|
|
|
|
দরজা খুলতে পারে ওয়ালমার্টদের |
|
খুচরো ব্যবসাতেও এ বার
সম্ভাবনা বিদেশি লগ্নির
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
আর্থিক সংস্কারের পক্ষে গত কালই সওয়াল করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। আর তার চব্বিশ ঘণ্টা না-পেরোতেই বহু ব্র্যান্ডের রিটেল (খুচরো ব্যবসা) বহুজাতিকগুলির জন্য ভারতের বাজার খুলে দেওয়ার পক্ষে সুপারিশ করল কেন্দ্রীয় সচিবদের কমিটি। ফলে, কিছুটা হলেও উজ্জ্বল হল এ দেশের মাটিতে ওয়ালমার্টের শপিং মলে কেনাকাটার সম্ভাবনা।
পাইকারি ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি ব্যবসায় ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র আগেই দিয়েছে কেন্দ্র। ৫১ শতাংশ বিদেশি লগ্নির অনুমোদন রয়েছে এক ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসা (সিঙ্গল ব্র্যান্ড রিটেল)-তেও। কিন্তু এক ছাদের তলায় একাধিক ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় (মাল্টি ব্র্যান্ড রিটেল) প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনও কড়া বিধিনিষেধ রয়েছে ভারতে। শুক্রবার এই ব্যবসাতেও ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নি অনুমোদন করার বিষয়ে সুপারিশ করেছে ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সচিবদের কমিটি। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক বিষয়ক সচিব আর গোপালন জানান, “আজ সচিবদের বৈঠকে ‘মাল্টি ব্র্যান্ড রিটেলে’ প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিষয়টিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।”
এ কথা ঠিকই যে, আইনি ভাবে সচিব স্তরের এই সুপারিশ মানতে বাধ্য নয় কেন্দ্র। বিদেশি লগ্নির দরজা খুলতে প্রথমে ছাড়পত্র দিতে হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাকেই। তা ছাড়া, বরাবরের মতোই এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হবে সরকারের ভিতরে এবং বাইরে। এর তীব্র বিরোধিতা করবে বিজেপি ও বাম দলগুলি। কিন্তু এ সব কিছু সত্ত্বেও এর মাধ্যমে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খোলার পথে কেন্দ্র অন্তত এক পা এগোল বলেই মনে করা হচ্ছে। কালই বিমা, পেনশন, পণ্য পরিষেবা করের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলেছিলেন প্রণববাবু। আজ সচিব স্তরের এই সিদ্ধান্ত সেই সংস্কারের পথেই এক ধাপ অগ্রগতি।
সারা বিশ্বে খুচরো ব্যবসায় লগ্নির ক্ষেত্রে ভারত অন্যতম সম্ভাবনাময় বাজার। বহুজাতিকদের গন্তব্যও বটে। যেখানে ইউরোপ ও মার্কিন মুলুকে এখনও মন্দার ছায়া স্পষ্ট, সেখানে ইতিমধ্যেই ৮% বৃদ্ধির সড়কে ফিরে গিয়েছে এই দেশ। এর উপর, বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্তের এই লোভনীয় বাজারের মাত্র ৬% রয়েছে সংগঠিত খুচরো ব্যবসার দখলে। ফলে বাজার হিসেবে প্রায় সব রিটেল বা খুচরো ব্যবসায়ী বহুজাতিকের পছন্দের তালিকাতেই ভারত আছে একেবারে উপরের দিকে।
এবং এই কারণেই ইতিমধ্যে ভারতে পাইকারি ব্যবসায় পা রেখেছে জার্মান বহুজাতিক মেট্রো। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধের ফলে, ওই একই পথে হেঁটে পাইকারি ব্যবসায় এসেছে বিশ্বের বৃহত্তম রিটেল বহুজাতিক ওয়াল-মার্ট’ও। ভবিষ্যতে খুচরো ব্যবসায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা খোলা রাখতে সুনীল মিত্তলের ভারতী গোষ্ঠীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে তারা। একই কৌশলে এ দেশে পাইকারি ব্যবসায় লগ্নি করেছে ফরাসি রিটেল বহুজাতিক ক্যারফোর। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, ভারতে বাজার ধরার লক্ষ্যে প্রথমে পাইকারি ব্যবসার হাত ধরে নিজেদের ব্র্যান্ড-পরিচিতি বাড়িয়ে নিচ্ছে তারা। যাতে বিদেশি লগ্নি নীতি শিথিল হলে, ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এ দেশের বাজারে ঢুকে পড়া সহজ হয় তাদের পক্ষে। তাই এই সুপারিশ স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহিত করবে তাদের। উৎসাহিত দেশীয় শিল্পমহলও। এ দিন এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খুচরো ব্যবসায়ী সংস্থা ফিউচার গোষ্ঠীর কর্ণধার কিশোর বিয়ানি-সহ বিভিন্ন রিটেল সংস্থার কর্তারাও।
শিল্পমহল ও অর্থনীতিবিদদের একাংশের ধারণা, এই লগ্নির পথ খুলে গেলে আরও কম দামে বিভিন্ন পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন মধ্যবিত্তরা। কমবে মূল্যবৃদ্ধি। তৈরি হবে কাজের সুযোগও। আবার অন্য দিকে, বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, প্রথমে রিটেল বহুজাতিকগুলি কম দামে পণ্য বেচলেও, এক বার বাজারে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার পর তা বাড়াবে তারা। ন্যায্য মূল্য পাবেন না সরবরাহকারী কৃষকেরাও। মার খাবে পাড়ার ছোট দোকানগুলি।
ইউপিএ সরকার বিলক্ষণ জানে যে, বরাবরের মতোই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে সিপিএম। আবার এমনিতে সংস্কারপন্থী হলেও, ছোট দোকানের মালিক এবং ছোট ব্যবসায়ীরা বড় ভোট-ব্যাঙ্ক হওয়ায় বেঁকে বসবে বিজেপি-ও। যেমন ইতিমধ্যেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি। কিন্তু এ বিষয়ে অন্তত বিজেপি-র সম্মতি আদায় করতে সরকার মরিয়া হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিরোধীদের এই আপত্তির কথা মাথায় রেখেই এক গুচ্ছ শর্ত আরোপ করার কথা বলা হচ্ছে প্রাথমিক ভাবে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন ক্রেতা কিংবা কৃষকেরা। যেমন বলা হয়েছে, অন্তত ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বিদেশি সংস্থাগুলিকে। যার অন্তত অর্ধেক লগ্নি করতে হবে গবেষণা, সংরক্ষণ কেন্দ্র, হিমঘরের মতো ‘ব্যাক-এন্ড’ পরিষেবায়। আর অন্তত দশ লক্ষ লোকের বাস, এমন শহরেই খোলা যাবে বিপণি।
কিন্তু এই ‘রক্ষাকবচের প্রতিশ্রুতিতে’ও যে সহজে চিড়ে ভিজবে না, তা জানে মনমোহন সিংহের সরকারও। তবু এ দিনের সুপারিশের মাধ্যমে অন্তত প্রস্তাবের বল গড়িয়ে দিল তারা। |
|
|
|
|
|