বিলেতের বৈঠকে অর্থনৈতিক
সম্পর্কে উন্নতিই লক্ষ্য প্রণবের
কুস্থল দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান। সমুদ্রের কোল ঘেঁষা এক অভিজাত হোটেল। মুখোমুখি দু’টি মানুষ।
“আপনার সামনে তো নেহাতই নাবালক আমি! আশির দশকে আমাদের ‘ফাদার ফিগার’ স্যার জিওফ্রে হাওয়ের সঙ্গে কি না আপনি কাজ করেছেন! তখন বোধ হয় আমি স্কুলের গণ্ডিও পেরোইনি!”
বক্তা ব্রিটিশ চ্যান্সেলর অফ এক্সচেকার তথা অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবোর্ন। গত বছর জি-২০ দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেটা ছিল তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ। আর প্রথম সাক্ষাতেই অসবোনের্র্র এমন সম্বোধনে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন প্রণববাবু।
তবে সে তো নেহাত সৌজন্য। ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ায় একটা ছোট্ট অনুঘটক। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিষয়টা এত সহজ নয়। বিশেষত দু’দেশই যখন একের পর এক সমস্যায় রীতিমতো জেরবার।
ব্রিটেনের আর্থিক মন্দা, ঘাড়ের ওপর প্রতিনিয়ত নিঃশ্বাস ফেলতে থাকা ইউরো জোনের সঙ্কট তো আছেই, তার উপরে রয়েছে ঘরোয়া রাজনীতির অস্থিরতা। নানা কারণে ভারতের ঘরোয়া রাজনীতিতেও অস্থিরতার আঁচ লেগেছে। তাতে অক্সিজেন যোগাচ্ছে পেট্রোপণ্য-সহ খাদ্যশস্যের মূল্যের অস্থিরতা।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই রবিবার লন্ডনে এসে পৌঁছলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ১১ ডাউনিং স্ট্রিটে জর্জ অসবোর্নের সঙ্গে আগামিকাল, সোমবার তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। তার পর প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা হবে।
কিন্তু কোন পথে হাঁটতে চাইছে সমস্যা জর্জর দুই দেশ?
কূটনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রণববাবুর এই লন্ডন সফরে যতটা অর্থনীতি আছে, কূটনীতিও ততটাই। আদতে আন্তর্জাতিক কূটনীতির মেরুদণ্ডই এখন অর্থনীতি। আর এই ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’র দৌত্যে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ভরসা করছেন প্রণববাবুর ওপরে। বিশেষত বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ-র ‘সীমাবদ্ধতার’ প্রেক্ষিতে।
দু’দেশের এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ৪৮ ঘণ্টা আগে ব্রিটেনের জন্য ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। এক, ভারতে ব্রিটিশ বহুজাতিক সংস্থা বি পি-র প্রত্যক্ষ লগ্নিতে ছাড়পত্র দিয়েছে। যা ভারতের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত বৃহত্তম বিদেশি লগ্নি হতে চলেছে। দুই, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সুপারিশ করেছে ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বে কমিটি। যার অর্থ, অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে আরও কিছুটা এগোলো ভারত।
প্রণববাবুর মূল লক্ষ্য, ভারতের স্বার্থপূরণে ব্রিটেন তথা আন্তর্জাতিক মহল থেকে আরও বেশি আদায় করে নেওয়া। যা দেশের ‘আম-আদমির’ সুরাহার জন্য সহায়ক হতে পারে। সে দিক থেকে নয়াদিল্লির এই মুহূর্তে অন্যতম লক্ষ্য হল, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের মূল্যের অস্থিরতা কাটানো। খাদ্যশস্যের দামে নিয়ন্ত্রণ আনাও জরুরি। তাই জি-২০ দেশগুলির মঞ্চকে ব্যবহার করতে চায় নয়াদিল্লি। পেট্রোপণ্যের দামে লাগাম দেওয়া বা ইউরোপের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা, সব ক্ষেত্রেই ব্রিটেনকে আরও বেশি করে পাশে চায় ভারত। তা ছাড়া, ছাত্রদের জন্য আরও ভিসা, দক্ষতা বাড়ানোর কর্মসূচিতে পারস্পরিক সহযোগিতার মতো বিষয়েও ব্রিটেনকে পাশে চায় ভারত।
কূটনৈতিক দৌত্যে এই সব বিষয়ে সাফল্য পেতে যথেষ্ট সক্রিয় দিল্লি। দ্বাদশ যোজনায় দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে এক লক্ষ কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে। তার ৫০ শতাংশই আসবে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ থেকে। বৈঠকে ব্রিটেনকে সেই সুযোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেবেন প্রণববাবু।
অর্থ মন্ত্রক ও কূটনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, ব্রিটেন চায় আর্থিক ক্ষেত্রে আরও বেশি সংস্কার করুক নয়াদিল্লি। গত বছর ভারত সফরে এসে অসবোর্ন বলেছিলেন, “ব্রিটিশ ব্যাঙ্কগুলি ভারতের ছোট ও মাঝারি শহরে তাদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। বিমা পরিষেবাতেও ব্রিটিশ সংস্থাগুলি তাদের লগ্নি বাড়াতে আগ্রহী।” নয়াদিল্লি যে সেই সংস্কারে লক্ষ্যে এগোচ্ছে, আগামিকালের বৈঠকে তা-ও জানাবেন প্রণববাবু।
সব মিলিয়ে আগামিকালের বৈঠক থেকে দু’পক্ষই নিজেদের লক্ষ্যপূরণ করতে চাইবে। আর তার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলেই আশা দু’দেশের। আর তা হলে অসবোনর্র্-প্রণব ব্যক্তিগত সখ্যও বাড়বে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম আলাপে যে জিওফ্রে হাওয়ের কথা বলেছিলেন অসবোর্ন, মধ্য লন্ডনের জেমস কোর্ট হোটেলে বসে তাঁর প্রসঙ্গ আজ টেনে আনলেন প্রণববাবু। বললেন, “আশির দশকে ফান্ড ব্যাঙ্কের বৈঠকের পরে উনি আমাকে একটি গ্যাজেট দিয়েছিলেন। ছোট একটি প্লাস্টিকের বাক্স। যাতে চাপ দিলেই ম্যাগনেটিক টেপে বেজে উঠত ‘শো মি দ্য মানি’। জিওফ্রে মজা করে বলেছিলেন, অন্য মন্ত্রীরা যখন বরাদ্দ চাইতে আসবে, আপনি এটা টিপে দেবেন।” এই বলে মুচকি হেসেই কপাল কুঁচকে ফেললেন প্রণববাবু। বললেন, “কিন্তু দু’দিন ধরে বাক্সটা টেবিলে দেখতে পাচ্ছি না। বেমালুম উধাও! খুঁজে দেখতে হবে। কেউ সরিয়ে রেখেছে কি না!
First Page Bidesh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.