|
|
|
|
বৈধ অনুমতি ছাড়াই চলছে পুলকার, ‘নিরুপায়’ প্রশাসন |
সুশান্ত বণিক • আসানসোল |
স্কুলবাসের দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল দুর্গাপুরের ডিএভি মডেল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী করুণা সিংহের। ঘটনার পরেই পুলকারগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে আসানসোল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল পরিবহণ দফতর। বেশ কিছু গাড়ি আটকও করা হয় সে সময়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ঝুঁকি নিয়ে পুলকারগুলির বিপজ্জনক যাতায়াত চলছেই। ঠাসাঠাসি করে খুদে পড়ুয়াদের গাড়ির খোলে ভরে নেওয়া চলছে এখনও। করুণার মৃত্যুর পরে এক মাস হতে চলল। আজও হুঁশ ফেরেনি পুলকার-মালিকদের। এমনকী, আসানসোল মহকুমায় যে সমস্ত পুলকার চলে, সেগুলির একটিরও বৈধ অনুমতি নেই। পুলকারের গতিবিধি নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে এ রকমই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। পরিবহণ দফতরের বিনা অনুমতিতে দিনের পর দিন কী ভাবে পুলকারগুলি চলছে তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে মহকুমা প্রশাসন ও পরিবহণ দফতর। তবে, মহকুমা পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, আইনি জটিলতা ফাঁদে পড়েই এই অবস্থা আটকাতে পারছেন না তাঁরা।
কিন্তু এতে যেমন এক দিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হয় ছাত্রছাত্রীরা। তেমনই প্রতি বছর রাজ্য সরকার একটি মোটা অঙ্কের রাজস্ব লোকসান করছে। মহকুমা প্রশাসন ও পরিবহণ দফতরের আশ্বাস, কী ভাবে এই ব্যবস্থায় বৈধতা আনা যাবে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। |
|
ফাইল চিত্র। |
সম্প্রতি পুলকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় চালকেরা কোনও বৈধ অনুমতি পত্র দেখাতেই পারেননি। কেন এই অবস্থার পরিবর্তন আনা যাচ্ছে না, তার উত্তরে আসানসোল মহকুমার সহকারী পরিবহণ আধিকারিক সৌমেন দাস বলেন, ‘‘আইনি জটিলতায় আমরা অনুমতি দিতে পারছি না। তবে চেষ্টা করছি এই গেরো থেকে মুক্তি পাওয়ার।”
কী ভাবে হয়েছে এই আইনি জটিলতা? সৌমেন দাস জানিয়েছেন, আসানসোল মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ২০০৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। তাদের আবেদন ছিল, আসানসোলের বিভিন্ন রুটে যে সব যাত্রীবাহী বাস ও ঠিকা প্রথায় গাড়ি চলাচল করে, সেগুলিকে অনুমতি পত্র দেওয়ার ক্ষমতা মহকুমা বা জেলা পরিবহণ দফতরের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হোক। কলকাতা হাইকোর্ট মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে রায় দেয়। তাই পুলকারগুলিকেও কোনও অনুমতি দিতে পারছে না মহকুমা পরিবহণ দফতর। তবে, ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে পুলকারগুলিকে যাতে এই রায়ের আওতায় না আনা হয়, তার জন্য পরিবহণ দফতর আদালতের কাছে কোনও পৃথক আবেদন কেন করেনি, তা নিয়ে তাদের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। অন্য দিকে, কলকাতায় গিয়ে রাজ্য পরিবহণ দফতরের কাছ থেকে অনুমতি পত্র জোগাড়ের ‘ঝামেলা’ পোহাতে নারাজ পুলকার মালিকেরাও। ফলে আসানসোল মহকুমায় পুলকারগুলি আদতে অভিভাবকহীন। কোনও নজরদারি ছাড়াই চলছে তারা।
আসানসোল মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়ের অভিযোগ, “জেলা ও মহকুমা পরিবহণ দফতর নিজেদের ইচ্ছে মতো বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী যানবাহনের অনুমতি দিচ্ছিল। এতে বাস মালিক ও সাধারণ যাত্রীরা অসুবিধায় পড়ছিলেন। এর থেকে রেহাই পেতেই আমরা আদালতে গিয়েছিলাম।” তবে, সুদীপবাবুর দাবি, পুলকারের বিরুদ্ধে তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই। মহকুমা পরিবহণ দফতর চাইলেই পুলকারগুলিকে বৈধ অনুমতি পত্র দিতে পারে।
গাড়ি, মিনিবাস বা অটো হোক। ট্রেকার কিংবা রিকশা! পুলকার হিসাবে চলছে সবই। চলছে এমনকী, ভিন রাজ্যের গাড়িও। অবৈধ ভাবে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই চলছে এ সব।
এই আইনি জটিলতা ও অনুমতিহীন পুলকার চলাচল নিয়ে সবই জানেন আসানসোলের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত। তিনি বলেন, “আমিও এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি। আইনি জটিলতা কাটিয়ে কী ভাবে পুলকারগুলিকে অনুমতি পত্র দেওয়া যাবে তার ভাবনা চিন্তা করছি।” পড়ুয়াদের দুর্ভোগের অন্ত কবে, জানা নেই।
|
|
|
|
|
|