|
|
|
|
ঘুষ কাণ্ড |
অমরকে জেরা, অস্বস্তি বাড়ছে কংগ্রেসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা• নয়াদিল্লি |
ঘুষ কাণ্ডে আজ অমর সিংহকে তিন ঘণ্টা জেরা করল দিল্লি পুলিশ। আগামী সপ্তাহে তাঁকে ফের জেরা করা হতে পারে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় ধৃত সঞ্জীব সাক্সেনা ও সুহেল হিন্দুস্থানির সঙ্গে বসিয়েই তাঁকে জেরা করা হয়। এবং জেরায় অমর জানান, ২০০৮ সালে আস্থা ভোটের সময় কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। যদিও টাকার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না।
কলকাতার বড়বাজার এলাকার কংগ্রেস নেতা থেকে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে যাঁর নাটকীয় উত্তরণ, সেই ঠাকুর নেতা অমরের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, আস্থা ভোটের সময় তিন বিজেপি নেতাকে ঘুষ দিয়ে তাঁদের ভোট কিনতে চেয়েছিলেন তিনি। সঞ্জীব ও সুহেলের মাধ্যমে তিনি সেই কার্যকলাপ চালিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে সেই সময়ে যোগাযোগ ছিল বলে অমর যদি জেরায় বলেও থাকেন, তা হলেও ঘুষের অভিযোগ প্রমাণিত হয় না। কারণ, আস্থা ভোটে সমাজবাদী পার্টি যখন ইউপিএ-কে সমর্থন করেছিল, তখন প্রত্যাশিত যে দু’তরফের আলোচনার মাধ্যমেই তা হয়েছিল। তাই বলে কংগ্রেসের অস্বস্তি কমছে না। কারণ, দুর্নীতির প্রশ্নে সর্বভারতীয় রাজনীতি তোলপাড় হচ্ছে। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে ঘুষ কাণ্ড নিয়ে দিল্লি পুলিশ ফের নড়েচড়ে বসায় কংগ্রেসের অস্বস্তি তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। দলের আশঙ্কা, দুর্নীতি প্রশ্নে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে এই বিষয়টি অনুঘটকের কাজ করতে পারে। বিশেষ করে যখন এই প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে উঠছে যে, কার জন্য কাজ করেছিলেন অমর? এটা ঠিকই, বামরা সমর্থন প্রত্যাহার করার পরে আস্থা ভোটে ইউপিএ-এর জয়ের পিছনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল অমরের। কংগ্রেসকে সমর্থনের জন্য তিনিই রাজি করিয়েছিলেন সপা নেতা মুলায়ম সিংহকে। সব মিলিয়ে খুশি বিজেপি। কারণ, কর্নাটকে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রশ্নে কংগ্রেসের আক্রমণ এতে ভোঁতা হচ্ছে বলে তারা মনে করছে।
কংগ্রেস অবশ্য বিচারব্যবস্থার ‘অতি সক্রিয়তা’কে কেন্দ্র করে অসন্তুষ্টও। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, আস্থা ভোটে ঘুষ কাণ্ড নিয়ে সংসদীয় কমিটি অনেক আগেই তদন্ত-রিপোর্ট পেশ করেছে। কমিটির সুপারিশ মেনে পদক্ষেপও করা হয়েছে। এর পরেও আদালতের সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অবশ্য প্রকাশ্যে আজ বলেন, “বিষয়টি বিচারাধীন। এ ব্যাপারে কংগ্রেস কোনও মন্তব্য করবে না।” এ দিনও এই মামলার শুনানি হয়েছে দিল্লির আদালতে। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, হিন্দুস্থানিকে এই মামলার সাক্ষী আইপিএস অফিসার এস পি গুপ্তর সামনে বসিয়ে জেরা করা হয়েছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চের যুগ্ম কমিশনার নিজে সুহেল ও সঞ্জীবকে জেরা করেছেন। তাদের ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেপাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
এ দিন সকালে নিজের কালো মার্সিডিজে চাণক্যপুরীতে ক্রাইম ব্রাঞ্চের দফতরে আসেন অমর সিংহ। জেরার সময়ে ছিলেন দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার এল এন রাও-ও। পুলিশ কর্তাদের প্রাথমিক ধারণা, আস্থাভোটের সময়ে সমাজবাদী পার্টির নেতা রেবতী রমন সিংহের সঙ্গে সম্ভবত যোগাযোগ করেন সুহেল। তাঁর মাধ্যমেই সমাজবাদী নেতৃত্বকে জানানো হয়, তিন জন বিজেপি সাংসদের সমর্থন জোগাড় করা যেতে পারে। সম্ভবত কাল রেবতী রমনকে এবং বিজেপি সাংসদ অশোক আর্গলকে শীঘ্রই জেরা করবে পুলিশ। বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর প্রাক্তন সহযোগী সুধীন্দ্র কুলকার্নিকেও জেরা করা হতে পারে।
এ দিন থানা থেকে বেরিয়ে অমর কিন্তু একেবারেই নীরব ছিলেন। সাংবাদিকদের সামনে অনর্গল কথা, হিন্দি গানের কলি উদ্ধৃত করে রাজনৈতিক মন্তব্যএ সবের জন্যই পরিচিত অমর। সমাজবাদী পার্টি থেকে বছর দুয়েক আগে বহিষ্কৃত হওয়ার পর রাজনৈতিক ভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলেও থামেননি। সেই অমরের নীরবতা কি কৌশলগত? রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, তার সম্ভাবনাই বেশি। হয়তো এ ব্যাপারেও তিনি কংগ্রেস নেতাদের পরামর্শ নিয়েই চলছেন। কিন্তু তাতেও রক্ষা হবে কি? কেননা আস্থা ভোটে ঘুষ কাণ্ডে সঞ্জীব বা সুহেলরা কারও নির্দেশে
কাজ করেছেন মাত্র। আর সঞ্জীব তো ছিলেন অমরেরই কর্মচারী (যদিও এ দিন অমর জেরায় দাবি করেছেন, সেই সময় সঞ্জীব তাঁর কর্মচারী ছিলেন না।) তাই অমরের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্নটা ঝুলেই থাকছে। |
|
|
|
|
|