|
|
|
|
প্রচার নেই, ফাঁকাই পড়ে ছাত্রীনিবাস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
সমস্যা রয়েছে বেশ কিছু। তার উপরে আবার প্রচারও নেই। তাই ফাঁকা পড়ে থাকছে দুর্গাপুরের আদিবাসী ছাত্রীনিবাসের আসন।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় এবং পুরসভার উদ্যোগে বছর ছয়েক আগে দুর্গাপুরের ননকোম্পানি এলাকায় তৈরি হয় ‘রাণী গুইদালো কেন্দ্রীয় আদিবাসী ছাত্রীনিবাস’। ৮৯ একর জমির উপরে এই ছাত্রীনিবাস তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা। আসন সংখ্যা ৬০টি। ২০০৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রীনিবাসের উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী উপেন কিস্কু। কিন্তু ২০০৬-এর জুনে ছাত্রীনিবাসটি চালু হওয়ার পর থেকে কোনও বারেই সব ক’টি আসন পূর্ণ হয় না। |
|
দুর্গাপুরের আদিবাসী ছাত্রীনিবাস। ছবি: বিকাশ মশান। |
বর্ধমান ছাড়াও বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী ছাত্রীরা দুর্গাপুরে পড়াশোনা করতে আসেন। সেভাবে প্রচার না হওয়ায় ছাত্রীদের অনেকেই এই নিবাসটির কথা জানেন না। এই ছাত্রীনিবাসের দেখাশোনা করে বর্ধমান অনগ্রসর দফতর কল্যাণ বিভাগ। এখানে আদিবাসী ছাত্রীরা ছাড়াও বর্তমানে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মেয়েরাও থাকার সুযোগ পান। প্রচারের অভাবে এই ছাত্রীনিবাসের কথা অনেকেই জানেন না তা স্বীকার করে সুপার জোৎস্না সিংহ জানান, “আমরা কলেজগুলিকে প্রতি বছর চিঠি দিয়ে ছাত্রীনিবাসের কথা জানাই। এর থেকে বেশি দফতর কী করবে?” জেলা ওয়েলফেয়ার অফিসার তন্ময়ী দত্ত বলেন, “আদিবাসী ছাত্রী সেভাবে পাওয়া যায় না। তাই অন্যরাও থাকে। প্রতি বারই কলেজগুলোকে জানানো হয়।” বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া থেকে আসা তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রূপা ধীবর, মৌমিতা দে, সোমা মুর্মুরা বলেন, “প্রথমে এই ছাত্রীনিবাসের কথা জানতাম না। মাস দু’য়েক বাড়ি থেকে যাতায়াত করার পরে জানতে পারি। দিদিরা এখানে আমাদের খুবই খেয়াল রাখেন। থাকার ব্যবস্থাও বেশ ভাল।” রূপা ধীবর জানান, এমন অনেকেই আছেন যাদের পক্ষে মেসে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু সকলে এই ছাত্রীনিবাসের কথা জানেন না। তবে, ছাত্রীনিবাসের কিছু সমস্যাও রয়েছে। সুপার জোৎস্না সিংহ জানান, “এখানে পানীয় জলের খুব সমস্যা রয়েছে। পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায় না। সাবমার্সিবল পাম্প বসানো ও ভবনটি বড় করা খুবই দরকার।” এখানকার দায়িত্বে থাকা মাধুরী চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের কাজের তুলনায় দায়িত্ব অনেক বেশি। বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। জেনারেটর দরকার।” তাঁদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।
বেহাল অবস্থা ছাত্রীনিবাসের মূল ভবনটিরও। বাইরের লোহার দরজায় মরচে ধরা। সামনের আলোকস্তম্ভ দু’টিও ভাঙা। ভবনের চার দিকে আলোর ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশই জ্বলে না। বাইরের দরজায় ও ভবনের সামনে লেখা ছাত্রীনিবাসের নামটাই উঠে গিয়েছে। ভিতরে ঝোপ জঙ্গল ও আগাছা। বেশির ভাগ জানালাই ভাঙা। এক অভিভাবক পাতালচন্দ্র টুডু বলেন, “ছাত্রীনিবাসের যা অবস্থা যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” এলাকার বাসিন্দা বিকাশ চট্টরাজ বলেন, “রাত্রে বিদ্যুৎ না থাকলে এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। দেখা মেলে না নিরাপত্তারক্ষীর।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ছাত্রীনিবাসের ব্যবস্থা আরও ভাল হওয়া দরকার। নিরাপত্তারক্ষী রামকৃষ্ণ মালিক বলেন, “আমি একা, যতটা সম্ভব নজর রাখি।” তিনি জানালেন তাঁর আবাসন থেকেই রাতে তিনি চার দিকে নজর রাখেন। সুপার জানান, “মাস তিনেক আগে সাফাই হয়েছিল। বর্ষার জন্য ফের আগাছায় ভরে উঠেছে প্রাঙ্গণ।” প্রোজেক্ট অফিসার ও জেলা ওয়েলফেয়ার অফিসার তন্ময়ী দত্ত বলেন, “চেষ্টা করছি প্রচারের ব্যবস্থা করার এবং ছাত্রীনিবাসের বাকি সমস্যাগুলি মেটানোর।” |
|
|
|
|
|