|
|
|
|
পাকিস্তানের উপরে চাপ বাড়ালেন হিলারি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রত্যাশা মতোই ভারতে এসে সন্ত্রাস-প্রশ্নে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়ালেন। একই সঙ্গে রীতিমতো কঠোর ভাষায় ইসলামাবাদকে বার্তাও দিলেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণকে পাশে নিয়ে ভারতের সুরে সুর মিলিয়ে পাক ভূখণ্ডে ‘সন্ত্রাসের স্বর্গোদ্যান’ ধ্বংস করার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-সহ ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পরে হিলারি বলেন, “সন্ত্রাস ও হিংসাত্মক চরমপন্থার বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই, আমাদেরও লড়াই।” তাৎপযপূর্ণ ভাবে, আজ ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে অবিলম্বে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো ধ্বংস করার জন্য চাপ তৈরি করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে সন্ত্রাস-প্রশ্নে পাকিস্তানের উপরে চাপ আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিল ওয়াশিংটন। মাত্র ক’দিন আগেই সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট আমেরিকা ইসলামাবাদকে সামরিক খাতে ৮০ কোটি ডলার সাহায্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লাদেন-কাণ্ডের পর থেকে এমনিতেই দু’দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন বাড়ছিল। অর্থসাহায্য রদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। |
|
দশ জনপথে হিলারি ক্লিন্টনকে অভ্যর্থনা সনিয়া গাঁধীর। মঙ্গলবার রাজেশ কুমারের তোলা ছবি। |
হিলারির আজকের বক্তব্য পাক প্রশাসনের উপরে আরও চাপ বাড়াবে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। মার্কিন অর্থসাহায্য রদ হওয়ার পরে ক্ষিপ্ত পাক প্রশাসনের একাংশ পাল্টা চাপ বাড়াতে আফগানিস্তান সীমান্ত থেকে পাক সেনা প্রত্যাহারের কথা বলেছেন ঠিকই। কিন্তু পাকিস্তান নিজেও জানে, তাতে আমেরিকার চেয়েও বেশি বিপদে পড়বে তারাই। প্রকাশ্যে নানা রকম মার্কিন-বিরোধী কথা বললেও পাক রাজনীতিকরা বুঝতে পারছেন, সন্ত্রাস-প্রশ্নে ভারত, আমেরিকা-সহ কয়েকটি দেশের চাপের মুখে তারা অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে পাক রাজনীতিকদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভও রয়েছে। এক পাক কূটনীতিকের কথায়, “এত দিন আমেরিকা শাসন করেও ভালবেসেছে। এখন ওরা বেশি শাসন করছে, কম ভালবাসছে!”
বস্তুত পাকিস্তান সম্পর্কে এটাই এখন মার্কিন-নীতি। আমেরিকা জানে, তারা সাহায্য না করলে ভেঙে পড়বে পাক অর্থনীতি। সেটাকেই কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে নতজানু করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। আবার এটাও ঘটনা, পাক সাহায্য ছাড়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জেতা যে অসম্ভব, তা নিয়ে সংশয় নেই আমেরিকার। তাই নানা ভাবে, নরমে-গরমে চাপ রেখে পাকিস্তানকে নিজেদের শর্তে চালাতে চায় ওয়াশিংটন। হিলারির আজকের বার্তায় সেই মনোভাবই স্পষ্ট।
অনেকেই মনে করছেন, গোটা বিষয়টি ভারতের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক। কেন না মুম্বই বিস্ফোরণ নিয়ে এমনিতেই যথেষ্ট চাপে মনমোহন-সরকার। বিজেপি-সহ বিরোধীদের আঙুল নিরাপত্তা-ব্যবস্থার দিকে। মনমোহনের পাক-নীতিরও সমালোচনা করছে বিরোধীরা। সংসদের আসন্ন অধিবেশনেও এ নিয়ে সরব হবে বিরোধী বেঞ্চ। এই পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তানের উদ্দেশে হিলারির কড়া বার্তা নিশ্চিত ভাবেই সরকারকে বাড়তি অক্সিজেন দেবে। সন্ত্রাস মোকাবিলা প্রশ্নে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রটি বিস্তৃত করার কথাও আজ জানিয়েছেন মার্কিন নেতৃত্ব।
দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ভারতীয় অবস্থানের প্রতিফলনই আজ যৌথ বিবৃতিতেও দেখা গিয়েছে। ইসলামাবাদ ও কাবুলকে একই বন্ধনীতে রেখে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তান জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়। সেটি যে কোনও ভাবে বন্ধ করতে হবে। যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করে সব জঙ্গি পরিকাঠামো নিষ্ক্রিয় করার প্রশ্নে দু’দেশ একমত হয়েছে’। এখানেই না থেমে ২০০৮-এর মুম্বই হামলায় দোষীদের শাস্তির প্রসঙ্গেও আজ মার্কিন সমর্থন আদায় করে নিয়েছে দিল্লি। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘২০০৮-এর নভেম্বরে মুম্বই হামলায় যারা দোষী, তাদের অবিলম্বে কঠোর শাস্তি দিক পাকিস্তান’।
পরে সাংবাদিক বৈঠকে হিলারি বলেন, “আমরা বারবার ইসলামাবাদকে বলেছি, ২৬/১১-কাণ্ডে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হোক।” পাক মুলুকে ওসামা বিন লাদেনের আত্মগোপন এবং মার্কিন হামলায় তাঁর মৃত্যু নিয়েও আজ মুখ খোলেন হিলারি। তাঁর কথায়, “একটি বিষয় সবার বোঝার দরকার আছে। কোনও জঙ্গি কোথাও নিরাপদ আশ্রয় পাবে, এটা আমরা সহ্য করব না। কোনও সরকার এদের আশ্রয় দেবে, এটা মানা যায় না।” কৃষ্ণ বলেন, ‘‘নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য এবং গোটা এলাকার নিরাপত্তার জন্যই পাকিস্তানের উচিত সে দেশের সন্ত্রাস পরিকাঠামো ধ্বংস করা।” সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতাকে মুখের কথায় সীমাবদ্ধ না রেখে দু’দেশই আজ সন্ত্রাস দমনে পারস্পরিক গোয়েন্দা তথ্যের আদানপ্রদান বাড়ানো-সহ একাধিক পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করেছে। হিলারির কথায়, “আমাদের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল ক্ল্যাপার আমার সঙ্গে এখানে রয়েছেন। এ থেকেই বোঝা যায় বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে আমরা দেখছি।” |
|
|
|
|
|