ত্রাণ নয়, জলবন্দি মানুষ চান বিদ্যাধরীর সংস্কার
য়েক দিনের লাগাতর ভারী বর্ষণ আর বেহাল নিকাশির মেলবন্ধনে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দদের অবস্থা শোচনীয়। জলবন্দি ওই সব পরিবারকে বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে বিভিন্ন স্কুলে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।
ফি বছর বৃষ্টি হলেই এখানকার মানুষের জলবন্দি হয়ে পড়াটা অবশ্য নতুন কোনও অভিজ্ঞতা নয়। কারণ বহুদিন আগে পুরসভার স্বীকৃতি জুটলেও অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকা বা অশোকনগরের গ্রামীণ এলাকার কোথাও আজ পর্যন্ত পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি (বলা ভাল গড়ে তোলার কোনও চেষ্টা করা হয়নি)। ফলে যা হওয়ার সেটাই ঘটে প্রতিবছর। বৃষ্টি হলেই প্রমাণ গুনতে শুরু করেন এলাকার মানুষ। অশোকনগরের নিকাশি ব্যবস্থার প্রধান সহায় বিদ্যাধরী খাল। পাশাপাশি পুর এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে নিকাসি নালা তৈরি হওয়ায় বর্ষার জমা জল ঠিকমতো বেরোতে পারে না।
ছবি: পার্থসারথি নন্দী
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জলবন্দির কারণে প্রায় ৫০০টি পরিবার ঘরছাড়া। বিভিন্ন স্কুল, ত্রাণ শিবির কিংবা আত্মীয়দের বাড়িতে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন। পুরসভার ১৩, ১৯, ২০, ২১, ২২ প্রভৃতি ওয়ার্ডে জল জমে রয়েছে। ওই সব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নবভারতী শিক্ষা নিকেতন, দেশবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠ, প্রভৃতি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। এমনই একটি পরিবারের বধূ আভা বিশ্বাস বললেন, “বুধবার রাতে ঘরে জল ঢুকে যাওয়ায় স্কুলে উটে আসতে বাধ্য হয়েছি। প্রতি বছর এই সমস্যায় পড়ে হয়রান হতে হয়। তবে এখানে চাল, ডাল, চিঁড়ে, গুড় পেয়েছি। কিন্তু এ সব না করে যদি প্রশাসন বিদ্যাধরী খাল সংস্কারের ব্যবস্থা করে তাহলে বছর বছর আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় না।” আর এক বাসিন্দা ভগবতী সরকার বলেন, “আমরা না হয় কোনওরকমে ঘরের মধ্যে ইট পেতে খাট উঁচু করে মাথা গুঁজে আছি। কিন্তু গরু, ছাগল তো আর খাটে তোলা যায় না। বাদ্য হয়ে ওদের জলের মধ্যে রেখে দিতে হয়েছে।” জল জমার খবর পেয়েই অশোকনগরের বিধায়ক তৃণমূলের ধীমান রায় এবং পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর দত্ত জলবন্দি এলাকায় পরিদর্শনে যান।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন। অথচ দিনের পর দিন বিদ্যাধরী খাল সংস্কারের জন্য তাঁরা দাবি জানালেও তাতে পুরসভা কর্ণপাত করেনি। অথচ প্রতিবার নির্বাচন এলেই কি সিপিএম, কি তৃণমূল সকলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে খাল সংস্কারের। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর পালন করেনি কেউ।
ছবি: সুদীপ ঘোষ।
পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, বনবনিয়া, বাঁশফুল, ভোরকুণ্ডার মতো নদিয়ার জেলার সীমানা লাগোয়া এলাকা দিয়ে ওদিকের জল এদিকে ঢুকত এবং বিদ্যাধরী খালে পড়ত। এখন তা বন্ধ। কারণ, জলাজমি ভরাট করে কলোনি তৈরি হওয়ায় জল বেরোনোর রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে জল নিকাশির কোনও উপায় নেই। তার উপর অতীতে নিকাশির জন্য অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি নালাগুলিও কোনও কাজে আসে না। সমীরবাবু বলেন, “বিভিন্ন স্কুল, ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত ২০০টি ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, বিদ্যাধরী খালের জল ধারণ ক্ষমতা না তাকার জন্যই এই অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার পরেই নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতিতে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে কাজ শুরু হবে। শুধু অশোকনগর-কল্যাণগড় এলাকাই নয়, অশোকনগর সংলগ্ন আমডাঙা-২ ব্লকের দত্তপুকুর ১ ও ২ নম্বর পঞ্চায়েতের বড়ুয়াপাড়া, কায়পুরত্রপাড়া, বিধানপল্লি, চালতাবেড়িয়া প্রভৃতি এলাকার হাডার দুয়েক বাড়ি জলমগ্ন। জলবন্দি মানুষ স্কুলবাড়ি, সিনেমা হল, তৃণমূলের কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। জলবন্দি এলাকায় ত্রাণের পাশাপাশি পানীয় জলের সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
খাল সংস্কারের ব্যাপারে বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, তিনটি পর্যায়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় কাল সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু গুমা, হাবরা, অশোকনগর এলাকায় এখনও ১০ কিলোমিটার এলাকায় সংস্কারের কাজ বাকি। ওই অংশে সংস্কারের কাজ না হওয়ার ব্যাপারে বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সুমন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গুমা এলাকায় যশোহর রোডের উপরে একটি সেতু রয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সেটি নতুন করে তৈরির করার কথা। সেতুটি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ওই ১০ কিলোমিটার অংশে খাল সংস্কার সম্ভব নয়।”
বারাসতের এসডিও প্রবাল মাইতি বলেন, “জলবন্দি মানুষদের ত্রাণে চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।” যদিও প্রতিবছর এমন জলবন্দির দশা থেকে মুক্তি পেতে বাসিন্দাদের একটাই দাবি, ত্রাণ নয়, প্রশাসন যেন বিদ্যাধরী খাল সংস্কারের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
First Page South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.