরিং ব্রেভিক। অসলো বিস্ফোরণ ও ইউটোয়া হামলার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। ইউটোয়া দ্বীপে দ্বিতীয় এক আততায়ীর কথা বলেছিলেন অনেক প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু, এখনও দ্বিতীয় আততায়ীর সন্ধান পায়নি পুলিশ।
ব্রেভিকের আইনজীবী গেয়ার লিপেস্ট্যাড বলেছেন, তাঁর মক্কেল মনে করেন এই হত্যাকাণ্ড নারকীয়। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের প্রয়োজন ছিল। নরওয়ের আইনে এখন সর্বাধিক ২১ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে ব্রেভিকের। পরে অবশ্য এই কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।
লিপেস্ট্যাড জানিয়েছেন, সোমবার আদালতের শুনানিতে নিজের বক্তব্য জানাবেন ব্রেভিক। বিচার চলাকালীন তাঁকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হবে কি না তা নিয়েও শুনানির সময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বিচারক।
অসলোর অভিজাত এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে আজ তল্লাশি চালায় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাটে ব্রেভিকের মা থাকেন। তাঁর সঙ্গে অনেক আগেই বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে ব্রেভিকের বাবা জেনসের। জেনস জানিয়েছেন, ছেলের এই কাণ্ডে তিনি স্তম্ভিত। তবে ১৯৯৫ সালের পরে তাঁর সঙ্গে ছেলের কোনও যোগাযোগ ছিল না।
নরওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে সাহায্য করতে নরওয়েতে এসেছেন লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশের এক বিশেষজ্ঞ। ইন্টারপোলের সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে। নিজেদের একটি খামতির কথাও স্বীকার করে নিয়েছে নরওয়ে পুলিশ। পুলিশ প্রধান ভেইনুং স্পনহেইম বলেছেন, “ইউটোয়া দ্বীপে এক জন পুলিশ অফিসার মোতায়েন থাকার কথা। যে অফিসারের দ্বীপে থাকার কথা তিনি কোথায় ছিলেন তা আমরা এখনও জানি না।” হামলার খবর পাওয়ার ৪০ মিনিট পরে পুলিশ ইউটোয়ায় পৌঁছয়।
হামলা চালানোর আগে ‘শহিদ’ হতে যাওয়ার প্রস্তুতির কথা ইন্টারনেটে জানিয়েছিল ব্রেভিক। দেড় হাজার পাতার সেই লেখায় জড়াজড়ি হয়ে রয়েছে দিনলিপি, বোমা তৈরির প্রণালী আর রাজনীতির কথা।
এক সময়ে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল প্রগ্রেস পার্টির সদস্য ছিল অসলোর একটি পরিচিত স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ব্রেভিক। অভিবাসনের উপরে আরও কড়াকড়ি প্রয়োজন বলে মনে করে প্রগ্রেস পার্টি।
ব্রেভিকের লেখা থেকে মনে হয়, বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণে গড়ে ওঠা বহুত্ববাদে বিশ্বাস করত না সে। ইসলাম-বিরোধী রাজনীতিক জিয়ার্ট ওয়াইল্ডার্সের আদর্শে বিশ্বাস করত বলে জানিয়েছে সে। ওয়াইল্ডার্স জানিয়েছেন, ব্রেভিকের কাজকে তিনি একেবারেই সমর্থন করেন না।
ঘটনার ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি নরওয়ে। অসলো ক্যাথিড্রালে আজ এক স্মরণসভায় যোগ দেন নরওয়ের রাজা, রানি এবং প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টোলটেনবার্গ সহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা। যে কোনও জঙ্গি হামলার মতো এ ক্ষেত্রেও শোনা যাচ্ছে গোয়েন্দা-ব্যর্থতার কথা। অনেকের দাবি, ইসলামি জঙ্গিদের উপরে নজর রাখতে গিয়ে অন্য উগ্রপন্থীদের বিষয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছেন নরওয়ের গোয়েন্দারা।
Previous Story Bidesh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.